প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কিংবা টেস্ট, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিষেকেও ছিল অনিশ্চয়তা
আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পথ চলা শুরু হয় ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ড সিরিজ দিয়ে। লর্ডসে অভিষেকেই শতরান। তার পরের ম্যাচ নটিংহামেও পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি। তারপর সময় যত এগিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটে সৌরভের আধিপত্য কায়েম হয়েছে মহারাজের মতোই।
কলকাতা: ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর আবির্ভাব ১৯৯২ সালে। তবে সুযোগের অভাবে অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও ৪ বছর। আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পথ চলা শুরু হয় ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ড সিরিজ দিয়ে। লর্ডসে অভিষেকেই শতরান। তার পরের ম্যাচ নটিংহামেও পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি। তারপর সময় যত এগিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটে সৌরভের আধিপত্য কায়েম হয়েছে মহারাজের মতোই।
ক্রিকেটার হিসেবে আত্নপ্রকাশ, অধিনায়কত্ব, সিএবি প্রেসিডেন্ট থেকে বিসিসিআইয়ের শীর্ষ পদ, ভারতীয় ক্রিকেটে শেষ কথা এখন সৌরভই। তবে শুরুর দিনগুলো কী এমনই মসৃণ ছিল না তাঁর? না, একেবারেই না। অনিশ্চয়তাই ছিল তাঁর শুরুর দিনগুলোর সাক্ষী।
তখন বাংলার নির্বাচক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান অম্বর রায়। রঞ্জি ফাইনালের মতো বড় ম্যাচে নতুন ক্রিকেটারকে খেলানো নিয়ে তাঁর প্রবল অনীহা। দিল্লির হেভিওয়েট দলের বিরুদ্ধে নবাগতকে সুযোগ দেওয়া ঝুঁকির। ম্যাচের তিন দিন আগে টিম মিটিংয়ে অরুণ লাল আর সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম জগমোহন ডালমিয়াকে বলেন সৌরভকে খেলানো হোক। ব্যাটিংয়ের সঙ্গে সুইং বোলিং, দিল্লির বিরুদ্ধে কাজে আসবে। অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের অকাট্য যুক্তির পর রাজি হয়ে যান জগমোহন ডালমিয়াও। সম্মতি দেন সৌরভকে রঞ্জি ফাইনালে খেলানোর জন্য। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেটাই ছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিষেক ম্যাচ।
দত্তাত্রেয় মুখোপাধ্যায়, রাজীব শেঠ, শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়, উৎপল চট্টোপাধ্যায়, ২ স্পিনার ও ২ পেসার নিয়ে খেলেছিল বাংলা দল। প্রথম ইনিংসে ১০০ ওভার ব্যাট করে দিল্লি তুলেছিল ২৭৮।
লো স্কোরিং ম্যাচে বাংলা ৬৩ ওভার খেলে ৪ উইকেট হারিয়ে করে ২১৬ রান। ৫২ রানে নট আউট ছিলেন অরুণ লাল। বাংলার প্রথম ইনিংস শেষ না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ী গড় রান ও হাতে উইকেট থাকার কারণে জিতে যায় সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। বৃষ্টি বিঘ্নিত ওই ম্যাচে সৌরভ করেছিলেন ২২ রান। তবে বিশেষ বল করতে হয়নি তাঁকে।
এরপর একেবারে লন্ডন। ১৯৯৬ সালে ব্রিটিশ ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে লর্ডসে অভিষেক হয় সৌরভের। শতরান করেন মহারাজ। লর্ডসে রূপকথার লেখার আগে ম্যাঞ্চেস্টারে একদিনের একটি ম্যাচে ৪৬ রানের ইনিংস এসেছিল সৌরভের ব্যাট থেকে। তারপর ডার্বিশায়ারে প্রস্তুতি ম্যাচেও ৮১ রান করেছিলেন তিনি। এরপরও ছিয়ানব্বইয়ের সেই ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচে সৌরভ ছিলেন প্রথম একাদশের বাইরে। দ্বিতীয় ম্যাচে লর্ডসে সুযোগ দেওয়া হয় ‘প্রিন্স অব ক্যালকাটা’-কে।
সে সময়ের ভারত অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন ও কোচ সন্দীপ পাতিল সৌরভকে ডেকে দ্বিতীয় টেস্টে খেলার কথা জানায় এবং বলেন তাঁকে ৩ নম্বরে ব্যাট করতে হবে।
ইংল্যান্ডে তখন সবে গরমকালের শুরু। স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় বল ইনসাইড, আউটসাইড দুদিকেই বাঁক নিচ্ছে। সৌরভ জানতেন এটা তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ আবার নিজেকে প্রমাণ করার শ্রেষ্ঠ সুযোগও।
১৯৯২ সালে ওয়ানডে-তে একটা সুযোগের পর ৪ বছরের অপেক্ষা, সৌরভ কোনও ভাবেই তা হাতছাড়া করতে চাননি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মানসিক দৃঢ়তা এবং মনোযোগেই এল সাফল্য। মুলালি, কর্ক, মার্টিন, ল্যুইসদের বিরুদ্ধে একের পর এক বাঁধিয়ে রাখার মতো কভার ড্রাইভ খেললেন সৌরভ। ২০টি বাউন্ডারিতে সাজানো রূপকথার ইনিংসেই বুঝিয়ে দিলেন, ‘রাজত্ব করতেই এসেছি’। করলেনও তাই। অনেকেই বিশ্বাস করেন সৌরভের হাত ধরেই উত্তরণ ঘটে ভারতীয় ক্রিকেটর। আজ তাঁর জন্মদিন। জীবনের ৪৮তম বসন্তে পা রাখলেন ভারতীয় ক্রিকেটের মহারাজ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।