Pak vs Eng Match Highlights: আলোর উৎসবে আঁধারে ডুবল পাকিস্তান, ইডেনে বিরাট জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিশ্চিত ইংল্যান্ডের
ODI World Cup: নিউজ়িল্যান্ডকে নেট রান রেটে ছাপিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট কনফার্ম করতে ৬.৪ ওভারে ৩৩৮ তুলতে হতো পাকিস্তানকে!
সন্দীপ সরকার, কলকাতা: বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুতে নিউজ়িল্যান্ড বড় ব্যবধানে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দেওয়ার পরই দেওয়াল লিখন পড়া যাচ্ছিল। সেমিফাইনালের দৌড় থেকে যে পাকিস্তান (Pakistan Cricket Team) কার্যত ছিটকে গিয়েছে, এখান থেকে শেষ চারের দরজা খুলতে গেলে শনিবার ইডেনে (Eden Gardens) অলৌকিক কিছুর দরকার, তা জেনে গিয়েছিল পাকিস্তান শিবিরও। এমনকী, পাক কিংবদন্তি ওয়াসিম আক্রম (Wasim Akram) মজা করে এমনও বলেছিলেন যে, প্রথমে ব্যাট করে বোর্ডে বড় রান তোলো আর তারপর ইংল্যান্ড ড্রেসিংরুমের বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দাও। তাতে যদি গোটা ইংল্যান্ড দলকে একসঙ্গে টাইমড আউট করে সেমিফাইনালে যাওয়া যায়!
তবু বাবর আজ়মদের মধ্যে আলোচনা চলছিল, যদি অভাবনীয় কিছু হয়। যদি অসম্ভব সম্ভব হয়। যে কারণে দুদিন প্র্যাক্টিসে ইডেনে বড় শটের মহড়া সেরে রেখেছিলেন পাক ব্যাটাররা। প্রথমে ব্যাট করে যাতে চারশোর পিছনে দৌড়নো যায়।
কিন্তু শনিবার বাবর আজ়ম টস হারতেই সেই সম্ভাবনারও সলিলসমাধি। প্রথমে ব্যাট করে ইংল্যান্ড ৩৩৭/৯ তুলল। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যা রেকর্ড। এর আগে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৩৩৪/৯। ট্রেন্ট ব্রিজে সেই ম্যাচে হেরে গিয়েছিল ইংল্যান্ডই। ইডেনে ইংল্যান্ড ইনিংসের শেষে যখন পাকিস্তানের সামনে সেমিফাইনালে যাওয়ার অঙ্ক কষা হল, অনেকে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
নিউজ়িল্যান্ডকে নেট রান রেটে ছাপিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট কনফার্ম করতে ৬.৪ ওভারে ৩৩৮ তুলতে হতো পাকিস্তানকে!
হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। ৪০ বলে ৩৩৮ রান তুলতে হতো বাবর আজ়মদের (Babar Azam)। ৪০টি বলে টানা ছক্কা মারলেও যা সম্ভব ছিল না। সেক্ষেত্রে ২৪০ রান উঠত বোর্ডে। ৯৮ রানে ম্যাচ হারত পাকিস্তান (Pak vs Eng)।
পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত ৯৩ রানের ব্যবধানে হারল। ৪৩.৩ ওভারে মাত্র ২৪৪ রানে অল আউট হয়ে গেল তারা। ৪৫ বলে ৫১ রান করে একমাত্র লড়াই করলেন আঘা সলমন। বাবর আজ়ম (৪৫ বলে ৩৮ রান), মহম্মদ রিজ়ওয়ানদের (৫১ বলে ৩৬ রান) দেখে মনেই হয়নি মাঠে নামার ইচ্ছে রয়েছে বলে। বরং শেষ দিকে চালিয়ে খেলে হ্যারিস রউফ (২৩ বলে ৩৫ রান) ও মহম্মদ ওয়াসিম (১৪ বলে ১৬ অপরাজিত) দর্শকদের কিছুটা বিনোদন দিলেন।
ইংল্যান্ডের জয়ের স্থপতি হয়ে রইলেন বেন স্টোকস। ভরা গ্যালারির সামনে শাপমোচন হল ইংরেজ তারকার। ইডেন যাঁকে কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন উপহার দিয়েছিল সাত বছর আগে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে। শেষ ওভারে ১৯ রান প্রয়োজন, ব্যাট করছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। বোলার বেন স্টোকস। কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি যে, সেই ম্যাচে অত্যাশ্চর্য কাণ্ড ঘটাবেন ব্র্যাথওয়েট। স্টোকসের শেষ ওভারের চার বলে চার ছক্কা। ডাগ আউট থেকে দৌড়ে বেরনো সতীর্থদের দিকে যখন ব্যাট উঁচিয়ে ছুটছিলেন ব্র্যাথওয়েট, পিচের ওপর হাঁটু গেড়ে মাথা নীচু করে বসেছিলেন স্টোকস।
পরে দেশকে ওয়ান ডে ক্রিকেটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছেন স্টোকস। জিতিয়েছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। কিন্তু ইডেনের সেই জ্বালা কি জুড়িয়েছিল ইংরেজ অলরাউন্ডারের?
ক্ষতে কিছুটা যেন প্রলেপ পড়ল শনিবার। ৭৬ বলে ৮৪ রান করে তিনিই ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ স্কোরার। সঙ্গত করলেন জনি বেয়ারস্টো ও জো রুট। বেয়ারস্টো ৬১ বলে ৫৯ রান করলেন। রুট ৭২ বলে ৬০ রান করে ফিরলেন। ইংল্যান্ডের প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে ওয়ান ডে বিশ্বকাপে এক হাজার রান সম্পূর্ণ হল রুটের।
ইংল্যান্ড ইনিংসের বাকিটা জুড়ে শুধুই স্টোকস। শুরুতেই নিজের বলে তাঁর ক্যাচ ফেলেছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। তার খেসারতও দিলেন পাক পেসার। ১১টি চার ও জোড়া ছক্কায় পাক শিবিরে আঁধার নামালেন স্টোকস। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে ইংল্যান্ড তুলেছিল ৩৩৭/৯।
জবাবে ৩৯ বল বাকি থাকতেই শেষ পাক ইনিংস। ইংরেজ বোলারদের মধ্যে ৩ উইকেট ডেভিড উইলির। গাস অ্যাটকিনসন, মঈন আলি ও আদিল রশিদের দুটি করে উইকেট।
রবিবার দীপাবলি। আলোর মালায় সেজে উঠেছে গোটা রাজ্য, শহর কলকাতা। আলোর উৎসবের মাঝেই পাকিস্তান শিবিরকে অন্ধকারে ডোবাল ইংল্যান্ড। সেই সঙ্গে ৯ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার সাত নম্বরে নিজেদের জায়গা পোক্ত করে নিল। পেয়ে গেল দু'বছর পরে পাকিস্তানের মাটিতেই আয়োজিত হতে চলা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকিট।
আর কলকাতা ছাড়ার আগে বাবরদের সঙ্গী শুধুই হতাশা।
আরও পড়ুন: এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান খরচ, লজ্জার রেকর্ড গড়লেন পাকিস্তানের পেসার
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন