Child Labour School: বন্ধ হতে বসেছে ৩৪টি শিশু শ্রমিক বিদ্যালয়, পরস্পরকে দোষারোপ তৃণমূল-বিজেপি-র
Paschim Medinipur: দেশে শিশুশ্রম রোধে ১৯৯৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার প্রজেক্টের (National Child Labour Project) আওতায় রাজ্যজুড়ে চালু করা হয় শিশু শ্রমিক বিদ্যালয়।
সৌমেন চক্রবর্তী, পশ্চিম মেদিনীপুর: পশ্চিম মেদিনীপুর (Paschim Medinipur) জেলায় বন্ধ হতে বসেছে ৩৪টি শিশু শ্রমিক বিদ্যালয়। শিক্ষকদের বেতন এবং পড়ুয়াদের ভাতা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ বলে অভিযোগ। প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রের জাতীয় শিশুশ্রম (Child Labour) প্রকল্প। এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
বন্ধ হতে বসেছে ৩৪টি শিশু শ্রমিক বিদ্যালয়
ওরা কাজ করে ইটভাটায়, নির্মাণ প্রকল্পে। কেউ মাথায় করে ইট বয়, কেউ আবার দিবারাত্র খেটে চলে রাস্তার ধারে হোটেল বা চায়ের দোকানে। যে বয়সে হাতে বই, খাতা, পেন, পেনসিল থাকার কথা, সেই বয়সে ওরা সংসারের হাল ধরে। ওদের পরিচয় শিশু শ্রমিক।
দেশে শিশুশ্রম রোধে ১৯৯৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার প্রজেক্টের (National Child Labour Project) আওতায় রাজ্যজুড়ে চালু করা হয় শিশু শ্রমিক বিদ্যালয়। এখানে বিনামূল্যে পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি মাসে ৭০০-৮০০ টাকা ভাতা দেওয়া হত পড়ুয়াদের। শিক্ষকদের বেতন ছিল মাসিক ৭ হাজার টাকা।
করোনাকালে গোটা দেশেই এই শিশু শ্রমিকদের সংখ্যা বেড়েছে বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। অনেকেরই স্কুলমুখো হতে অনীহা দেখা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ছবিটা যথেষ্ট উদ্বেগের।
অভিযোগ, জেলার ৩৪টি শিশু শ্রমিক বিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার মুখে। বছর তিনেক ধরে বন্ধ পড়ুয়াদের ভাতা। দেড়বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না শিক্ষকরা। হস্টেলের হালই বলে দেয়, বেশ কয়েকমাস হঅব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, যেহেতু ৩ বছর ধরে স্টাইপেন্ড বন্ধ তাই উৎসাহ হারাচ্ছে পড়ুয়ারা।
আরও পড়ুন: Biman Bose: বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান থাকছেন বিমানই, রাজি করানো গেল তাঁকে
ঝাড়বনি এনসিএলপি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজিতকুমার দত্ত বলেন, "বাবা-মা পয়সার জন্য ছোট থেকে কাজে ঢোকান। যখন মনে হয় ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করলে মাসে মাসে ঘরে টাকা আসবে,পাঠান। এখন স্টাইপেন্ড ইরেগুলার তাই স্কুলে আসছে না।
গোকুলপুর শিশু শ্রমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অশোক জানা বলেন, "১৮ মাসের টাকা বাকি রয়েছে। নিজেরাই কীভাবে সংসার চলবে, কী খাব বুঝতে পারছি না। এই বয়সে আমরা কোথায় যাব?"এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়কেই কাঠগড়ায় তুলেছে বামেরা। পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএম-এর জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ বলেন, "গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাটা ভেঙে চুরমার করে দিতে পারলে,মানুষ অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবে থাকলে ওদের কাজ করার সুবিধা হবে।"
এই ঘটনায় তৃণমূল এবং বিজেপি একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছে। বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি শমিত কুমার দাস বলেন, "কেন্দ্র সবাইকে সব রকম সহায়তা করতে প্রস্তুত। কিন্তু রাজ্য সরকার যেখানে কাটমানি নেই, সেই সমস্ত সহায়তা নিতে প্রস্তুত নয়।"
এর পাল্টা জেলার তৃণমূল চেয়ারম্যান অজিত মাইতি বলেন, "নরেন্দ্র মোদি যেদিন থেকে দেশে ক্ষমতায় এসেছেন, সেদিন থেকে শ্রমিকদের ওপর আঘাত হচ্ছে। শ্রমিকরা এই সরকারের আওতায় আসে না।" বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
তৃণমূল এবং বিজেপি-র পরস্পরকে দোষারোপ
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক আয়েশা রানি বলেন, কী কারণে কোথায় টাকা আটকে আছে, সোসাইটি অডিট হয়েছে কিনা দেখব। যেগুলো আমাদের দিক থেকে করা দরকার, করব।" অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগছে, আদৌ এই বিদ্যালয়কে বেশিদিন চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে কিনা।