Satipith Kankalitala : শ্মশানে যুগে যুগে চলে তন্ত্রসাধনা ! কুণ্ডের জলে সতীর কাঁখাল, শিহরণ জাগানো কাহিনি কঙ্কালীতলার
Kankalitala In Birbhum : কুণ্ডের ঈশাণ কোনে দেবী সতীর কাঁখাল নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। দেবী ছাড়াও কুণ্ডে পঞ্চশিব অবস্থান করছেন।
বীরভূম : ছোট্ট মন্দিরে পাথরের বেদীর ওপর সতীর কালীরূপী চিত্রপট। কাচ দিয়ে ঢাকা। তার উপর একের পর এক মালা চড়ান ভক্তরা। মায়ের কাছে মনের ইচ্ছে জানানো যায় একদম কাছ থেকে। অঞ্জলিও দিতে পারা যায় মাকে। ভক্তের প্রার্থনায় সদা জাগ্রত মায়ের কান। শান্তিনিকেতন থেকে আট কিলোমিটার দূরত্বে কঙ্কালীতলা। এখানেই রয়েছে সতীর ৫১ টি পীঠের একটি। মনে করা হয় এটাই শেষ সতীপীঠ।
কেন নাম কঙ্কালীতলা ?
এই মন্দির চত্বরেই রয়েছে একটি কুণ্ড, যা এখানকার প্রধান আকর্ষণ। কথিত আছে এখানেই নিমজ্জিত রয়েছে সতীর কাঁখাল। কুণ্ডের ঈশাণ কোনে দেবী সতীর কাঁখাল নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। দেবী ছাড়াও কুণ্ডে পঞ্চশিব অবস্থান করছেন। কোমর বা কাঁখাল থেকে স্থানীয় ভাবে দেবীর নাম রয়েছে কঙ্কালী। তবে পৌরাণিকভাবে এখানকার দেবী বেদগর্ভা নামেই পরিচিত। প্রচলিত নামানুসারেই এলাকার নাম হয়েছে কঙ্কালীতলা। তবে লোকশ্রুতিতে এই কুণ্ডের মাহাত্ম্য মুখে মুখে।
এই মন্দিরের বৈশিষ্ট্য কী
এই মন্দির আর পাঁচটা সতীপীঠের থেকে অনেকটাই আলাদা। সাধারণত সতীপীঠগুলিতে মায়ের পাথরের মূর্তি থাকে। বা কোনও পাথরকেই দেবী হিসেবে পুজো করা হয়। কিন্তু কঙ্কালীতলায় ছোট্ট মন্দিরে পাথরের বেদীর ওপর পূজিতা সতীর কালীরূপী এই চিত্রপট।
কীভাবে পৌঁছবেন কঙ্খালীতলায় ?
চৈত্র সংক্রান্তিতেই দেবীর মূল উৎসব পালন হয়। সেদিন কুণ্ডেই মায়ের পুজো করা হয়। সে-সময় মন্দিরকে ঘিরে মেলা বসে। এছাড়া পৌষ সংক্রান্তি ও কৌশিকী অমাবস্যাতেও খুব বড় করে পুজো হয়। দেবীপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে এই কুণ্ডের ধারে একান্ন কুমারীর পুজো করা হয়। নিরাভরণ এই মন্দিরে সকাল থেকে পুজো দিতে আসেন ভক্তরা। দুপুরে দেবীর অন্নভোগ হয়।
কঙ্কালীতলার মাহাত্ম্য
প্রকৃতির মাঝেই এর অবস্থান সতীপীঠের। মন্দিরের পিছনের অংশে বিশাল বনস্পতির সুনিবিড় ছায়া । খানিক দূরত্বে রয়েছে শ্মশান। যুগে যুগে বহু তন্ত্র সাধক এখানে সাধনা করে আসছেন। বহু সাধক আসেন এখানে, মন্দিরকে ঘিরে নানা সময় তাঁরা হোমযজ্ঞ করেন। আগত ভক্তরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। পাশাপাশি মন্দির চত্বরে বসে বাউল-সাধকদের বাঁশির সুর মনকে নিয়ে যায় শান্তির নির্জনতায়। এখানে ভক্তরা মনস্কামনা জানিয়ে দীপ জ্বেলে কুণ্ড প্রদক্ষিণ করেন। সন্ধ্যার মুখে মন্দিরকে ঘিরে কয়েকশো মোমের আলো-আঁধারি এক মোহময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
কীভাবে পৌঁছবেন?
বীরভূম জেলার অন্যতম পর্যটনক্ষেত্র শান্তিনিকেতন। রেলপথে বোলপুর-শান্তিনিকেতনের পরের স্টেশন প্রান্তিক। এই প্রান্তিক স্টেশনকে পাশ কাটিয়ে শান্তিনিকেতন থেকে আট কিলোমিটার দূরত্বে কঙ্কালীতলা।
আরও পড়ুন : পড়েছিল সতীর ব্রহ্মরন্ধ্র, এখানে পাপস্খালন করেছিলেন স্বয়ং রামচন্দ্র, পড়ুন মরুতীর্থ হিংলাজ কথা