Tapas Mondal Background: প্রতারণার পূর্বপাঠ: বাম আমলে চিটফান্ড ব্য়বসা, যেতে হয়েছিল শ্রীঘরেও, টাকা রোজগারে বরাবরই সিদ্ধহস্ত তাপস!
SSC Case: 'হিরে মানিক' ছবির সেই বিখ্য়াত গানের দু'কলি ছিল...'এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে/চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাব/সেই চাঁদের পাহাড় দেখতে পাব', নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার তাপসের ক্ষেত্রে লাইনগুলি যেন বড় মানানসই।
বিটন চক্রবর্তী ও সমীরণ পাল, কলকাতা: কলেজে আসতে হবে না। মোটা টাকা দিলে বাড়িতে বসেই মিলবে সার্টিফিকেট! অভিযোগ, একাধিক বিএড কলেজ (SSC Case) খুলে এমনই দুর্নীতি চক্র চালাতেন নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত মানিক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল (Tapas Mondal Background)। বাম আমলে চিটফান্ড কোম্পানি খুলেছিলেন তাপস। ওড়িশা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে কিছুদিন জেলও খাটেন।
ওড়িশা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে কিছুদিন জেলও খাটেন
'হিরে মানিক' ছবির সেই বিখ্য়াত গানের দু'কলি ছিল...'এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে/চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাব/সেই চাঁদের পাহাড় দেখতে পাব', নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার তাপসের ক্ষেত্রে লাইনগুলি যেন বড় মানানসই। প্রথমে চিটফান্ড খুলে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা, তার পর বিএড কলেজের আড়ালে দুর্নীতিচক্র এবং চাকরির নামে তোলাবাজি, তাপসের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে রয়েছে এমন সব মারাত্মক অভিযোগ।
এই প্রথম নয়, আগেও গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, আটের দশকে পাঁশকুড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে তাপস তৈরি করেছিলেন, চিটফাণ্ড সংস্থা 'মিনার্ভা ফিনান্স কোম্পানি'। অভিযোগ, ব্য়াঙ্কের থেকে বেশি হারে সুদের টোপ দিয়ে, বাজার থেকে তাপস তুলেছিলেন কোটি কোটি টাকা।
অভিযোগ, অবিভক্ত মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি এমনকf ওড়িশা পর্যন্ত প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন তাপস। তৈরি করেছিলেন, সাত জনের বোর্ড অফ ডিরেক্টরস। সোসাইটির রেজিস্ট্রেশনও করিয়েছিলেন। কিন্তু আমানতকারীদের প্রাপ্য় টাকা ফেরত না দেওয়ায় তাপসকে গ্রেফতার করেছিল ওড়িশা পুলিশ।
'মিনার্ভা ফিনান্স কোম্পানি'র প্রাক্তন কর্মী রামানুজ দাস বলেন, "ওড়িশায় গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল। মিনার্ভা ম্যাচিওরিটির টাকা দেয়নি। তাপস মণ্ডল শুরু থেকেই চিটিং। মানুষকে চিট করেছে। এখান থেকে প্রচুর টাকা তুলেছে। পাঁশকুড়া থেকে ৩-৪ কোটি টাকা। পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে হাওড়া, ওড়িশার বিভিন্ন জায়গায় মিনার্ভার কালেশন হয়েছে। প্রভাবশালী যোগাযোগ ছিল।"
সূত্রের খবর, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর, একাধিক জায়গায় বিএড কলেজ তৈরি করেন তাপস। সেখানেও দুর্নীতি চক্র চালানোর অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে,স চিটফান্ড কাণ্ডে ওড়িশা পুলিশের হাতে গ্রেফতারির পর বিএড কলেজ গড়ে তুলতে থাকেন তাপস। ১৯৯৮ সালে মিনার্ভা তৈরি হয় নদিয়ার নবদ্বীপে। প্রভাব খাটিয়ে ২০২৩ সালে সেটিকে পাঁশকুড়ায় সরিয়ে নেন তাপস। এই কলেজকে সামনে রেখেই শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি চলে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: Calcutta High Court : নিজের সন্তানকে বেসরকারি স্কুলে পাঠাচ্ছেন, কিন্তু স্কুলের পড়ুয়াদের খেয়াল রাখছেন তো ? সরকারি শিক্ষকদের প্রশ্ন বিচারপতির
সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার পাতন্দায় এই মিনার্ভা কলেজটি তৈরি করেছিলেন তাপস। আর রাসবিহারী বিএড কলেজ নামে এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক খাতায় কলমে তাপসের ভাইয়ের শ্বশুরের। কী ভাবে চলত এই দুর্নীতি! সূত্রের খবর, মোটা অঙ্কের বিনিময়ে ত্রিপুরা-সহ ভিন্ রাজ্যের পড়ুয়াদের এই কলেজে ভর্তি করা হতো। সশরীরে কলেজে আসেত হতো না কাউকে। বিএড ক্লাসেও উপস্থিত থাকতে হতো না। পরীক্ষার সময় সেই সব পড়ুয়াদের জায়গায় পরীক্ষায় বসানো হত স্থানীয় একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ছেলেমেয়েরা। প্রক্সি দেওয়ার বিনিময়ে সামান্য় টাকা দেওয়া হতো তাঁদের।
মিনার্ভা বিএড কলেজের প্রাক্তন ম্যানেজার অমর দাস বলেন, "শিকড় পর্যন্ত চোর। ২০১১-র পর থেকে বেড়েছে। বাবার নামে চিটিংবাজি। ত্রিপুরা থেকে পড়য়া ভর্তি। যারা টিউশন পড়তে যায়, তাদের পরীক্ষায় বসিয়ে দিত। বলত, আসতে হবে না। আমি কলেজে পড়ি, যারা পরীক্ষা দিয়ে দিল, হাজার টাকা করে দিয়ে দেওয়া হতো তাদের। একাদশ-দ্বাদশের ছেলেদের দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ানো হতো। তিনটি পরীক্ষায় হাজার টাকা। রেজাল্ট বেরিয়ে যেত। ডিআই এরাও জড়িত। এক বছরে ২-৩ কোটির জায়গা কিনেছে।"
অথচ প্রতারণার ফাঁদ পেতে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছিলেন যিনি, সেই তাপসের অফিসের কর্মীরাই নাকি বেতন পেতেন না, এমনই অভিযোগ করেছেন মিনার্ভা বিএড কলেজের প্রাক্তন ম্য়ানেজার। পাঁশকুড়াতেই প্রাসাদোপম পেল্লাই বাড়ি তাপস মণ্ডলের ভাই বিভাসের।
এই বিপুল সম্পত্তি নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। বাড়িতে গিয়ে বিভাসের খোঁজ মেলেনি যদিও। অমরের বক্তব্য, "কলেজের টাকায় বাড়ি। টাকায় তো নাম লেখা নেই! তাপস মণ্ডলের টাকা, তাঁর ভাইয়ের টাকা। আপনাকে বুঝে নিতে হবে।"
প্রতারণার ফাঁদ পেতে কোটি কোটি টাকার মালিক তাপস!
শুধু পাঁশকুড়াই নয়, মহিষবাথানে মিনার্ভা এডুকেশনাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নামে অফিস ভাড়া নিয়ে টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার চালাতেন তাপস, এমন অভিযোগও সামনে এসেছে। সেই অফিসের কর্মচারী ছিলেন, কামদুনিকাণ্ডের প্রতিবাদী মৌসুমী কয়াল। সিবিআই অভিযানের পর থেকেই বন্ধ রয়েছে ওই টিচার ট্রেনিং কলেজ।