Lopamudra Mitra Exclusive: 'অনেক টাকা আছে, মানুষের পাশে দাঁড়ান', করোনাকালে মানসিক যত্নের বার্তা দিয়ে কটাক্ষ শুনেছেন লোপামুদ্রা
কোভিড পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের দিকে খাবার, হাসপাতালের বেড অক্সিজেনের যোগান সহ অন্যান্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেক তারকারাই। কিন্তু তাঁদের মনের হদিশ? করোনা আক্রান্তদের মন ভালো করতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র। বিনামূল্যে অনলাইন কনসার্ট করে করোনা আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলছেন, গল্প করছেন, গান শোনাচ্ছেন তিনি।
কলকাতা: করোনা আক্রান্ত হয়ে বন্দি একটা ঘরে। একই বাড়িতে থেকে প্রিয়জনেদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে অনেকটা। শরীরের সঙ্গে সঙ্গে এই পরিস্থিতি অনেককে অসুস্থ করে তুলছে মানসিকভাবেও। করোনা আক্রান্তরা অনেকেই শিকার হচ্ছেন অবসাদের। কোভিড পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের দিকে খাবার, হাসপাতালের বেড অক্সিজেনের যোগান সহ অন্যান্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেক তারকারাই। কিন্তু তাঁদের মনের হদিশ? করোনা আক্রান্তদের মন ভালো করতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র। বিনামূল্যে অনলাইন কনসার্ট করে করোনা আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলছেন, গল্প করছেন, গান শোনাচ্ছেন তিনি।
করোনা আক্রান্তদের অবসাদ দূর করার এই অভিনব পরিকল্পনার শুরু কীভাবে? লোপামুদ্রা বলছেন, 'আমি মনখারাপের রুগী। বিশ্বাস করি, মানুষের শরীরের অনেক কিছু নির্ভর করে মনের ওপর। শরীর সঙ্গে সমানভাবে যত্ন নেওয়া উচিত মনেরও। কিন্তু ভারতে মানসিক সমস্যা নিয়ে সচেতনতা খুব কম। অনেকেই বোঝেন না মনখারাপ নিজের সঙ্গে নিজের একটা যুদ্ধ। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে অনেকেই যেতে চান না। শুধু তাই নয়, মনখারাপকে লুকিয়া রাখার একটা প্রবণতাও রয়েছে বেশিরভাগ মানুষের। আমি মনরোগ বিশেষজ্ঞ নই। কিন্তু বিশ্বাস করি সুর মানুষের মনকে ভালো করে দিতে পারে। সেই ভাবনা থেকেই এই উদ্যোগ। রোজ ১৫ জনকে নিয়ে এই চলছে এই গান-গল্পের আসর।'
অনলাইনে সুরের আসর, অচেনা মানুষদের সঙ্গেও মনখোলা আড্ডা-গল্প। কেমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে সঙ্গীতশিল্পীর? লোপামুদ্রা বলছেন, 'আমি নিজেও খুব মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে সেই নববর্ষের পর থেকেই বন্ধ রয়েছে আমার বুটিক। সঙ্গীতশিল্পীদের পেশাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে এই অতিমারি। এই পরিস্থিতিতে আমারও মন ভালো করে দিচ্ছে এই আসর। রোজ কত মানুষের কত রকম গল্প শুনি। কেউ বয়স্ক মানুষ, আমি গান করতে তাঁরাও দু কলি গেয়ে উঠছেন। কেউ কবিতা বলছেন। আবার কেউ ভাগ করে নিচ্ছেন নিজেদের অভিজ্ঞতা, অনুভূতির কথা। অনেকে আবার একটাই অসুস্থ, তাঁরা কথা বলতে পারছেন না। কেবল লিখে অনুরোধ জানাচ্ছেন কোনও গানের। একজন মহিলা রয়েছেন, তিনি ১২ দিন হাসপাতালে থেকে একটি সুস্থ হয়ে সবে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি নিজের গল্প বলছেন, আশ্বাস দিচ্ছেন এই খারাপ সময় কেটে যাওয়ার। ভালো লাগছে। কেবল আমরা না, আসরে একে অপরের গল্প শুনেও ভরসা পাচ্ছেন বাকিরা।'
তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষের হাত থেকে রেহাই পাননি সঙ্গীতশিল্পী। লোপামুদ্রা বললেন, 'এখন সেলেব্রিটি কথাটাকে মানুষ যেন গালাগালির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। সবাই ভাবে আমরা একটা স্বপ্নের জগতে থাকি। বাস্তবটা অনেকেই দেখতে চান না। শুনতে হয়েছে, 'আপনাদের তো কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা, এইসব করে কি হবে! একটু মানুষের পাশে দাঁড়ান।' বিনোদনকে সবসময়ই সবার শেষে রাখা হয়। মনখারাপ সারিয়ে তোলার যেন প্রয়োজনই নেই।'
গতবছর লকডাউন থেকেই বদলে গিয়েছে জীবনযাত্রা। পেশার ক্ষেত্রে বড়সড় ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে সঙ্গীত জগত। বদলে গিয়েছে শিশুদের জীবনযাত্রাও। লোপামুদ্রা বলছেন, 'এক বছরের বেশি সময় ধরে ছোটরা গৃহবন্দি। ওদের পক্ষেও এটা একটা মানসিক ধাক্কা। আমি, জয় (জয় সরকার), আর অস্মিতা মিলে ৫-১৪ বছরের শিশুদের জন্য একটা অনলাইন সেশন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেখানে গান হবে, গল্প হবে। ছোটদের সঙ্গে সময় কাটালে সবসময় মন ভালো হয়ে যায়।'