Manmohan Key Achievements: গায়ে মাখেননি 'মৌনমোহন' কটাক্ষ, নীরবেই একের পর এক মাইলফলক তৈরি করেন মনমোহন সিংহ
Manmohan Singh Demise: রাজনৈতিক কোলাহলের মধ্যে তাঁর কৃতিত্ব ঢাকা পড়ে গেলেও, ইতিহাস মনে রাখবে মনমোহনের অবদান।
নয়াদিল্লি: দেখনদারির বালাই ছিল না কোনও কালেই। বরাবরই তিনি ধীরস্থির, মিতভাষী। প্রচারের ঢক্কানিনাদে কখনও বিশ্বাস করতেন না দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তাই বিরোধীরা 'মৌনমোহন' বলে কটাক্ষ করলেও, নীরবে নিজের কাজ করে গিয়েছেন তিনি। ার সেই কাজের মাধ্যমেই একের পর এক মাইলফলক তৈরি করেছেন। রাজনৈতিক কোলাহলের মধ্যে তাঁর কৃতিত্ব ঢাকা পড়ে গেলেও, ইতিহাস মনে রাখবে মনমোহনের অবদান। (Manmohan Key Achievements)
উদার অর্থনীতি
দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তো বটেই, অর্থমন্ত্রী হিসেবেও ভারতের অর্থনীতিতে সংস্কার ঘটিয়েছিলেন মনমোহন। ১৯৯১ সালে দেশের রাজস্ব ঘাটতি যখন ৮.৫ শতাংশে, সেই সময় গোটা বিশ্বের সামনে ভারতের বাজার উন্মুক্ত করে দেন তিনি। উদার অর্থনীতির দরজা খুলে দেন। ভারতের অর্থনীতির ভিত মজবুত করেন মনমোহন। (Manmohan Singh Demise)
১০০ দিনের কাজ
মনমোহনের আমলেই গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ ঘটে। ২০০৫ সালে তাঁর সরকার 'মহাত্মা গাঁধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট' (MGNREGA) চালু করে। এই প্রকল্পের আওতায় গ্রামের মানুষের জন্য অন্তত পক্ষে ১০০ দিনের কাজের নিশ্চিত ব্যবস্থা করা হয়। দেশের বৃহত্তম জনপ্রকল্প এই ১০০ দিনের কাজ।
তথ্যে জানার অধিকার আইন
তথ্যের অধিকার আইনের সূচনা মনমোহন সিংহের হাত ধরেই। ২০০৫ সালে পাস হয় Right to Information Act. এই আইনের আওতায় সরকারকে প্রশ্ন করার, সরকারের কাছে কৈফেয়ত চাওয়ার অধিকার পান ভারতের মানুষ। ওই আইনের আওতায় দেশের নাগরিক সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে পারেন। ৩০ দিনের মধ্যে সেই প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য সরকার। জীবন বা স্বাধীনতার প্রশ্ন জড়িয়ে থাকলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেওয়ার বিধি আনা হয়।
পরমাণু চুক্তি
আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করেন মনমোহনই। আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সঙ্গে ওই চুক্তি স্বাক্ষর করেন তিনি। ওই চুক্তির আওতায় ভারত অসামরিক এবং সামরিক পরমাণু প্রযুক্তির পৃথকীকরণে সম্মত হয়। এর পরিবর্তে ভারতকে পূর্ণ অসমারিক পরমাণু সহযোগিতা প্রদান করতে সম্মত হয় আমেরিকা।
আধার কার্ড
যে আধার কার্ড এই মুহূর্তে নাগরিক হওয়ার অন্যতম মাপকাঠি, তার সূচনাও ঘটে মনমোহনের আমলে। আমেরিকায় যেমন নাগরিকদের সোশ্যাল সিকিওরিটি নম্বর রয়েছে, তেমনই ভারতীয়দের জন্য অভিন্ন পরিচয়পত্র চালু করতে আধার কার্ডের সূচনা হয় ২০০৯ সালের ২৮ জানুয়ারি। সেই সময় পৃথিবীর বৃহত্তম বায়োমেট্রিক প্রকল্প হয়ে ওঠে আধার। সেই সময় আধার কার্ডের সমালোচনা হলেও, বর্তমানে সমস্ত সরকারি কাজে, সরকারি প্রকল্পে আধার লাগে। করোনার সময় টিকাও মিলেছিল আধারের ভিত্তিতেই।
দারিদ্র দূরীকরণ
ইন্দিরা গাঁধী 'গরিবি হটাও' মন্ত্রের সূচনা করলেও, মনমোহনের আমলেই দারিদ্রের হার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে আসে। ২০০৪ সালের দেশে দারিদ্রের হার যেখানে ৩৭.২ শতাংশ ছিল, ২০১২ সালে তা ২১.৯ শতাংশে এসে ঠেকে। তদানীন্তন সরকারের হিসেব অনুযায়ী, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল ২৬.৯৩ শতাংশ। ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রাক্তন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম জানান, ২০০৫ থেকে ২০০২৬ এবং ২০১১ থেকে ২০১২ সালেই ভারতে দারিদ্রের হার সবচেয়ে কম ছিল।
মহকাশ গবেষণা
মনমোহন সরকারের আমলে মহাকাশ গবেষণায় মাইলফলক ছোঁয় ভারত। ২০০৮ সালে ভালতের প্রথম চন্দ্রযানের উৎক্ষেপণ হয়। ২০১৩ সালে মঙ্গলযানের উৎক্ষেপণও হয় মনমোহনের আমলেই।
পোলিওমুক্ত ভারত
মনমোহন সিংহের আমলেই, ২০১২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি ভআরতে শেষ বার পোলিও ধরা পড়ে। ১৯৮৮ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক স্তরে পোলিও দূরীকরণ যুক্ত ছিল ভারত। কিন্তু মনমোহন সরকার গোড়া থেকেই সেই কাজে জোর দেয়।
সাফাইকর্মীদের পুনর্বাসন
২০১৩ সালে সাফাইকর্মীদের জীবনের নিরাপত্তা আইন আনে মনমোহন সরকার। বিপজ্জনক ভাবে যাঁরা ম্যানহোলে, নর্দমায় নেমে হাত দিয়ে সাফাইয়ের কাজ করেন, তাঁদের দিয়ে ওই কাজ করানো যাবে না বলা হয় আইনে। পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, জমাদার, নেথর এবং ধাঙড়ের কাজ মানুষকে দিয়ে করানো যাবে না। মেশিন আনতে হবে। ওই পেশার লোকজনকে বহাল করতে হবে অন্য কাজে। সমাজের দুর্বল শ্রেণি, তফসিলি জাতি, উপজাতিদের সামাজিক বঞ্চনা, অমানবিক আচরণ থেকে রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব বলে জানানো হয় আইনে।
সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ
ভারতের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের রাস্তা খুলে দেন মনমোহনই। ২০১২ সালে মাল্টি ব্র্যান্ড রিটেলে ৫১ শতাংশ এবং সিঙ্গল ব্র্যান্ড রিটেলে ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগে অনুমোদন দেন।
লোকপাল আইন
দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার যখন দুর্নীতির অভিযোগ জেরবার, সেই সময় মনমোহন সরকার জন লোকপাল বিল পাস করে। স্বাধীন লোকপালের প্রতিষ্ঠা হয় সরকারি পদে আসীন নেতা-মন্ত্রী-আমলাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখা জন্য।
দুই সংখ্যার জিডিপি
শুধুমাত্র দারিদ্র দূরীকরণেই সফল হয়নি মনমোহন সরকার, তাঁর আমলে দেশের জিডিপি দুই সংখ্যার অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলে। স্বাধীনতার পর থেকে এযাবৎ, ২০১০-'১১ সালেই দেশের GDP ১০.০৩ শতাংশের মাত্রা ছোঁয়। আন্তর্জাতিক মহল থেকে চাপ আসা সত্ত্বেও মনমোহন সরকার জ্বালানির তেলের দাম বাড়ায়নি।
১ লক্ষ কোটির অর্থনীতি
২০০৭ সালে মনমোহন সরকারের আমলেই দেশের অর্থনীতি ১ লক্ষ কোটি ডলারের মাইলফলক ছোঁয়। বিশ্বের তাবড় দেশের সঙ্গে একসারিতে নাম ওঠে ভারতের। তাঁর আমলে GDP বৃদ্ধির হার ৮-৯ শতাংশের মধ্যে থাকাতেই এমনটা সম্ভব হয়।
জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন
২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জাতীয় খাদ্য বিরাপত্তা আইনের সূচনা করে মনমোহন সরকার। সেই সময় ভারতের জনসংখ্যা ছিল ১২০ কোটি। সেই জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশের কাছে ভর্তুকিপ্রাপ্ত খাদ্যশস্য পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্কুলের মিড ডে মিল, ICDS, PDS, সবকিছুই এর আওতায় চলে আসে।