Santanu Sen: 'পরিবারের উপর মারাত্মক টর্চার, মেয়েকে ফেল করানোর জন্য...', সাসপেনশনের পর বিস্ফোরক শান্তনু সেন
TMC News: আর জি কর মেডিক্য়ালে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পর, কার্যত মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সরকারের উল্টো সুরে বিস্ফোরক মন্তব্য় করেছিলেন শান্তনু সেন। তারপর তাঁকে তৃণমূলের মুখপাত্রের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
কলকাতা : আর জি কর কাণ্ডে মুখ খোলায় কি এই পরিণতি হল তাঁর ? দল থেকে সাসপেনশনের দিনে উঠে এল সেই প্রশ্ন। সাংবাদিক বৈঠক করে এই প্রশ্নের খোলসা করলেন শান্তনু সেন।
তিনি বললেন, "আমি শুনছি, কেউ কেউ বলছেন আর জি করের ঘটনায় আমার কাজকর্ম নাকি দলবিরোধী। একটা কথা পরিষ্কার করে দিতে চাই, আমি আর জি করের প্রাক্তন ছাত্র, আমার স্ত্রীও আর জি করের প্রাক্তন ছাত্রী। মেয়ে আর জি করে পাঠরতা। বিগত দেড়-দু'বছর আগে রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হিসাবে আর জি করে কাজ করতে গিয়ে যে যে জিনিস আমি সামনে দেখেছিলাম...এই যে স্বনামধন্য সন্দীপ ঘোষ ...তাঁর নেতৃত্বে সেখানে যে দুর্নীতির চক্র বাসা বেঁধেছিল...তখন আপনারা কোনো মিডিয়া জানতেন না। আমি খুব সুনিপুণভাবে, গোপনীয়তা বজায় রেখে সংশ্লিষ্ট জায়গায় কাগজগুলো জমা দিয়ে এসেছিলাম। দলের সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও, রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও, সেই সময় আমার উপর, আমার পরিবার এবং কন্যার উপর যে মারাত্মক টর্চার হয়েছে দিনের পর দিন...তাকে সামাজিকভাবে বয়কট করা থেকে শুরু করে...তাকে ফেল করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা থেকে শুরু করে...কলেজে গেলে তাকে উত্ত্যক্ত করা হয়েছে। রাত পৌনে ১২টায় এই স্বনামধন্য আশিস পাণ্ডে আমার মেয়েকে ফোন করে হুমকি দিয়েছে। আমার মেয়েকে ফেল করিয়ে দেওয়ার জন্য এই সন্দীপ ঘোষ খাতা চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। যে অনার্স পেয়েছে তাকে ফেল করানোর চেষ্টা হয়েছে। আমি কিন্তু দলের স্বার্থে একটা কোনও কথা কোনও দিন কোনও জায়গায় বলিনি। আমি নির্দিষ্ট কিছু কিছু জায়গায় জানিয়েছিলাম। দলের অভ্যন্তরে জানিয়েছিলাম। স্বাস্থ্য পরিষেবায় যাঁরা দণ্ডমুণ্ডের কর্তা তাঁদেরও অলিখিতভাবে জানানোর চেষ্টা করেছিলাম। দলের বাইরে কোনও কথা বলিনি।"
তাঁর সংযোজন, "পরবর্তীকালে আর জি করে যখন অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে, বকলমে সন্দীপ ঘোষের উপস্থিতিতে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি নিশ্চিত করে সন্দীপ ঘোষের বিরোধিতা করেছিলাম। দলের কোনও নেতা-নেত্রী সম্বন্ধে কোনও কথা বলব না। তাঁরা সকলে আমার কাছে শ্রদ্ধেয়। অনেকে হয়তো বোঝানোর চেষ্টা করছেন, আর জি করের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে নাকি আমি মদত দিয়েছি। তৃণমূল করি বলে আমাকে গো ব্যাক স্লোগান দেওয়া হয়েছে। অথচ তার পরেও বলা হচ্ছে, আমি নাকি আন্দোলনকে মদত দিয়েছি।"
আর জি কর মেডিক্য়ালে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পর, কার্যত মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সরকারের উল্টো সুরে বিস্ফোরক মন্তব্য় করেছিলেন শান্তনু সেন। তারপর তাঁকে তৃণমূলের মুখপাত্রের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। শান্তনু সেনের নিরাপত্তাও তুলে নেয় রাজ্য সরকার। তার পরেও আরও ডানা ছাঁটা হয় তাঁর। সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে অপসারিত করা হয় শান্তনু সেনকে। NRS মেডিক্যালের রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতি পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। যদিও সম্প্রতি ফের আইএমএ বাংলা শাখার রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হন শান্তনু সেন। ভোটে জিতে সপ্তম বার, ইন্ডিয়ান মেডিক্য়াল অ্য়াসোসিয়েশনের পশ্চিমবঙ্গ শাখার রাজ্য সম্পাদক হন চিকিৎসক নেতা। আর জি করকাণ্ডে মুখ খোলায় তৃণমূলের অন্দরে কোণঠাসা হয়ে একের পর এক পদ হারালেও, তখনকার মতো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন তিনি। ফের একবার দলের রোষে পড়তে হল তাঁকে। যদিও উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিনকয়েক আগে ডায়মন্ড হারবার ডাক্তারদের নিয়ে যে সম্মেলন করেছিলেন, সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন এই চিকিৎসক নেতা। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। অবশ্য শান্তনু সেনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ছিলেন শীর্ষ নেতৃত্ব। এরপর এদিন দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে দলবিরোধী বিভিন্ন কাজের অভিযোগে তাঁকে সাসপেন্ড করে।