Chandrayaan 3: পৌঁছয় না সূর্যের আলো, চিরকালের মতো হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, চাঁদের বিপজ্জনক দক্ষিণ মেরুতেই অবতরণ করবে ‘চন্দ্রযান-৩’
Moon Mission: এই প্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ হতে চলেছে কোনও মহাকাশযানের।
নয়াদিল্লি: দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। চাঁদের উদ্দেশে রওনা দিল ভারতের ‘চন্দ্রযান-৩’। শুক্রবার দুপুর ২টো বেজে ৩৫ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে সফল উৎক্ষেপণ হয় ‘চন্দ্রযান-৩’-র। এর আগে, ২০১৯ সালে ‘চন্দ্রযান-২’ অভিযান সফল হয়নি। পালক মাটি ছোঁয়ার মতো করে চাঁদের মাটিতে অবতরণ হয়নি ‘চন্দ্রযান-২’-র। সেই থেকে শিক্ষা নিয়েই ‘চন্দ্রযান-৩’ অভিযান ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ISRO-র।
চাঁদের উদ্দেশে এই নিয়ে তৃতীয় অভিযান ISRO-র। চাঁদের মাটি ছুঁতে একমাসের বেশি সময় লাগবে ‘চন্দ্রযান-৩’-র। আগামী ২৩ অগাস্ট সেটি চাঁদের মাটি ছোঁবে বলে জানা গিয়েছে। অবতরণ সফল হলে চাঁদের বুকে এক চন্দ্রদিবস কার্য পরিচালনা করবে ‘চন্দ্রযান-৩’। এক চন্দ্রদিবস পৃথিবীর হিসেবে প্রায় ১৪ দিন। তবে ভারতের এই চন্দ্রাভিযন যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ, তা হল, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে ‘চন্দ্রযান-৩’।
এই প্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ হতে চলেছে কোনও মহাকাশযানের। ৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশ ঘেঁষে অবতরণ করবে ‘চন্দ্রযান-৩’। এর আগে যত মহাকাশযান চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে, সবক’টিই মোটামুটি চাঁদের বিষুবরেখার উত্তর বা দক্ষিণ অক্ষাংশের কয়েক ডিগ্রি এদিক-ওদিক করে অবতরণ করেছে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র ‘সারভেয়র-৭’ ১৯৬৮ সালের ১০ জানুয়ারি প্রায় ৪০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ ঘেঁষে অবতরণ করেছিল। সেই মাপকাঠি ছাপিয়ে আরও দক্ষিণে অবতরণের লক্ষ্য রয়েছে ‘চন্দ্রযান-৩’-র।
এর আগে কোনও মহাকাশযান চাঁদের দক্ষিণ মেরু ছোঁয়ার সাহস দেখায়নি কেন, তা নিয়ে নানা ব্যাখ্যাও রয়েছে। মোটামুটি ভাবে এ যাবৎ সব মহাকাশযানই নিরক্ষীয় অঞ্চলের মধ্যে অবতরণ করেছে। চিনের ‘চাঙ্গি-৪’ ৪৫ ডিগ্রি অক্ষাংশ ঘেঁষে অবতরণ করে, তবে চাঁদের যেদিক পৃথিবীর মুখোমুখি, সেই দিকে নয়, পিছনের অংশে। চাঁদের নিরক্ষীয় অঞ্চল অবতরণের জন্য নিরাপদ বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। সেখানকার ভূমি এবং আবহাওয়া অবতরণের জন্য অনুকুল। দীর্ঘ দিন সেই পরিবেশে কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। সমতল ভূমি মূলত মসৃণ, ঢিবি বা টিলা নেই। পাহাড়-পর্বত, গহ্বরের সংখ্যাও তুলনামূলক কম। সূর্যের আলোরও অভাব নেই। ফলে সৌরশক্তির সাহায্যে কর্মক্ষমতা অক্ষুণ্ণ থাকে মহাকাশযানের যন্ত্রাংশের।
সেই তুলনায় চাঁদের মেরুপ্রদেশের পরিবেশ সম্পূর্ণ বিপরীত। বন্ধুর, এবড়ো-খেবড়ো ভূমিতে মহাকাশযান এগোতেই পারে না। মেরু অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকাই সম্পূর্ণ অন্ধকার। সূর্যের আলো পৌঁছয়ই না। চাঁদের কিছু অংশে সূর্যের আলো না পৌঁছনোরও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। বিজ্ঞানীদের নমতে, পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর কিছুটা হেলে রয়েছে, ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে। সেই নিরিখে চাঁদ হেলে রয়েছে ১.৫ ডিগ্রি কোণে।এর ফলে চাঁদের মাটিতে থাকা গভীপ গহ্বরগুলিতে সূর্যের আলো পৌঁছয় না। সেগুলিকে চিরকালীন আঁধার অঞ্চলও বলা হয়। এর ফলে ওই সমস্ত অঞ্চলে তাপমাত্রা -২৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যায়। একে অন্ধকার, তার উপর ঠান্ডা, মহাকশযানের যন্ত্রাংশগুলি অচল হয়ে পড়ে। এর পাশাপাশি বৃহদাকার গহ্বর রয়েছে চাঁদের মেরু অঞ্চলে। কোনওওটি কয়েক সেন্টিমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত, কিছু আবার কয়েক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত।
এত প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও চাঁদের দক্ষিণ মেরুকেই অবতরণের জন্য বেছে নিয়েছে ISRO. এর কারণ হল, এখনও পর্যন্ত চাঁদের ওই অংশ অনাবিষ্কৃতই থেকে গিয়েছে। কিন্তু চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলা একাধিক মহাকাশযান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে, বৃহদাকার গহ্বর গুলিতে বরফ রয়েছে। ২০০৮ সালের ভারতের 'চন্দ্রযান-১'-ও তেমনই ইঙ্গিত দেয়। চাঁদের মাটিতে জলের অস্তিত্বের জানান দেয় সেটি। চাঁদের দক্ষিণ অংশ যেহেতু অত্যন্ত ঠান্ডা, তাই কোনও পাথর থেকে মাটি এবং প্রাকৃতিক উপাদানগুলি সেখানে হিমায়িত অবস্থায় রয়েছে বলেই ধারণা বিজ্ঞানীদের। অর্থাৎ ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে তেমন কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। তা থেকে সৌরজগৎ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে বলে আশাবাদী ISRO.