Rahool Mukherjee-Federation Conflict: সকাল থেকে দাঁড়িয়ে প্রসেনজিৎ-অনির্বাণরা, আজও শ্যুটিং হল না টলিপাড়ায়, ফেডারেশনকে দু'দিন সময় দিলেন রাজ
Tollywood Updates: রাজ জানান, রাহুলের ছবির শ্যুটিং শুরু না হলে কোনও পরিচালক সোমবার থেকে শ্যুটিং ফ্লোরে যাবেন না।
কলকাতা: ডিরেক্টর্স গিল্ড নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও, ফের ছবির শ্যুটিংয়ে বাধার মুখে পড়লেন পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়। শনিবার থেকে টেকনিশিয়ান্স স্টুডিও-তে নতুন ছবির শ্যুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেই মতো সকাল সকাল পরিচালক রাহুল , প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য-সহ অন্য অভিনেতারা পৌঁছে গেলেও টেকনিশিয়ানরা শ্যুটিংয়ে পৌঁছলেন না। (Rahool Mukherjee Federation Conflict)
এমন পরিস্থিতিতে রাহুলের পাশে দাঁড়াতে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রায় সব অভিনেতাপরিচালক হাজির হলেন টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওয়। টেকনিশিয়ানদের অনুপস্থিতিতে শ্যুটিংয়ে বাধা পড়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিচালকেরা। পাল্টা কাজবন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে রাজ জানান, রাহুলের ছবির শ্যুটিং শুরু না হলে কোনও পরিচালক সোমবার থেকে শ্যুটিং ফ্লোরে যাবেন না। (Tollywood Updates)
ডিরেক্টর্স গিল্ড এবং ফেডারেশনের নিয়ম না মেনে রাহুল বাংলাদেশের ওয়েব প্ল্যাটফর্মের জন্য সিরিজ বানাতে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি সংগঠনের কানে পৌঁছনোর পর সেই নিয়ে জবাব চাওয়া হয়। প্রথমে অস্বীকার করলেও, পরে 'ভুল' স্বীকার করে নেন রাহুল। এর পর তিন মাসের জন্য রাহুলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় ফেডারেশন। সেই নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই টানাপোড়েন চলছিল। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার সন্ধেয় রাহুলের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ডিরেক্টর্স গিল্ড। রাজ নিজে এব্যাপারে পৌরহিত্য করেছিলেন। কিন্তু শুক্রবার রাতেই ফেডারেশন জানায়, নিষেধাজ্ঞা উঠছে না। রাহুল ফ্লোরে গেলে টেকনিশিয়ানরা যাবেন না ফ্লোরে। এর পর শনিবার সকালে রাহুল এবং বাকিরা সেটে পৌঁছনোর পরও শ্যুটিং শুরু না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন রাজ।
সংবাদমাধ্যমে এদিন রাজ বলেন, "যাঁরা ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক, সে টিভির হোন বা OTT-র, অথবা সিনেমার, সকলে নিজের মতামত জানিয়েছেন। সকলেই খুব আহত। রাহুল পরিচালক হিসেবে ফ্লোরে গেলে নাটি টেকনিশিয়ানরা আসবেন না! আমি জানতে চাই, পরিচালকরা না এলে কাজটা হবে তো? এটা বড় অসম্মান। শনি এবং রবি, দু'দিন সময় দিচ্ছি ভাবার জন্য। টেকনিশিয়ান এবং ফেডারেশন ভাবনাচিন্তা করুন। তার পরও যদি পরিস্থিতি না শোধরায়, সোমবার থেকে পরিচালকরাই ফ্লোরে যাবেন না। পরিচালক ছাড়া কি কাজ হয়? এটা অপমান। পরিচালক নিজের যোগ্যতায় কাজ নিয়ে আসেন, সবাই তাতে লাভবান হন। রাহুলকে যেভাবে অপমান করা হল, তাতে সব পরিচালকদের অপমান।"
প্রসেনজিৎ এবং অনির্বাণের সঙ্গেই আজ শ্যুটিং শুরু করার কথা ছিল রাহুলের। সকাল থেকে তাঁরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওয়। তাঁদের পাশে থাকতে সেখানে একে একে এসে পৌঁছন দেব, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়রা। দেব জানান, সুস্থ পরিবেশে যাতে কাজ শুরু করা যায়, সেই চেষ্টাই করছেন। তিনি বলেন, "কাজ আটকানো বা কাজ বন্ধ রাখার বিরুদ্ধে আমরা। আমাদের সরকারও চায়, যত বেশি কাজ হবে, বাংলা ইন্ডাস্ট্রির ভাল হবে। কোনও কারণ ছাড়াই যে কাজটা বন্ধ করা হল, সেটা দুঃখজনক। কাজের সংখ্যা এমনিতেই কমে যাচ্ছে। আগে বম্বে থেকে অ্যাড শ্যুট হতো, প্রায় ৯০ শতাংশ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কোনও প্রযোজক, অভিনেতা, আমরা কেউ টেকনিশিয়ানদের বিরুদ্ধে। কেউ বলতে পারবেন না আমরা খারাপ ব্যবহার করি। ৪০০-৫-০০ জনকে নিয়ে শ্যুটিং করি কারণ ছাড়া। ভুল একটা ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে। কাজ কোনও দিন বন্ধ রাখা উচিত হচ্ছে না। হাতে গোনা ১০টা ভাল বাংলা ছবি রিলিজ হয় না বছরে। এতে দেশের কাছেও খারাপ বার্তা যাবে। রাজ হিন্দি ওয়েবসিরিজ করছে। বাংলার বাইরে শ্যুট করতে হবে সেটা ফেডারেশনের এটা ভাবা উচিত। নিজের ইগো স্যাটিসফাই করার জন্য, দেখো এটা করতে পেরেছি, আমার কত সাহস, ক্ষমতা দেখো...ক্ষমতা আসলে কী? সকলকে নিয়ে চলা, সকলের বাড়িতে যেন রান্না হয়, শান্তিতে যেন চলতে পারে সকলে, এটাই তো ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টের কাজ! আমি এটাকে সমর্থন করছি না।"
এদিন কিন্তু হতাশা উগরে দেন প্রসেনজিৎ। তাঁর কথায়, "টেলিভিশন, OTT, সিনেমা যাই হোক, আমরা যাঁরা ছবি বানানোর কাজ করি, অত্যন্ত আবেগের সঙ্গে কাজটা করি। সকালে উঠে, রাতে শোয়ার আগে দৃশ্যগুলি পড়ি। সকালে গিয়ে শ্যুটিং হয়। গত ন'দিন ধরে আমি একটা করে দৃশ্য পড়ছি, সকালে শুনছি শ্যুটিং হবে না। আমি মানসিক অবসাদে ভুগছি। পর্দায় আবেগ ফুটিয়ে তোলেন শিল্পীরা। আমরা সকলেই আবেগপ্রবণ। সেই ভালবাসা, আবেগ, সম্মান যদি চলে যায়, তাহলে সৃষ্টির কোনও মূল্য থাকবে না। আমি ৪০ বছর ধরে কাজ করছি। যদি সেই আবেগ না থাকে সৃষ্টির মধ্যে, দর্শকও ভালবাসবেন না। টুকটাক ঝগড়াঝাঁটি হতেই পারে, কিন্তু ভালবাসা কেন চলে যাচ্ছে? কারও কাছে কিছু প্রমাণের নেই। শেষ পর্যন্ত সৃষ্টিই থেকে যাবে।"
গোটা পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন পরমব্রতও। তিনি বলেন, "আইন তৈরির ক্ষমতা একমাত্র বিচার বিভাগের, এগজিকিউটিভের। আমাদের দেশে কেন, অন্য দেশেও আর কোনও প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার আইন তৈরির ক্ষমতা নেই। কোনও সংস্থা, কোনও ইউনিয়ন, ব্যক্তি বিশেষের অধিকার নেই এমন। তাই আইন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানটুকু থাকা দরকার। এই গুপি শব্দটিকে আইনসম্মত শব্দে পরিণত করা হচ্ছে। এটা আইনসম্মত নয়। যাঁরা আইন হিসেবে চালানোর চেষ্টা করছেন, তাঁরা বেআইনি, অসংবিধানিক কাজ করছেন।"