Delhi Pollution: আলোর উৎসব কাটতেই নামল অন্ধকার, গভীর রাত পর্যন্ত বাজির তাণ্ডব, সকাল থেকে দূষণে দমবন্ধ দিল্লির
Delhi Firecrackers Pollution: দীপাবলির রাতে যে উদ্দীপনা, আলোর রোশনাই চোখে পড়ছিল দিল্লিতে, মঙ্গলবার সকাল থেকে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো।

নয়াদিল্লি: সুপারিশ জানিয়েছিল কেন্দ্র। সায় ছিল দিল্লি সরকারেরও। শেষ পর্যন্ত সবুজ বাজিতে অনুমোদন দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। দীপাবলিতে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সবুজ বাজি পোড়ানো পোড়ানো যাবে বলে নির্দেশ ছিল। কিন্তু দীপাবলিতে বাজি পোড়ানোর হিড়িকে শিকেয় উঠল যাবতীয় নির্দেশ-আদেশ। সবুজ বাজির পরিবর্তে দেদার নিষিদ্ধ বাজি ফাটল রাজধানীতে। শব্দবাজির দাপটে কানপাতাই দায় হল। মঙ্গলবার সকালে যখন ঘুম ভাঙল দিল্লিবাসীর, চোখের সামনে শুধুই ধোঁয়াশা, দমবন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। দীপাবলিতে বাজির দৌরাত্মে রাজধানীর বাতাস একধাক্কায় বিষে পরিণত হয়েছে বলে জানান দিচ্ছে সূচকও। (Delhi Firecrackers Pollution)
দীপাবলির রাতে যে উদ্দীপনা, আলোর রোশনাই চোখে পড়ছিল দিল্লিতে, মঙ্গলবার সকাল থেকে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো। কার্যত থম মেরে ছিল গোটা শহর, ধোঁয়াশার মোটা চাদরে আঁধার নেমে এসেছিল দিনের বেলাতেই। বারুদের গন্ধে শ্বাস নেওয়াই মুশকিল হয়ে পড়ে। দিল্লির বাতাসের গুণমানও নেমে যায় একধাক্কায়। কেন্দ্রীয় সরকারের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দাবি, এদিন সূচকে দিল্লির বাতাসের গড় গুণমান ছিল ৩৫৯, যা কি না ‘অত্যন্ত ক্ষতিকর’ বলে গণ্য হয়। এদিন সকাল ৭টার হিসেব অনুযায়ী, দিল্লির বাতাসের গড় AQI ছিল ৪৫১, শ্বাসপ্রশ্বাসের উপযোগী নিরাপদ মাপকাঠির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি। নয়াদিল্লিতে বাতাসে ক্ষতিকর ধূলিকণা, PM 2.5-এর ঘনত্ব ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশের চেয়ে প্রায় ৫৯ গুণ বেশি। (Delhi Pollution)
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, দিল্লির বুকে ২০২৫ সালের দীপাবলিই এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। ২০২৪ সালের দীপাবলির পর সেখানকার বাতাসের গুণমান সূচক ছিল ৩২৮, ২০২৩ সালে ছিল ২১৮ এবং ২০২২ সালে ছিল ৩১২-তে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল ওয়াজিরপুর এবং জহাঙ্গিরপুরীতে, ৪০৮। বুরারি ক্রসিংয়ে ৪০৫ এবং শাদিপুরে বাতাসের গুণমান ছিল সূচক ছিল ৩৯৯-তে। NSIT দ্বারকা, অশোক বিহার, মুন্দকাতেও দূষণের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি ছিল। মেজর ধ্যানচাঁদ স্টেডিয়াম, আরকে পুরমেও শ্বাস নিতে বেগ পেতে হচ্ছিল সাধারণ মানুষকে।
Be it Pahar Ganj, Kotla Mubarakpur, Bhogal or Rohini, hundreds of small street vendors selling crackers. No sign of ‘green’. @LiveLawIndia @barandbench
— Bhavreen Kandhari (@BhavreenMK) October 19, 2025
So much so for the licence, designated locations, ‘Green’ or QR codes🙄 @DelhiPolice @CPDelhi @DPCC_Pollution pic.twitter.com/DhvpWYwLIQ
দিল্লির পাশাপাশি, নয়ডায় AQI ছিল ৪১২, গ্রেটার নয়ডায় ৩৯০, গাজিয়াবাদে ৪১২, ফরিদাবাদে ৪১২, গুরুগ্রামে ৪০২ এবং মেরঠে ৩০২। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টার হিসেব পাওয়া যায়নি একাধিক জায়গায়। বাতাসে ক্ষতিকর ধূলিকণার মাত্রা অত্যধিক হয়ে যাওয়ায়, যন্ত্রপাতি ঠিক মতো কাজ করেনি। পড়শি রাজ্যগুলিতে ফসলের গোড়া পোড়ানোর ধোঁয়াও দিল্লিকে আরও দূষিত করে তোলে বলে মত পরিবেশবিদদের একাংশের।
দীপাবলির আগে থেকেই দিল্লিতে স্টেজ-২ গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল নির্মাণকার্য নিয়েও। কিন্তু দীপাবলিতে দেদার বাজি পোড়ানোর পর একধাক্কায় দিল্লির বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। রাতেই AQI ৩৪৫ ছিল। ৩৮টির মধ্যে ৩৪টি জায়গায় দূষণের মাত্রার উপর ছিল লালকালি, যার অর্থ ‘অত্যন্ত ক্ষতিকর’, ‘গুরুতর’। পরিবেশবিদদের মতে. দেদার বাজি পোড়ানোতেই এমন অবস্থা হয়েছে দিল্লির। তার উপর বাতাসও বইছিল না, আবহাওয়ার অবস্থাও ছিল তথৈবচ। সেই সঙ্গে বিধিনিষেধ অমান্য করে নিষিদ্ধ বাজি পোড়ানোর অভিযোগও সামনে এসেছে।
সুপ্রিম কোর্ট দীপাবলিতে সবুজ বাজি পোড়ানোয় ছাড়পত্র দিলেও, শনিবার থেকেই দিল্লি এবং সংলগ্ন অঞ্চলের বাজারে নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি হচ্ছিল বলে খবর। সেই বাজি কিনতে কাতারে কাতারে মানুষজন ভিড়ও জমিয়েছিলেন। QR কোড সহ সবুজ বাজি যেমন বিক্রি হচ্ছিল, তেমনই QR কোডে মোড়া কাগজের প্যাকেটে নিষিদ্ধ বাজিও বিক্রি হয়। পাহাড় গঞ্জ, কোটলা মুবারকপুর, ভোগল, রোহিণী থেকে এমন ভিডিও-ও সামনে আসে। এমনকি সবুজ বলে না চালিয়ে, খোলা বাজারেই নিষিদ্ধ রকেট, বোম বিক্রি হয়। রাস্তার ফুটপাথে নিষিদ্ধ বাজিই বিক্রি হয় শুধু।
তবে নিষিদ্ধ বাজিই নয় শুধু, সবুজ বাজি ফাটানোর যুক্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তুলনা মূলক আকারে ছোট, কম বারুদ সম্পন্ন, যা থেকে তুলনামূক কম পরিমাণ কার্বন নির্গত হয়, তেমন বাজিকেই সবুজ বাজি বলা হয়। এই সবুজ বাজি থেকে ৩০ শতাংশ কম ধূলিকণা বাতাসে মেশে এবং গ্যাসের নির্গমন ঘটে। তা সত্ত্বেও নিষিদ্ধ বাজির মতোই সবুজ বাজি থেকে ৭০ শতাংশ দূষিত কণা বাতাসে মেশে। ফলে বিজ্ঞাপনে যা-ই লেখা হোক না কেন, সবুজ বাজিতেও পরিবেশের ক্ষতি হয় বলে মত সমাজকর্মীদের। এবারের দীপাবলিতে দু’দিন সকাল ৬টা থেকে ৭টা এবং রাত ৮টা থেকে ১০টা বাজি পোড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল আদালত। কিন্তু বাস্তবে ভোররাত পর্যন্তও দেদার বাজি পোড়ানো হয়। তেমন নজরদারিও ছিল না বলে অভিযোগ। বর্তমানে দিল্লিতে দূষণের মাত্রা যত, তা থেকে মুক্তি পেতে আরও বেশ কিছু দিন লাগবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।






















