Balurghat News: দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে ওঠা, ভাবা পরমাণু কেন্দ্রে গবেষণার সুযোগ পেলেন বালুরঘাটের তরুণ
Dakshin Dinajpur News: দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের ঘটনা। সেখানকার চকভৃগু গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন আখিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৌস্তুভ ঘোষ।
মুন্না আগরওয়াল, বালুরঘাট: একেবারে দিন আনি দিন খাই না হলেও, কোনও রকমে উতরে যায় সংসার। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে তাই ছেলেমেয়েকে 'মানুষ' করার তাগিদ থাকে বরাবরই। সেই তাগিদ থেকেই অসাধ্য সাধন করল বালুরঘাটের এক পরিবার। সামান্য রোজগার থেকে ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করেছিলেন এক দম্পতি। সেই শিক্ষাকে যথার্থই কাজে লাগালেন ছেলে। সুযোগ পেলেন দেশের পরমাণু শক্তি নিয়ে গবেষণা করার।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের ঘটনা। সেখানকার চকভৃগু গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন আখিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৌস্তুভ ঘোষ। ছোট থেকেই দারিদ্র্য দেখেছেন কৌস্তুভ। টেনেটুনে সংসার চালাতে দেখেছেন মা-বাাবাকে। কিন্তু কষ্ট করে সংসার চালালেও, তাঁর পড়াশোনায় ছেদ পড়তে দেননি মা-বাবা। সকলের সেই সম্মিলিত লড়াই-ই কৌস্তুভকে পৌঁছে দিল তাঁর লক্ষ্যে।
কৌস্তুভের বাবা অসিত ঘোষ শিলিগুড়িতে একটি ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টারে রক্ষীর কাজ করেন। মা রমুদেবী গৃহবধূ। স্বামীর সামান্য রোজগার থেকে সংসার যেমন চালিয়ে গিয়েছেন, তেমনই একনাগাড়ে উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন ছেলেকে। আগুপিছু না ভেবে সাধ্য মতো সবটুকু দিয়ে গিয়েছেন অসিতবাবুও। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর এবার হাসি ফুটল তাঁদের মুখে।
অভাবের সংসারে থেকেও পড়াশোনার প্রতি বরাবরই ঝোঁক ছিল কৌস্তুভের। বালুরঘাট হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। এর পর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগে স্নাতক হন। স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনাা শেষ করেন গুয়াহাটি থেকে। এবার ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে কাজের সুযোগ পেলেন কৌস্তুভ।
গত ১ জুন ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন কৌস্তুভ। গোটা দেশ থেকে ইন্টারভিউয়ে বসার সুযোগ পান ২৭৭ জন। শেষ মেশ নির্বাচিত হন ২১, সেই ২১ জনের মধ্যেই নাম রয়েছে কৌস্তুভ। গত ১৩ জুলাই নিয়োগপত্র হাতে পান কৌস্তুভ। পারমাণবিক গবেষণাতেই বারবর আগ্রহ কৌস্তুভের, সেই নিয়ে কাজও করেছেন। ভাবা-য় তাঁকে 'সায়েন্টিফিক অফিসার' হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
আগামী একবছর ধরে কৌস্তুভের প্রশিক্ষণ চলবে। তার জন্য তামিলনাড়ু যেতে হবে তাঁকে। প্রশিক্ষণ চলাকালীন মাসিক ৫৫ হাজার টাকা বৃত্তি পাবেন। আগামী ৭ অগাস্ট তামিলনাড়ুর চেঙ্গেলপট্টু জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগ দিতে বলা হয়েছে। সেই মতো রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৌস্তুভ।
ছেলের সাফল্য গর্ববোধ করছেন বাবা অসিত। মায়ের বক্তব্য, "ওর বাবার সামান্য আয়। অধ্যাবসায়ের জোরেই এই জায়গায় পৌঁছেছে। বিজ্ঞানী হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে আশা করি।" দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে উঠে আসা পরিবারের খুশিতে শামিল হয়েছেন গ্রামবাসীরাও। ভবিষ্যতের জন্য কৌস্তুভকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সকলে।