![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/Premium-ad-Icon.png)
ATK Mohun Bagan: ''খেলোয়াড়দের ওপর আস্থা ছিল'', চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কী বলছেন এটিকে মোহনবাগান কোচ?
ISL 2023: একটু দেরিই হল সবুজ-মেরুন শিবিরের স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দোর। এত হইহুল্লোড়, নাচানাচি, আনন্দের পরেও একটুও উত্তেজিত নন তিনি। বরাবরের মতোই স্বাভাবিক।
![ATK Mohun Bagan: ''খেলোয়াড়দের ওপর আস্থা ছিল'', চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কী বলছেন এটিকে মোহনবাগান কোচ? this trophy is for our players result of keeping faith on the team juan ferrando ATK Mohun Bagan: ''খেলোয়াড়দের ওপর আস্থা ছিল'', চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কী বলছেন এটিকে মোহনবাগান কোচ?](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2023/03/19/e93a762905c738811e25281cb0de43a01679232126482206_original.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
কলকাতা: রুদ্ধশ্বাস হিরো আইএসএল ফাইনালে অসাধারণ জয়ের পর মাঠে শ্যাম্পেনের বদলে জলেই স্নান করিয়ে দিলেন সবাই সবাইকে। চ্যাম্পিয়ন এটিকে মোহনবাগানের শ্যাম্পেন-সেলিব্রেশন পর্ব হল ড্রেসিংরুমে ফিরে। সে সব সেরে সাংবাদিক বৈঠকে আসতে একটু দেরিই হল সবুজ-মেরুন শিবিরের স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দোর। এত হইহুল্লোড়, নাচানাচি, আনন্দের পরেও একটুও উত্তেজিত নন তিনি। বরাবরের মতোই স্বাভাবিক।
হিরো আইএসএল যাত্রা শুরু করেছিলেন যেখানে, সেই গোয়ার মাঠে ট্রফি জিতে উচ্ছ্বাসের চেয়ে তৃপ্তিই বেশি তাঁর অভিব্যক্তিতে। কথাতেও সেই তৃপ্তির ছাপ স্পষ্ট। বললেন, “গোয়ায় এসে ট্রফি জিততে পেরে খুবই ভাল লাগছে। এখানে একটা বছর খুব ভাল কাটিয়েছি। কয়েকজন ভাল বন্ধুও এখানে রয়েছে আমার। কয়েকজন মানুষের সঙ্গে সমস্যা হয়েছিল ঠিকই। সে সব ভুলে গিয়েছি। এই ক্লাব (এটিকে মোহনবাগান) আমার কাজের ওপর আস্থা রেখেছে বলে আমি খুশি। এখানে কাজ করতে এসে উপভোগ করছি। ক্লাবের কর্তারাও খুব ভাল। গোয়ায় অনেকেই হোটেলে এসে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গিয়েছে। তাতে আরও খুশি হয়েছি”।
শনিবার রাতে হিরো আইএসএলের খেতাবী লড়াইয়ে ১২০ মিনিট পর্যন্ত ফল ২-২ থাকার পরে ম্যাচ পেনাল্টি শুট আউটে গড়ায়। দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, লিস্টন কোলাসো, কিয়ান নাসিরি ও মনবীর সিং তাঁদের দায়িত্বে সফল হওয়ার পর তাঁদের গোলকিপার গোল্ডেন গ্লাভজয়ী বিশাল কয়েথ বেঙ্গালুরুর ব্রুনো সিলভার শট আটকে দলের জয়ের অর্ধেক পূর্ণ করে ফেলেন। কিন্তু সুনীল ছেত্রীর দলের মিডফিল্ডার পাবলো পেরেজ বারের ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে দিতেই হিরো আইএসএল ট্রফিতে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের নাম লেখা হয়ে যায়।
‘খুব কঠিন কাজ ছিল’
শনিবারের এই অসাধারণ জয় নিয়ে ফেরান্দোর বক্তব্য, “খুবই কঠিন ছিল কাজটা। ১-১, ১-২ হয়ে যাওয়ার পর আরও কঠিন হয়ে পড়ে। আসলে চোট-আঘাতের সমস্যা তো এড়ানো যায় না। আর হঠাৎ কারও চোট হয়ে গেলে কৌশল, পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হয় এবং সেটা মাঠে কার্যকর করতেও হয়। তবে আমাদের ছেলেরা শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়াই করেছে, জেতার চেষ্টা করেছে। এই ট্রফি খেলোয়াড়দের জন্য। সবাই দলের ওপর আস্থা রেখেছে, প্রত্যেকে নিজের সেরাটা দিয়েছে। সে জন্যই ট্রফি জিততে পেরেছি আমরা”।
ফাইনালে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে দুই দলের চারটি গোলের তিনটিই আসে পেনাল্টি থেকে। ১৪ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মিনিটে পেনাল্টি থেকেই গোল শোধ করেন সুনীল ছেত্রী। ৭৮ মিনিটে কর্নারে হেড করে দলকে এগিয়ে দেন প্রাক্তন সবুজ-মেরুন তারকা রয় কৃষ্ণা। কিন্তু ৮৫ মিনিটের মাথায় ফের পেনাল্টি পায় এটিকে মোহনবাগান ও তা থেকে ফের সমতা আনেন পেট্রাটস। এর পরেও জয়সূচক গোলের একাধিক সুযোগ পেয়েছিল তারা। কিন্তু কোনওটিই কাজে লাগাতে পারেনি। দলে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন করেন ফেরান্দো, যেগুলো দেখে অনেকে অবাক হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু প্রয়োজনেই এগুলো করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
‘ম্যাচের মধ্যেই কৌশল, পরিকল্পনায় বদল’
এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের স্প্যানিশ কোচ বলেন, “আমরা একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিলাম। কিন্তু খেলার মাঝখানে দেখা গেল তিনজন ফুটবলারের শারীরিক সমস্যা হচ্ছে। তাই খুব কম সময়ের মধ্যে পরিকল্পনা বদলে ফেলতে হয় আমাদের। প্রীতমকে সেন্টার ব্যাকের জায়গা থেকে লেফট ব্যাকের জায়গায় যেতে হয়। আবার ওকে সেন্টার ব্যাকের জায়গায় ফিরে আসতে হয়। অনেক কঠিন সময় এসেছে, গেছে। কিন্তু ছেলেরা ঠিক করেছিল লড়ে যাবে। সেটাই করেছে তারা। শুধু আজ নয়, সারা মরশুমেই ওরা লড়াই করেছে। অনেক কঠিন সময়ের মোকাবিলা করেছে। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচে, জামশেদপুরের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচেই। কঠিন সময়ে চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে ওরা। ফুটবলে যেটা খুবই জরুরি। মোটিভেশন বজায় রেখেছে”।
ম্যাচের মাঝখানে সমস্যা চলে আসায় বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি হননি কোচ। মাথা ঠাণ্ডা রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বলেন, “১-২-এ পিছিয়ে যাওয়ার পর আমাদের লক্ষ্য ছিল ম্যাচটাকে অতিরিক্ত সময়ে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া। পরিকল্পনা, সিস্টেম বদল করি। খেলোয়াড় পরিবর্তন করি। সেই সময়েই দ্বিতীয় পেনাল্টিটা পাই। তার পরে জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যাই। এগুলো ফুটবলের অঙ্গ। আমাদের প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা যথেষ্ট অভিজ্ঞ, গুরপ্রীত, ছেত্রী, রোহিত। ওরা ডুরান্ড কাপও জিতেছে। দ্বিতীয় লেগেও ওরা অসধারণ খেলেছে। পরপর ম্যাচ জিতেছে। আমরা বরং অনেক চাড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে এসেছি। তবে খুঁটিনাটি ব্যাপারে পরিবর্তন করেছি অনেক। তবে এই প্রক্রিয়ার ওপর খেলোয়াড়দের আস্থা থাকা খুবই জরুরি ছিল। ওরা সেটা রেখেছে”।
বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে খেতাবজয় যে বেশ কঠিন ছিল, তা জানিয়ে কোচ বলেন, “বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে খেলতে নামলে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হল সেকেন্ড বল নিয়ন্ত্রণ করা। বেঙ্গালুরুর সেকেন্ড বল নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা ও দক্ষতা যথেষ্ট। ওদের বিরুদ্ধে সেকেন্ড বল ছিনিয়ে নিতে না পারলে ওরা দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাকে উঠত আর আমাদের ডিফেন্ডারদের প্রচণ্ড চাপে ফেলে দিত। তবে আমরা সেটা করেছি। বল পায়েও রাখতে পেরেছি। জায়গা তৈরি করতে পেরেছি। ওদের পরিবর্ত খেলোয়াড়রাও প্রথম দলের খেলোয়াড়দের মতোই দক্ষ। তাই ওদের মতো দলের বিরুদ্ধে খেলা কঠিন। প্রচুর অনুশীলনের প্রয়োজন হয়। সোমবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালের পর আমরা বড়জোর তিনদিন অনুশীলন করতে পেরেছি। তবে শেষ পর্যন্ত যে সফল হয়েছি, এটাই দারুন ব্যাপার”।
‘বাইরের সমালোচনায় কান দিই না’
মরশুমের মাঝখানে দলের দুঃসময়ে তাঁকে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে। তবে কোনও কিছুতেই চাপে পড়েননি বলে জানান এটিকে মোহনবাগান কোচ। তিনি বলেন, “কোনও কিছুতে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাওয়া আমার অভ্যাস নয়। আমাদের দলের ভিতর কী হচ্ছে, ড্রেসিংরুমের অবস্থা কেমন, সেসব কেউই জানে না। খেলোয়াড়দের আবেগ, তাদের সমস্যার কথা কেউই জানে না। কারও বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। কারও দাদু মারা গিয়েছে। এই অবস্থায় মোটিভেশন ফিরিয়ে আনা খুবই কঠিন। ওরাও তো মানুষ। ওরাও ক্লান্ত হয় মাঝে মাঝে। যারা সমালোচনা করেন, তাঁরা তো বাড়িতে বসে টিভিতে খেলা দেখেন। দলের খবর তাদের কাছে তো পৌঁছয়ই না। তাই এ সব সমালোচনা আমাকে কখনও প্রভাবিত করতে পারেনি। আমার কাছে আমার খেলোয়াড়রাই সব। আসলে সবাই চায় সব ম্যাচে আমরা জিতি। কিন্তু এটা তো একটা প্রক্রিয়া। সব সময় সেটা সম্ভব নয়”।
চাপ যে পেশাদার ফুটবলের অঙ্গ, তা খুব ভাল করেই জানেন ফেরান্দো। তাই এ সব নিয়ে বেশি ভাবেন না তিনি, “খেলোয়াড়রা যদি উন্নতি না করে, ওরা যদি আমার নির্দেশ বুঝতে না পারে, তা হলে চাপটা বাড়ে। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যাপারগুলো তো আমার হাতে নয়। বরাবরই বলে আসছি, যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমার হাতে আছে, যেমন কৌশল, পরিকল্পনা, অনুশীলন, দলের ছেলেদের আবেগ এগুলো আমার চাপের কারণ হয়ে উঠতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কে কী লিখল, তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি ওগুলো দেখিনা। কিন্তু অনেকে আমাকে এসে বলে, কে কী মন্তব্য করেছে। আর আমি কাউকে কোনও জবাবও দিইনি। আমি আমার খেলোয়াড়দের সমস্যা নিয়ে ভেবে শক্তিক্ষয় করতে রাজি আছি, বাইরের কারও কথা ভেবে না। আজকে যারা আমাকে আক্রমণ করছে, কাল তারা লিভারপুল, ক্লপ এদের আক্রমণ করবে, রাজনীতি নিয়েও মন্তব্য করবে। এসব আমি দেখি না”।
এ বার লক্ষ্য সুপার কাপ জয়। তা হলে এএফসি কাপে অংশ নিতে পারবে তাঁর দল। এই প্রসঙ্গে ফেরান্দো বলেন, “সুপার কাপেও জেতাই লক্ষ্য থাকবে। কারণ, এই ক্লাব কোথাও খেলতে গেলে একটাই লক্ষ্য থাকে, সাফল্য পাওয়া। আমারও তাই। সে জন্যই আমাকে আনা হয়েছে এই ক্লাবে। এর পরে আমরা যখন ড্রেসিং রুমে, মাঠে ফিরে যাব, তখন আমাদের আলোচনার বিষয় একটাই হবে, সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সে জন্য আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে”।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে কী ভাবে এই সাফল্য উদযাপন করবেন, তাও ভেবে রাখেননি কোচ। শুধু বললেন, “এর পরে কী করব জানি না। কলকাতায় ফিরব। কী সেলিব্রেশন হবে জানি না। এখন হোটেলে ফিরে স্নান করব। তার পরে ঘুমোতে চাই”।
‘কোচের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি’
দলের অধিনায়ক প্রীতম কোটাল বলেন, “পুরোটাই আত্মবিশ্বাস। ১-২ হয়ে যাওয়ার পরেও নিজেদের ওপর বিশ্বাস ছিল যে, আমরা ম্যাচে ফিরতে পারব। দলের সবার সমান কৃতিত্ব রয়েছে এই সাফল্যে। অধিনায়ক হিসেবে এটিকে মোহনবাগানের হয়ে এটা প্রথম আইএসএল ট্রফি জয় আমার। সে জন্য আরও ভাল লাগছে। দলের সবাইকে অভিনন্দন”।
গোটা দলের এই সাফল্যে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনা করার মেজাজে ছিলেন না দলনেতা। শনিবার বিভিন্ন পরিস্থিতিতে একাধিকবার জায়গা বদল করে খেলতে হয় তাঁকে। এই নিয়ে প্রশ্ন করতে শুধু বললেন, “নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে এখন ভাবছি না। কোচ যদি সিস্টেম, পরিকল্পনা বদলে খেলার সিদ্ধান্ত নেন, আমাদের তা পালন করতেই হবে। ম্যাচের মধ্যে যখন কয়েকজনের চোট লাগল, তখন আমাকে উনি যখন আমাকে বললেন লেফট ব্যাকের জায়গায় গিয়ে খেলতে, তখন আমি তাঁর নির্দেশ পালন করেছি। ১২০ মিনিট লড়াই করার পর জেতাটা মোটেই সহজ কাজ নয়। বেঙ্গালুরু খুবই ভাল দল। সেটা আজকের ম্যাচেই প্রমাণ করেছে ওরা। আমরা এগিয়ে যাওয়ার পরেও ওরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ওদের দলে খুব ভাল ভাল ফুটবলার আছে। ওদের রক্ষণও খুব শক্তিশালী। আমরা একসঙ্গে ওদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি বলেই জিততে পেরেছি। তাই এই জয়টা সত্যিই অসাধারণ”।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)