এক্সপ্লোর

Ghatal : আজও বর্ষা এলেই ওঠে এই প্রসঙ্গ, আসলে কী ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান ?

বর্ষায় বৃষ্টির সাথে সাথে জলবন্দি হয়ে পড়ে ঘাটাল। ফি বছর এই ঘটনা ঘটে। প্রতিবারই ওঠে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কথা। কী এই প্ল্যান, কী এর ইতিহাস যা নিয়ে আজও রাজনৈতিক তরজা অব্যাহত ?

ঘাটাল : ঘাটাল। বর্ষার সময় দেখলে মনে হবে, এ যেন ভেনিস ! সে-তো উত্তর-পূর্ব ইতালির ভাসমান একটি শহর। যার দু'দিকে বাড়ি আর মাঝখান দিয়ে চলে গেছে জলপথ। সে পথে চলে আধুনিকমানের জলযান। ইতিহাস বলে, জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভাসমান এই শহরটি গড়ে উঠেছিল। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালে অবশ্য এরকম কোনও ব্যাপার নেই। অথচ ফি বছর একইভাবে জলমগ্ন হয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এই এলাকা। যাতায়াতের জন্য তখন মানুষের সম্বল হয়ে ওঠে ছোট ছোট নৌকা(যাকে পানসিও বলা যায়) বা কলার ভেলা। তা সে মুমূর্ষ রোগীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হোক বা বাজার-হাট করা। 

ফি বছর শিলাবতী, ঝুমি ও কংসাবতী নদীর জল বাড়লে ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। রূপনারায়ণ দিয়ে সেই জল বেরিয়ে গেলে সমস্যা কাটে। কিন্তু, তা না হওয়ায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। জলের তলায় চলে যায় রাস্তাঘাট। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ত্রাণ শিবির, বাড়ির ছাদে আশ্রয় নেয় মানুষ। নৌকায় করে চলে যাতায়াত। কিন্তু, সবথেকে চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠে, রাত-বিরেতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা গুরুত্বপূর্ণ কাজে অন্যত্র যাওয়ার প্রয়োজন পড়লে। সেইসময় কার্যত অসহায় হয়ে পড়ে এলাকাবাসী। শুধু কি তাই ! জল নামলেও পড়তে হয় আতঙ্কে। বিষধর সাপের আনাগোনা বাড়ে। এর পাশাপাশি এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা দেখা দেয়।

দীর্ঘ এই জল-যন্ত্রণা থেকে ঘাটাল মহকুমাবাসীকে মুক্তি দিতেই একরাশ স্বপ্ন দেখিয়ে উঠেছিল ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কথা। ১৯৫০ সালে প্রথম বাম সাংসদ নীলকুঞ্জ বিহারী চৌধুরী সংসদে এই যন্ত্রণার কথা উত্থাপন করেছিলেন। তার ভিত্তিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যারা ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রস্তাব দেয়।

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের ইতিবৃত্ত

  • ১৯৫৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের মানসিংহ কমিটি বন্য কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে
  • এর পরে ওই বছরেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের অনুমোদন দেয় কেন্দ্র
  • ১৯৮২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয় 
  • ২০০৯ সালে প্রকল্প পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য
  • ডিটেলস প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরি শুরু হয়
  • ২০১০ সালে গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশনে প্রকল্পের ডিপিআর জমা পড়ে
  • ২০১১ সালে প্রকল্প সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য চেয়ে ডিপিআর ফেরত পাঠায় কেন্দ্র
  • ২০১৫ সালে প্রকল্প রিপোর্টে সবুজ সংকেত দেয় কেন্দ্র
  • নতুন রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৪৭ কিলোমিটার নদীবাঁধ সংস্কার, নারায়ণী ও কাঁকি খালে দুটি স্লুইস গেট ও পাম্প হাউস এবং ঘাটালে শীলাবতী নদীর ধারে গার্ডওয়াল বসানোর সিদ্ধান্ত হয় 
  • ঠিক হয় কেন্দ্র ও রাজ্য ৫০ শতাংশ করে টাকা দেবে । কিন্তু, কাজ এগোয়নি

প্রকল্পে নিয়মিত নদী সংস্কারের সংস্থানের কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২২০০ কোটি টাকার বাজেট পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু, গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশন এর অনুমোদন দেওয়ার পর তা নেমে আসে ১২৪০ কোটি টাকায়। সেই সময়ে ঠিক ছিল, কেন্দ্র এই প্রকল্পে ৭৫ শতাংশ টাকা দেবে। বাকি ২৫ শতাংশের জোগান দেবে রাজ্য। পরে তা কেন্দ্র ও রাজ্যের তরফে ৫০-৫০ শতাংশ হিসেবে নির্ধারিত হয়। কিন্তু অভিযোগ, এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে কেন্দ্র রাজ্যকে আর রাজ্য কেন্দ্রকে দোষারোপ করে চলেছে। 

এবারও জলমগ্ন ঘাটাল। অসহায় স্থানীয়রা। গতকালই হেলিকপ্টারে পরিদর্শনের পর হেঁটে ঘাটালের প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোবাইল ফোনে বন্যা পরিস্থিতি ক্যামেরাবন্দি করেন। ঘাটালে হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। দুর্গতদের ত্রাণ বিলিও করেন। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ দেব এবং বিধায়ক জুন মালিয়া। পরে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে ফের একবার কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। ম্যানমেড বন্যার কথা বলেন। অভিযোগ করেন, 'দীর্ঘদিন ধরে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন করছে না কেন্দ্র। সেচমন্ত্রীকে মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে দিল্লি যেতে নির্দেশ দিয়েছি। পাশাপাশি তিনি এও বলেন, অবিলম্বে এই প্ল্যান বাস্তবায়িত না করলে ঘাটালকে বাঁচানো যাবে না।

পরে নিজের ফেসবুক পেজেও মমতা লেখেন, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের বাস্তবায়ন জরুরি। সংসদে বারবার সরব হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত করতে কোনওরকম উদ্যোগ নেয়নি। 

পাল্টা খোঁচা এসেছে বিজেপির তরফেও। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘাটালে দাঁড়িয়ে আবার ম্যানমেড বন্যার কথা বলেছেন। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করছি না। কারণ সত্যিই এই বন্যা ম্যানমেড। এই ম্যানমেড বন্যার জন্য দায়ী গত ১০ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে শাসন করা তৃণমূ সরকার। চন্দ্রেশ্বর খালকে ৪ কিমি বাড়িয়ে শিলাবতী নদীতে যোগ করলে ঘাটাল শহর ও আশপাশের এলাকা এই বন্যা পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেত। সেই উদ্যোগ রাজ্য সরকার নেয়নি।’

এদিকে জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেছেন, “আজ অবধি কেন্দ্রের সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য একটা পয়সাও দেয়নি। কেন্দ্র তাদের ভাগের টাকা দিক, বাংলাও টাকা দিয়ে দেবে। কাজ শুরু হয়ে যাবে।“ সায়ন্তন বসু মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, অনেকবার তো দিল্লি গিয়েছেন, তখন কেন বলেননি ?

এককথায়, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে রাজনৈতিক তরজা অব্যাহত। অব্যাহত ঘাটালবাসীর জল-যন্ত্রণাও। ৭৫ বছরের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ঘাটালের এই অবস্থা ৬০ বছর ধরে দেখছি। আগে তাও একটু কম আসত। এখন বিরাট জল আসে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর হলে- ঘাটাল, দাসপুর ১ ও ২, চন্দ্রকোণা ১ ও ২, কেশপুর, ডেবরা, খড়গপুর ১ ও ২, মেদিনীপুর, পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, ময়না-মোট ১৩টি ব্লক জল-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু, এত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কার্যকর করতে গড়িমসির অভিযোগ উঠছে। এক-আধবার নয়, বছরের পর বছর ধরে।

কবে এই দুর্ভোগ থেকে মিলবে মুক্তি, জানা নেই কারও ! তাই জলমগ্ন বাড়ির ছাদে উঠে ঠায় পরিবার নিয়ে জল নামার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কি-ই বা করার আছে ঘাটালবাসীর ?

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

Team India Flight: ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
Hemant Soren: ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত, শপথ নিয়েই ভোটবার্তা, চম্পাই-অস্ত্রে শান বিজেপি-র
ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত, শপথ নিয়েই ভোটবার্তা, চম্পাই-অস্ত্রে শান বিজেপি-র
Narendra Modi in Space: মহাকাশ অভিযানে যাবেন মোদি! আশাবাদী ISRO প্রধান, কংগ্রেস বলল...
মহাকাশ অভিযানে যাবেন মোদি! আশাবাদী ISRO প্রধান, কংগ্রেস বলল...
Mamata Banerjee: এককালীন অবসরভাতা বেড়ে ৫ লক্ষ, প্যারা টিচার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুখবর মমতার
এককালীন অবসরভাতা বেড়ে ৫ লক্ষ, প্যারা টিচার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুখবর মমতার
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

Kolkata Municipality: মুখ্য়মন্ত্রীর বাড়ির কাছে সরকারি সম্পত্তি দখলমুক্ত করল কলকাতা পুরসভা। ABP Ananda LiveDengue In Bengal: বর্ষা আসতেই রাজ্য়ে ফিরেছে ডেঙ্গির ভয়! ABP Ananda LivePetrol Density: গাড়িতে তেল ভরার সময় কোন কোন বিষয়ে নজর রাখা দরকার? না রাখলে কী ক্ষতি হতে পারে?Bhupatinagar Incident: ভূপতিনগর বিস্ফোরণকাণ্ডে প্রথম চার্জশিটেই বিস্ফোরক দাবি NIA-র! ABP Ananda Live

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
Team India Flight: ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
Hemant Soren: ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত, শপথ নিয়েই ভোটবার্তা, চম্পাই-অস্ত্রে শান বিজেপি-র
ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত, শপথ নিয়েই ভোটবার্তা, চম্পাই-অস্ত্রে শান বিজেপি-র
Narendra Modi in Space: মহাকাশ অভিযানে যাবেন মোদি! আশাবাদী ISRO প্রধান, কংগ্রেস বলল...
মহাকাশ অভিযানে যাবেন মোদি! আশাবাদী ISRO প্রধান, কংগ্রেস বলল...
Mamata Banerjee: এককালীন অবসরভাতা বেড়ে ৫ লক্ষ, প্যারা টিচার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুখবর মমতার
এককালীন অবসরভাতা বেড়ে ৫ লক্ষ, প্যারা টিচার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুখবর মমতার
West Bengal Assembly: আমাদের দুর্বল ভাবা ভুল', রাজ্যপালকে নিশানা বিমানের, শপথ জটিলতার মধ্যে কাল বিশেষ অধিবেশন
আমাদের দুর্বল ভাবা ভুল', রাজ্যপালকে নিশানা বিমানের, শপথ জটিলতার মধ্যে কাল বিশেষ অধিবেশন
Bihar Bridge Collapse: ধসে নেমে গেল মাঝের অংশ, নদীতে বসে গেল থাম, বিহারে ফের ভাঙল সেতু, ১৭ দিনে ১২টি
ধসে নেমে গেল মাঝের অংশ, নদীতে বসে গেল থাম, বিহারে ফের ভাঙল সেতু, ১৭ দিনে ১২টি
Brain Eating Amoeba: মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবার সংক্রমণ, পুকুরে স্নান করে চরম পরিণতি কিশোরের
মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবার সংক্রমণ, পুকুরে স্নান করে চরম পরিণতি কিশোরের
Team India Victory Parade Live: বৃষ্টি ও ট্রাফিকের জন্যই পিছিয়ে যাচ্ছে প্যারেডের সময়, এখনও বিমানবন্দরেই রোহিতরা
বৃষ্টি ও ট্রাফিকের জন্যই পিছিয়ে যাচ্ছে প্যারেডের সময়, এখনও বিমানবন্দরেই রোহিতরা
Embed widget