Kings Cup: কিংস কাপে লড়েও লেবাননের বিরুদ্ধে ১-০ গোলে হার ভারতের
India vs Lebanon: এরপর আর গোলশোধ করতে পারেনি ভারতীয় দল। এর আগে সাফ কাপ, ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপেও লেবাননের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল ভারতীয় দল।
ব্যাঙ্কক: দেশের মাটিতে টানা সাফল্যের পর বিদেশে গিয়ে হোঁচট খেল ভারতীয় ফুটবল দলের অভিযান। রবিবার থাইল্যান্ডে কিংস কাপের দ্বিতীয় ম্যাচেও হারল তারা। দু’দিন আগে সেমিফাইনালে ফিফা ক্রমতালিকায় ২৯ ধাপ এগিয়ে থাকা ইরাকের বিরুদ্ধে ৯০ মিনিট দুর্দান্ত লড়াই করে টাই ব্রেকারে হেরে যায় ভারত। রবিবার তৃতীয় স্থান নির্ধারক ম্যাচে তাদের চেয়ে একধাপ পিছিয়ে থাকা লেবাননের কাছে ০-১-এ হারল ভারত। ফলে থাইল্যান্ড থেকে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে তাদের।
চলতি বছরে ভারত দেশের মাটিতে যে ১১টি ম্যাচ খেলে, তার মধ্যে ন’টিতে জেতে এবং দু’টিতে ড্র করে। অর্থাৎ এই বছরে ঘরের মাঠে হারের মুখে দেখেনি ভারত। কিন্তু বিদেশের মাঠে নামতেই তাদের বিজয়রথ থেমে গেল। গত ম্যাচে তাও যথেষ্ট লড়াই করতে দেখা যায় সুনীল ছেত্রী-হীন ভারতীয় দলকে। দু’বার ম্যাচে এগিয়ে যাওয়ার পরেও টাই ব্রেকারে ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজের পেনাল্টি শট পোস্টে ধাক্কা খাওয়ায় হারতে হয় ভারতকে। কিন্তু এ দিন সেই উজ্জীবিত ফুটবল খেলতে পারেনি ভারতীয়রা।
এ বছর জুনে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে ভারত ও লেবাননের মধ্যে ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়। তার তিন দিন পরে ওই টুর্নামেন্টেই ২-০-য় লেবাননকে হারায় ভারত এবং জুলাইয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও তারা টাই ব্রেকারে ৫-৪-এ হারায় লেবাননকে। তবে এ বার আর সেই সাফল্যের ধারা বজায় রাখতে পারল না ভারত। এ দিন প্রথমার্ধে গোলশূন্য থাকার পরে দ্বিতীয়ার্ধে ৭৭ মিনিটে সেন্টার ব্যাক কাসেম এল জেইনের গোলে ম্যাচ জিতে নেয় লেবানন। এই জয়ের ফলে এ বছরের কিংস কাপে ব্রোঞ্জ পদক জিতল তারা, ২০১৯-এ যা জিতেছিল ভারত।
এই হারের পরে ভারতীয় দলের অধিনায়ক সন্দেশ ঝিঙ্গন বলেন, “জিততে না পারলে তো হতাশ হবই। তবে পুরো ম্যাচেআমরাই আধিপত্য বিস্তার করে ছিলাম। আমাকে গোলটা আবার দেখতে হবে, ওটা অফসাইড ছিল কি না দেখতে হবে। গত ম্যাচে ওদের (ইরাক) পেনাল্টি পাওয়ার কথাই ছিল না। এটা যদি অফসাইড হয়ে থাকে, তা হলে ব্যাপারটা হাস্যকর”।
এ দিন দুই দলই একাধিক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করার পর ৭৭ মিনিটে আল হজের কর্নার থেকে বক্সের মধ্যে হেড করে বল গোলের দিকে পাঠান মাহের সাবরা। দুর্দান্ত ভাবে তা সেভ করেন ভারতীয় গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু। তবে তিনি বল দখলে রাখতে পারেননি। ছিটকে আসা বল পড়ে আল জেইনের পায়ে। তিনি অসাধারণ এক বাইসাইকেল কিকে বল জালে জড়িয়ে দেন। একজন সেন্টার ব্যাকের পা থেকে এমন দর্শনীয় বাইসাইকেল কিক, অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। ভারতীয়দের দাবি ছিল আল জেইন অফসাইডে ছিলেন। কিন্তু রেফারি সেই দাবি নাকচ করে দেন।
প্রথম এগারোয় জোড়া পরিবর্তন করা ভারতীয়রা দাপুটে ফুটবল খেলার চেষ্টা করলেও এ দিন বারবার তাদের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে তাদের ছন্দপতন ঘটান লেবাননের ফুটবলাররা। বল বেশি দখলে রাখতে না পারায় এবং সঠিক ভাবে জায়গা তৈরি করতে না পারায় তারা বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে এ দিন চোট সারিয়ে প্রথম এগারোয় ফেরেন এবং নিখিল পূজারির জায়গায় দলে ফেরে আশিস রাই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে নিখিল ও ব্র্যান্ডনকে নামান ইগর স্টিমাচ। তুলে নেন আশিস ও অনিরুদ্ধ থাপাকে।
শুরুর দিকে অবশ্য লেবাবননই আধিপত্য বিস্তার করে। কিন্তু ভারতীয় দলের দুর্ভেদ্য রক্ষণ তাদের বারবার হতাশ করে। ভারত ক্রমশ খেলায় দাপট বাড়াতে থাকে এবং গোলের সুযোগ তৈরি করা শুরু করে। মনবীরের হেড বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতের বক্সের মধ্যে থেকে নেওয়া শট গোলের বাইরে চলে যায়।
মনবীর প্রতিপক্ষের দুই সেন্টার ব্যাকের দু’পাস দিয়ে আক্রমণ তৈরির চেষ্টা করলেও তাঁরা এ দিন নিজেদের সেরা ফর্মে ছিলেন। দু’দিক দিয়ে আশিস রাই ও আকাশ মিশ্র মাঝে মাঝে সাঁড়াশি আক্রমণের উদ্যোগ নিলেও তাঁদের ফাইনাল ডেলিভারির দুর্বলতায় আক্রমণ দানা বাঁধতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আনোয়ার আলির বাড়ানো থ্রু থেকে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ পান অনিরুদ্ধ থাপা। তাঁর সামনে তখন গোলকিপার ছাড়া কেউই ছিলেন না। কিন্তু ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরে বল গোলে রাখতে পারেননি।
লেবাননের পরিবর্ত স্ট্রাইকার করিম দারউইচ মাঠে নামার পরেই তাদের আক্রমণের ধার বাড়ে। তাঁর তৈরি আক্রমণের ফলেই কর্নার পেয়ে যায় লেবানন এবং সেই কর্নার থেকেই ম্যাচের একমাত্র গোলটি পায় তারা। এই গোল শোধে মরিয়া হয়ে উঠলেও ভারতীয় অ্যাটাকারদের সঠিক পরিকল্পনার অভাব দেখা গিয়েছে বারবার। স্টপেজ টাইমে ছাঙতে বক্সের ডানদিক থেকে বল তোলেন দ্বিতীয় পোস্টে, যেখানে রোহিত কুমার ও কেপি রাহুল থাকলেও তাঁদের মধ্যে কেউ ঠিকমতো হেড করতে পারলে সমতা এনে ফেলতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা ঠিকমতো মাথাই ছোঁয়াতে পারেননি বলে।
এই পারফরম্যান্সের পর নিশ্চয়ই নড়েচড়ে বসবে ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচ ও তাঁর দলের ফুটবলাররা। জানুয়ারিতে কাতারে এএফসি এশিয়ান কাপের আগে তাদের এশিয়ান গেমস, মারডেকা কাপ ও বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে আরও অন্তত সাত থেকে দশটি ম্যাচ খেলতে হবে। এই ম্যাচগুলিতে যে ভারতীয় দলকে বিভিন্ন জায়গায় যে আরও উন্নতি করতে হবে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল কিংস কাপের এই জোড়া ম্যাচ।