রাজ্যে র্যানসমওয়্যার ভাইরাসের হানা? কম্পিউটারের তথ্য লক করে মুক্তিপণ চাওয়ার অভিযোগ
এবার সাইবার জালিয়াতির শিকার হলেন খোদ কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক?
ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা: রাজ্যে র্যানসমওয়্যার ভাইরাসের হানা? এক অধ্যাপকের কম্পিউটারের তথ্য লক করে মুক্তিপণ চাওয়ার অভিযোগ উঠল সাইবার জালিয়াতদের বিরুদ্ধে। ব্যাঙ্ক ডিটেলস্ সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেহাত হয়ে যাওয়ায় বড়সড় আর্থিক প্রতারণার আশঙ্কা করছে ওই অধ্যাপকের পরিবার। নিমতা থানা ও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের সাইবার শাখায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
এবার সাইবার জালিয়াতির শিকার হলেন খোদ কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক। উত্তর ২৪ পরগনার বেলঘরিয়ার বাসিন্দা ও গোবরডাঙা হিন্দু কলেজের কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক সন্দীপ রায়ের অভিযোগ সামনে আসার পর থেকেই চোখ কপালে উঠেছে বিশেষজ্ঞদের। অধ্যাপকের অভিযোগ, তাঁর কম্পিউটারের সমস্ত তথ্যই লক হয়ে গিয়েছে। কোনও ফাইল খুলতে গেলেই মুক্তিপণ হিসেবে চাওয়া হচ্ছে ৯৮০ মার্কিন ডলার বা প্রায় ৭২ হাজার টাকা।
দম্পতির দাবি, ৮ জুলাই বিষয়টি প্রথম তাঁদের নজরে আসে। তার পরের দিনই নিমতা থানা ও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের সাইবার শাখায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। সন্দীপ রায় বলেন, "কম্পিউটার খুলে কাজ করতে গিয়ে দেখি বিভিন্ন ড্রাইভে পিকচার, ফাইল, কিছুই নেই। কোনওটাই খুলতে পারছি না। মনে হচ্ছে র্যানসমওয়্যার ভাইরাসের কবলে পড়েছি।" সন্দীপ রায়ের স্ত্রী তথা গোবরডাঙা হিন্দু কলেজের বাংলার অধ্যাপিকা বলেন, "আমার সব ব্যাঙ্ক ডিটেলস ছিল। ভয় লাগছে সেগুলো নিয়ে।"
২০১৭ সালে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বিভিন্ন দফতরের কম্পিউটারগুলিতে হানা দিয়েছিল র্যানসমওয়্যার ‘ওয়ানাক্রাই’। এবার সেরকম কিছুরই আশঙ্কায় ঘুম উড়েছে এই অধ্যাপক দম্পতির। এবিষয়ে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বিভাস রায় চৌধুরী বলেন, যখন কোভিড শুরু হয়, ইন্টারপোল থেকে সতর্ক করা হয় র্যানসমওয়্যার অ্যাটাক হতে চলেছে। আমেরিকা জার্মানির মতো দেশগুলিতে ভয়ঙ্কর অ্যাটাক হয়েছে। এরা যেভাবে অপারেট করে পুলিশেরও বিশেষ কিছু করার নেই। বিট কয়েনের মাধ্যমে টাকা আদায় করে লাখ কম্পিউটার আন্ডার থ্রেট, প্রায় ৪ লাখ মতো অলরেডি হয়ে গিয়েছে। ভয়ঙ্কর জিনিস।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, গত কয়েক মাসে বিশ্ব জুড়ে র্যানসমওয়্যার ভাইরাস হানার সংখ্যা বেড়েছে। করোনাকালে সাইবার আক্রমণ নিয়ে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে তীব্র টানাপোড়েন চলছে। এই নিয়ে ফোনে কথাও বলেছেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। এই অন্তর্জাল জালিয়াতি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সতর্ক থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। রাজ্যের সাইবার নিরাপত্তা উৎকর্ষ কেন্দ্রের আধিকারিক তথা আইটি, ওয়েবেলের ডেপুটি ম্যানেজার সম্রাট ঘোষ বলেন, “অজানা ইমেলের লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করলে ডিফেন্ডার এনেবল রাখুন। এক্সটার্নাল কোনও ডিভাইসে নিজের ডেটার নিয়মিত ব্যাকআপ নিন। কারও ডেটা এনক্রিপ্ট করে নিলেও টাকা দিতে যাবেন না। টাকা দিতে গেলে অন্য ক্রাইমের শিকার হয়ে যাবেন। টাকা নিলেও তথ্য ফেরাবে কোনও নিশ্চয়তা নেই।“