India-Yemen Relations: বিদেশে চরম শাস্তির মুখে ভারতীয় নার্স, টানাপোড়েন তুঙ্গে, তীব্র প্রতিক্রিয়া বিদেশ মন্ত্রকের
Capital Punishment for Indian Nurse: গোটা ঘটনায় ভারতের বিদেশমন্ত্রক তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
নয়াদিল্লি: বিদেশের মাটিতে মৃত্যুদণ্ড পেলেন ভারতীয় নার্স। সেই নিয়ে টানাপোড়েন তুঙ্গে। কেরলের নার্স নিমিশা প্রিয়া মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পেয়েছেন ইয়েমেনে। তাঁর মৃত্যুদণ্ডে সায় দিয়েছেন সেদেশের প্রেসিডেন্ট রশদ আল-আলিমি। ২০১৭ সাল থেকে সেখানে জেলবন্দি রয়েছেন ওই নার্স। আগামী একমাসের মধ্যে তাঁর মৃত্যু কার্যকর হবে বলে ঠিক হয়েছে। সেই নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। (India-Yemen Relations)
গোটা ঘটনায় ভারতের বিদেশমন্ত্রক তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বিবৃতি প্রকাশ করে বলেন, "প্রিয়াকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানোর বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আমরা। ওঁর পরিবার সবরকমের চেষ্টা করছে জানি। সরকারও সবরকমের সহযোগিতা প্রদান করছে।" (Capital Punishment for Indian Nurse)
প্রিয়ার পরিবারের লোকজন মেয়ের মৃত্যুদণ্ডের সাজা মকুবের জন্য চেষ্টা-চরিত্র চালাচ্ছেন। কিন্তু হাতে সময় খুব কম। শীঘ্র ক্ষমাপ্রার্থনার আর্জি মঞ্জুর না হলে, একমাসের মধ্যে প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে ইয়েমেন। কূটনৈতিক স্তরেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে খবর।
কেরলের পলক্কড় জেলার বাসিন্দা প্রিয়া। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ইয়েমেনের নাগরিক তালাল আব্দো মেহদিকে খুনের দায়ে গ্রেফতার হন তিনি।
২০২০ সালে ইয়েমেনের রাজধানী সানার ট্রায়াল কোর্ট প্রিয়াকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায়। সেই সাজার বিরুদ্ধে আবেদন জানালেও, ইয়েমেনের বিচারবিভাগীয় পরিষদ ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। দেশের প্রেসিডেন্টও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় সম্মতি দিয়েছেন।
৩৬ বছর বয়সি প্রিয়ার পরিবার যদিও মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রিয়ার মা প্রেমা কুমারী সানা পোঁছে যান এ বছরের গোড়াতেই। নিহতের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ-সহ প্রিয়ার সাজা মকুবের জন্য রাজি করাতে পারলে, রেহাই পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে খবর। প্রিয়ার পরিবার সেই চেষ্টাই চালাচ্ছে। নিহতের পরিবার যদি প্রিয়াকে ক্ষমা করে দেয়, তাহলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে না।
প্রিয়ার পরিবার সূত্রে খবর, নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তা চলছিলই। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে ভারতীয় দূতাবাস নিযুক্ত আইনজীবী আব্দুল্লা আমির প্রাক-মীমাংসা পর্বেই ১৬.৬ লক্ষ টাকা দাবি করেন। বিদেশমন্ত্রকের তরফে তাঁকে টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু পারিশ্রমিক বাবদ দু'দফায় ৩৩ লক্ষ টাকা মিটিয়ে দিতে হবে বলে দাবি জানান তিনি। তবেই নিহতের পরিবারের সঙ্গে নতুন করে কথাবার্তা শুরু করা যাবে বলে জানান। তাতেই বিষয়টি আরও দীর্ঘায়িত হয়।
অনুদান থেকে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল আমিরের পারিশ্রমিকের প্রথম কিস্তির টাকা তুলে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু অনুদান কোথা থেকে এল, তাতে অস্বচ্ছতা রয়েছে বলে অভিযোগ।
প্রিয়া ইয়েমেনের বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করছিলেন। নাবালিকা কন্যাকে নিয়ে ২০১৪ সালেই দেশে ফিরে আসেন তাঁর স্বামী। ওই বছরই ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ভিসা প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। আর সেখানে ফিরে যেতে পারেননি প্রিয়ার স্বামী। ২০১৫ সালে সানায় নিজের ক্লিনিক খোলার জন্য বারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আর্জি জানান প্রিয়া। কিন্তু ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী, দেশের নাগরিকরাই সেখানে ক্লিনিক বা ব্যবসা খুলতে পারেন। জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে নিহত আব্দো প্রিয়ার সঙ্গে কেরলও আসেন। অভিযোগ, প্রিয়ার বিয়ের ছবি বিকৃত করে মেহদি প্রিয়াকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেন। ইয়েমেনে ফিরে গিয়ে প্রিয়া যখন নিজের ক্লিনিক শুরু করেন, মেহদি সব টাকা-পয়সা নিয়ে নেন এবং ক্লিনিকের কাগজও পাল্টে দেন বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে দু'জনের মধ্যে ঝামেলা বাধে।
প্রিয়া অভিযযোগ করেন, তাঁকে মারধরও করেন মেহদি। পাসপোর্ট নিয়ে নেন। পুলিশকে জানালেও, মেহদির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। বরং তাঁকে ছ'দিনের জন্য জেলে রাখা হয়। এর পর, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে জেলের ওয়ার্ডেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন প্রিয়া। তাঁর ক্লিনিকের কাছেই একটি জেলে মেহদি কিছুদিন ছিলেন। মেহদিকে মাদক খাইয়ে তাঁর থেকে পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন ওয়ার্ডেন। কিন্তু মেহদির উপর মাদক কাজ করেনি। এতে তাঁকে আরও বেশি পরিমাণ মাদক দেন প্রিয়া। তাতে ওভারডোজ হয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে মেহদি মারা যান বলে জানা গিয়েছে।