Venomous Snake Bite : বিষধর সাপের কামড়ের পর বাঁধন কি দেবেন ? চিরে রক্ত বের করে দেওয়া কি উপকারী ?
ABP Exclusive : কোন কোন কুসংস্কার থেকে দরকার রেহাই, সাপের কামড়ের পর চিকিৎসার সাহায্যে দরকার ঠিক কী কী পদক্ষেপ, সেসব নিয়ে বিশদে জানিয়েছেন চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার।
কলকাতা : সাপ কামড়ানোর পর শরীরের সেই জায়গায় বাঁধন দিয়ে দিলে কি থমকে যায় বিষের প্রবাহ ? বিষধর সাপের কামড়ের পর জায়গাটা চিরে-কেটে দিলে কি সেখান থেকে বিষ বেরিয়ে যায় ? চিকিৎসার স্বার্থে কি যে সাপ কামড়েছে সেটিকে খুঁজে বের করে হাসপাতালে নিয়ে ছোটা দরকার ? বিভিন্ন জিজ্ঞাসা নিয়ে এবিপি লাইভ বাংলা পৌঁছে গিয়েছিল বাংলার 'সাপ ডাক্তারের' কাছে। কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্পদংশন বিভাগের পরামর্শদাতা চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার (Dayal Bandhu Majumdar) সাপ তথা বিষধর সাপের কামড় ঘিরে জনমানসে বিভিন্ন ধ্যান-ধারনা প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন। কোন কোন কুসংস্কার থেকে দরকার রেহাই, সাপের কামড়ের পর চিকিৎসার সাহায্যে দরকার ঠিক কী কী পদক্ষেপ, সেসব নিয়ে বিশদে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলার বিভিন্ন জায়গায় এখনও জ্বলন্ত সমস্যা সাপের কামড়ে প্রাণহানি। বিষধর সাপ কামড়েছে বুঝতে পারলে সময় নষ্ট না করে সোজা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পরামর্শই দেন চিকিৎসকরা। দৌড়ঝাঁপ করলে দ্রুত বিষয় ছড়িয়ে পড়তে পারে, তাই চুপ করে এক জায়গায় বসে দ্রুত হাসপাতালে আসার বাঞ্চনীয় বলেই জানান তাঁরা। পাশাপাশি বেশ কিছু বিষয়ে করতে নিষেধও করেন তারা। যার মধ্যে প্রথম ও অন্যতম হচ্ছে, কামড়ের পর কোনওরকম বাঁধন না দেওয়া। দয়ালবন্ধু মজুমদার জানিয়েছেন, 'বাঁধন দিয়ে বিষ আটকানো যায় না। বরং খুব কষে বাঁধন (Tie Up) দিলে হাত বা পা পচে যেতে পারে। তাই সাপের কামড়ের পর বাঁধন দেবেন না, তাতে কোনও লাভ হয় না।'
কেটে-চিরে বিষ বের করার ধারনাও ভুল বলেই জানাচ্ছেন বাংলার সাপের ডাক্তার। তার কথায় কাটা বা চেরায় শরীর থেকে খানিকটা রক্ত বেরিয়ে যেতে পারে, কিন্তু তাতে বিষের প্রবাহে কোনও প্রভাব পড়ে না, কারণ, বিষধর সাপ কামড়ালে সেক্ষেত্রে শরীরের অনেক গভীরে পৌঁছে যায় বিষের রেশ। অনেকে কবচ-তাবিচ পরান, অনেক সময় কিছু বেটে খাওয়ান হয়, এগুলোর কোনওটিই সাপের বিষ (Snake Bite) আটকায় না। গ্রাম বাংলায় অনেক ক্ষেত্রেই ওঝা-বদ্যিরা এই ধরনের কিছু খাওয়ানোর পর কিছুক্ষেত্রে রোগী ঠিক হয়ে যাওয়ার পরে অনেকেই মনে করেন, তাঁদের হাতযশে এমনটা হয়েছে। চিকিৎসক দয়াবন্ধু মজুমদারের কথায়, 'বাংলায় ১২০ থেকে ১২৫ ধরনের সাপের মধ্যে মাত্র ৪ ধরনের সাপ বিষধর। তারা ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে শরীরে বিষই প্রবেশ করে না। সেগুলিকে বলে ড্রাই বাইট। তাই বিষধর বিষের কামড় ছাড়া এমনিতেই রোগী সুস্থ হয় যান।'
আর বিষধর সাপের বিষের ক্ষেত্রে ? ভারতে সব রকমের সাপের কামড়ের জন্যই একটি মাত্র অ্যান্টিভেনাম ব্যবহৃত হয়। যার নাম পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনাম (Polyvalent Antivenum)। তামিলনাড়ুর মহাবলীপূরমের ইরুলা সোসাইটিতে যা তৈরি হয়ে গোটা দেশে পৌঁছে যায়। সাপে কামড়ালে ভয় না পেয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছে গেলেই সম্পূর্ণ চিকিৎসা সম্ভব।
সাপে কামড়ালে বুঝতে পারা গেলে না না গেলেও তাহলে কী করবেন ? দয়ালবন্ধু মজুমদারের কথায়, প্রথমেই বুঝতে পারলে বাড়তি কোনও ছোটাছুটি করবেন না। আর দ্রুত কাউকে বলে পৌঁছে যেতে হবে কাছের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (Primary Health Centre)। বাংলার প্রত্যেকর স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই সাপে কাটা রোগীকে সুস্থ করার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে রাতে রোগী ভর্তি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে নিয়ে গেলেই সাপে কাটার ক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসা হবে। দয়ালবন্ধু মজুমদার জানিয়েছেন, 'সাপ দেখে চিকিৎসা করা হয় না। মাত্র ২ শতাংশ ক্ষেত্রে কোন সাপ কামড়েছে, সেটাকে ধরা যায়। তাই সাপ ধরে নিয়ে হাসপাতালে ছুটতে হবে এই ধারণা ভ্রান্ত। তাতে সময় নষ্টের পাশাপাশি অন্য আরও কারোর সাপের কামড় খাওয়ার আশঙ্কা থাকে।'
অনেকে মনে করেন ঘরে কার্বলিক অ্যাসিড (Carbolic Acid) রাখলে সেক্ষেত্রে দূরে থাকবে সাপ। বিষয়টি সম্পূর্ণ সত্য নয় বলেই জানাচ্ছেন বাংলার সাপের ডাক্তার। দয়াবন্ধু মজুমদার জানাচ্ছেন, 'খাবারের খোঁজেই সাপ ঘরে ঢুকে আসে। তাই ইঁদুর-ব্যাঙ ঘরে আসছে কি না, সেই দিকটা নজর রাখতে হবে। আর কার্বলিক অ্যাসিড ঘরে রাখা মানেই সাপ আসবে না এমনটাও নয়। কার্বলিক অ্যাসিড ছড়ানো হলে সাপের গা পুড়ে যেতে পারে বলে তা খানিকক্ষণ দূরে থাকতে পারে, কিন্তু সেই অ্য়াসিড উবে গেলেই ফের সাপ এসে ঢুকবে।'
প্রসঙ্গত, কেউটে, গোখরো, চন্দ্রবোড়া ও কালাচ (কালাচিতি) এই চার ধরনের বিষধর সাপ পাওয়া যায় বাংলায়। প্রথম দুই ধরনের সাপ ফণা-যুক্ত। কেউটে (Cobra) ও গোখরো এই দুই ধরনের সাপের কামড় মাত্রই শুরু হয়ে যায় ভয়ঙ্কর জ্বালা-যন্ত্রণা। ঘুমের মধ্যে কাউকে কামড়ালে বা নেশাগ্রস্থ কাউকে কামড়ালে ঘুম বা নেশা ছুটে যেতে পারে বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার। আর ফণা-হীন দুই ধরণের বিষধর সাপের মধ্যে চন্দ্রবোড়ার দাঁত খুবই ধারাল, সেক্ষেত্রেও দাগ বা খানিক পর থেকে জ্বালা-পোড়া শুরু হতে পারে। জায়গাটা আস্তে আস্তে ফুলতে শুরু করে। কিন্তু কালাচ বা কালা-চিতি সাপের ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। 'মশার মতো সুক্ষ্ম এমন কামড় হয় যে দাগই পাওয়া যায় না কালাচের কামড়ে', বলেই জানালেন বাংলার সাপ ডাক্তার। কোনও কিছু বোঝা না গেলেও পরের দিকে শুরু হয় নানা সমস্যা। যেমন গাঁটে গাঁটে ব্যথা বা পেটে ব্যথা।
আরও পড়ুন- স্থান ভেদে পাল্টে যায় সাপের বিষ ! বিষধর সাপের কামড়ে চিকিৎসা করাবেন কীভাবে ?