TMC Delhi Protests: বকেয়ার অঙ্ক নিয়ে তরজা, বাগযুদ্ধ-কটাক্ষের বৃষ্টি, মঙ্গলে তপ্ত রইল দিল্লি
Abhishek vs Suvendu: কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে দিল্লিতে তৃণমূলের ধর্না কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন ছিল মঙ্গলবার।
রাজীব চৌধুরী, অনির্বাণ বাগচী ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়: বকেয়া আদায়ের দাবিতে তৃণমূলের ধর্না ঘিরে দিল্লিতে তুলকালাম। বঞ্চনা বনাম দুর্নীতির লড়াইয়ে যুযুধান তৃণমূল (TMC) এবং বিজেপি (BJP)। প্রয়োজনে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের বেতনের টাকা দিয়ে, দিল্লি যাওয়া ২.৫ হাজার ভুক্তভোগীদের বকেয়া মেটাবেন, যন্তরমন্তরের ধর্না থেকে আশ্বাস অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee)। শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) অভিযোগ, ভুয়ো জব কার্ডের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা সাইফন করেছে তৃণমূল।
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে দিল্লিতে তৃণমূলের ধর্না কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন ছিল মঙ্গলবার। দলের নেতা, কর্মী এবং সমর্থকদের সঙ্গে দিল্লির যন্তরমন্তরে ধর্নায় বসেন অভিষেক। তার পর বিকেলে রওনা দেন কৃষিভবনের উদ্দেশে। অন্য দিকে, দুপুরে দিল্লিতে বিজেপি-র সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে যান শুভেন্দু। তৃণমূল যে দুর্নীতি করেছে, স্বাধীনতার পর এত বড় দুর্নীতির নজির নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
১০০ দিনের কাজ, আবাস এবং সড়ক যোজনার টাকা আটকে রেখে বিজেপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। পাল্টা বিজেপি-র যুক্তি, তৃণমূল দুর্নীতি করেছে, কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলেই, চুরি রুখতে টাকা আটকানো হয়েছে। সেই নিয়ে অভিষেক বলেন, "আজকে বলছে বাংলায় দুর্নীতি হয়েছে। দু'বছর ধরে টাকা বন্ধ। দু'বছর মানে ২৪ মাস। কেন বিজেপি-র পঞ্চায়েত প্রধানরা কেউ থানায় এফআইআর করেননি?"
এর পাল্টা শুভেন্দু বলেন, "কেন্দ্র টাকা জোগায়। এফআইআর করার দায় রাজ্য সরকারের। টাকা উদ্ধার করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাদের চিঠিও দেয় কেন্দ্র। ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী, এফআইআর করার ক্ষমতা রাজ্যেরই।" কেন্দ্র আবাসের টাকা আটকে রাখাতেই দেওয়াল চাপা পড়ে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য গিরিরাজ সিংহকে গ্রেফতার করা উচিত বলে দাবি তোলেন অভিষেক। এর পাল্টা শুভেন্দুর বক্তব্য, "উনি ওই স্বপ্ন নিয়েই থাকুন। বাচ্চা ছেলে নেতা হয়েছে। ওঁর জন্মের আগে থেকে রাজনীতি করছেন গিরিরাড সিংহ। ওঁর পিসি, যিনি ১৯৮৪-এ শুরু করেছেন, তাঁরও আগে থেকে...।"
দিল্লির বুকে দাঁড়িয়ে নিজেদের বেতন থেকে বঞ্চিত মানুষদের টাকা মেটানোর প্রতিশ্রুতিও দেন অভিষেক। ঘোষণা করেন, "নিজেদের বেতন থেকে ২৫০০ জব কার্ড হোল্ডারদের বেতন মেটাব। কেন্দ্র টাকা না দিলে ২৫০০ জব কার্ড হোল্ডারের প্রাপ্য টাকা, বাংলার জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের বেতন থেকে মেটাবেন। দু'মাসের মধ্যে এই ব্যবস্থা করবেন বাংলার ৭০ হাজার জনপ্রতিনিধি। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি...।"
এর পাল্টা ভুয়ো জব কার্ডের তত্ত্ব তুলে ধরেন শুভেন্দু। বলেন, "বাংলায় ৩ কোটি ৮৮ লক্ষ জব কার্ড ইস্যু করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১ কোটি ৩২ লক্ষ ৭৩ হাজার ২৫টি জব কার্ড ভুয়ো বেরিয়েছে। যুক্তিগ্রাহ্য কারণে বাতিল হয়েছে ২৩ লক্ষ ৫০ হাজার জব কার্ড। বাকি ভুয়ো কার্ডের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা তোলা হয়েছে।"
যদিও তৃণমূল বনাম বিজেপি-র এই দ্বন্দ্ব নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা মনোজ চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, "নকল খেলা না করে, কেন্দ্রীয় সরকার শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক। বলুক, এই এই জায়গায় জুরি হয়েছে। নির্দিষ্ট করে জনগণের সামনে তুলে ধরা হোক। যেভাবেই হোক, আটকাতে হবে। এতদিন হয়নিই বা কেন? এখন ভোটের মুখে রাম নাম সত্য হ্যায়! এসব করে লাভ নেই।"
সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, "পশ্চিমবঙ্গে লুঠের পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই লুঠের ভাণ্ডার কার হাতে থাকবে, সেই নিয়ে লড়াই। তৃণমূলের নিজের মধ্যেও সেই নিয়ে লড়াই, তৃণমূল-বিজেপি-র লড়াইও তাই। রাজনীতিতে লড়াইয়ে এই সবটাকে ঠেলে দিয়ে মানুষকে ব্রাত্য করার প্রচেষ্টা দিল্লিওয়ালাদেরও আছে, রাজ্যওয়ালাদেরও আছে।"
সব মিলিয়ে মঙ্গলবার দিনভর উত্তপ্ত রইল দিল্লি। শুধু বাগযুদ্ধই নয়, কৃষিভবনে অবস্থানে বসে তৃণমূল। সেখান থেকে তাঁদের পাঁজকোলা করে, টেনি-হিঁচড়ে বার করে নিয়ে যায় দিল্লি পুলিশ। বেশ কিছু ক্ষণ পর পুলিশ লাইন থেকে ছাড়া পান অভিষেক-সহ তৃণমূল নেতারা। শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা করলেও, বাংলার বঞ্চিতদের সঙ্গে দেখা না করে গিরিরাজ পালিয়ে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন অভিষেক।