Lakshya Sen Exclusive: ''চোখের সামনে তেরঙ্গা, কানে জাতীয় সঙ্গীত, এই স্বপ্নই দেখতে বলেছিলাম লক্ষ্যকে''
Lakshya Sen Father Exclusive:কোনও শর্টকার্ট হবে না। তরুণ লক্ষ্যের ছোট্ট কেরিয়ারে এখনই যা সাফল্য এসেছে, তার নেপথ্যে রয়েছে বাবা ডি কে সেনের নিষ্ঠা ও সাধনাও।
ব্যাঙ্কক: ছোটবেলা থেকেই ছেলেকে গড়েছেন একেবারে কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে। নিজে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। পরে অ্যাকাডেমিতে অনুশীলনও করিয়েছেন। ছোট ছেলে লক্ষ্যর ব্যাডমিন্টনের প্রতি ভালবাসা নজর এড়ায়নি তাঁর। কিন্তু শর্ত দিয়েছিলেন যে, যদি যদি খেলতে হয় তবে পরিশ্রম করতেই হবে। কোনও শর্টকার্ট হবে না। তরুণ লক্ষ্যের ছোট্ট কেরিয়ারে এখনই যা সাফল্য এসেছে, তার নেপথ্যে রয়েছে বাবা ডি কে সেনের নিষ্ঠা ও সাধনাও। টমাস কাপে সিঙ্গলসে ইন্দোনেশিয়ার অ্য়ান্থনি গিনটিংকে (AS Ginting) হারিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের লক্ষ্য সেন (Lakshya Sen)। ভারতের ইতিহাস গড়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম কারিগর লক্ষ্য। ছেলের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত ডি কে সেন এবিপি লাইভকে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন লক্ষ্যর প্রস্তুতি সম্পর্কে।
ছেলে তো ইতিহাস গড়েছে, কী বলবেন? থাইল্যান্ড থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে ডি কে সেন জানান, ''টিম গেম ছিল। এই ম্যাচের আগে আমি ওর কিছু ছোটখাটো টেকনিকে বদল আনতে বলেছিলাম। সেই মতোই নিজের খেলায় একটু বদল এনেছিল লক্ষ্য। বলতাম যে সুযোগ এমনভাবে আসবে না বারবার। তাই যে সুযোগ এসেছে, তা কাজে লাগাও। বাবা হিসেবে সত্যিই গর্ব হচ্ছে।''
ফাইনাল আগেও খেলেছে লক্ষ্য। কোনও চাপ ছিল? লক্ষ্যর বাবা বলছেন, ''চাপ নিতে হবে বড় মঞ্চে সফল হতে হল, এটা ওকে প্রথম থেকেই বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। আগে অনেক ম্যাচ আছে, যেগুলো ক্লোজ গিয়েও শেষরক্ষা করতে পারেনি লক্ষ্য। তাই মাথা ঠাণ্ডা রেখে স্নায়ুর চাপ সামলে প্রতিপক্ষের প্রতিটা পদক্ষেপ নিয়ে ভাবতে বলেছিলাম ওকে। আর একটা কথা বলেছিলাম যে, তুমি স্বপ্ন দেখ যে চোখের সামনে তেরঙ্গা উড়ছে, আর কানে জাতীয় সঙ্গীত বাজছে। দেখবে নিজের সেরা খেলাটা এমনিতেই বেরিয়ে আসবে। আমার মনে হয় ঠিক সেটাই হয়েছে।''
রবিবার প্রথম গেম সিঙ্গলসের ফাইনালে প্রথম গেমে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে যান ভারতের লক্ষ্য। কিন্তু তারপরই চাপে পড়ে যান। একের পর এক ভুল করে লক্ষ্য হেরে যান ৮-২১ ব্যবধানে। পরের গেমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় লড়াই শুরু করেন লক্ষ্য। জিনটিংয়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গেমে একটা সময় ১১-৭ ব্যবধানে এগিয়ে যান লক্ষ্য। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় গেমে জয় পান তিনি। ২১-১৭ পয়েন্টে গেম জিতে ম্যাচ ১-১ করেন ভারতীয় শাটলার। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে, শেষ গেম জিতলেই ম্যাচ পকেটে পুরে নেবেন লক্ষ্য। কিন্তু তৃতীয় গেমে তাঁর লড়াই সহজ ছিল না। ২-৫ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েন লক্ষ্য। এই গেম ছিল ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারক এবং হারলে ম্যাচটাই হেরে যেতেন লক্ষ্য। কিন্তু হতাশ করেননি ভারতীয় শাটলার। প্রথম ম্যাচে ভারতকে এগিয়ে দিলেন লক্ষ্য সেন। ইন্দোনেশিয়ার জিনটিংকে হারিয়ে দিলেন তিনি। স্নায়ুর চাপ সামলে ২১-১৬ পয়েন্টে তৃতীয় তথা শেষ গেম জিতে নেন।
আগামীকাল দেশে ফিরছেন, তার আগে কোনও সেলিব্রেশন? লক্ষ্যর বাবা বলছেন, ''ও খেতে খুব ভালবাসে। বিশেষ করে মায়ের হাতের রান্না। কিন্তু এখন তো তা সম্ভব নয়। তবে লক্ষ্যকে নিয়ে আমি কোনও ভাল রেস্টুরেন্টে যাব। ও যা খেতে চাইবে, আজ সবেতেই ছাড় দেব।''
উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ি রাস্তায় পেশির শক্তি বাড়াতে গাড়ি ঠেলতেন লক্ষ্য। মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই পরিশ্রমের ফল পেতে শুরু করে দিয়েছেন এই তরুণ। তবে এখানেই থেমে থাকতে রাজি নন। সামনে ইন্দোনেশিয়ায় ২ টো টুর্নামেন্ট, এরপরে কমনওয়েলথ গেমস। আপাতত ছেলেকে সেদিকেই লক্ষ্যস্থির করতে বলছেন লক্ষ্যর বাবা।