Nusrat Jahan: শপথে নজর কেড়েছিলেন গোটা দেশের, দুর্নীতির অভিযোগ থেকে নিস্তার পেলেন না নুসরতও
ED Summon: তৃণমূলের নতুন প্রজন্মের গায়েও লাগল দুর্নীতির দাগ।
![Nusrat Jahan: শপথে নজর কেড়েছিলেন গোটা দেশের, দুর্নীতির অভিযোগ থেকে নিস্তার পেলেন না নুসরতও TMC MP Nusrat Jahan once grabbed attention while taking oath but now accused in cheating case Nusrat Jahan: শপথে নজর কেড়েছিলেন গোটা দেশের, দুর্নীতির অভিযোগ থেকে নিস্তার পেলেন না নুসরতও](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2023/09/06/dfc298bb48e9560849ec468aec11abff1693967590564338_original.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি থেকে গরু এবং কয়লা পাচারকাণ্ডে নাম জড়িয়েছে একের পর এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতার। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন তাঁরা, যেতে হয়েছে জেলেও। এবার তৃণমূলের নতুন প্রজন্মের জনপ্রতিনিধির নামও জড়াল দুর্নীতিতে। ফ্ল্যাট প্রতারণাকাণ্ডে বসিরহাট সাংসদ নুসরত জাহানকে (Nusrat Jahan) তলব করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, পুর নিয়োগে দুর্নীতি, কয়লা পাচারকাণ্ড থেকে গরুপাচারকাণ্ড, গত কয়েক বছরে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছে তৃণমূল। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য, মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা, এমনকি বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডল, শাসকদলের একাধিক হেভিওয়েট বর্তমানে জেলে।
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের নতুন প্রজন্মের গায়েও লাগল দুর্নীতির দাগ। ২০১৯ সালে সংসদে দাঁড়িয়ে শপথ গ্রহণের দিন, গোটা দেশের নজর কেড়েছিলেন বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরত। চার বছরের মাথায় দুর্নীতির অভিযোগের তালিকায় জুড়ে গেল তাঁর নামও। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে তলব করপল ED.
জল্পনা ছিলই। তৈরি হয়েছিল বিস্তর রাজনৈতিক চাপানউতোরও। সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে সাফাইও দিয়েছিলেন নুসরত। সেই নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। তারই মধ্যে রাজারহাটে ফ্ল্যাট বিক্রিতে প্রতারণার অভিযোগের ঘটনায় নুসরতকে তলব করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ED. ১২ সেপ্টেম্বর সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হতে বলা হয়েছে।
শুধু নুসরতই নন, 'সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড' নামে যে সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তলব করা হয়েছে সেই সংস্থার ডিরেক্টর রাকেশ সিংহকেও। ED ডাকবে না বলে এর আগে আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছিলেন নুসরত। নোটিস পাওয়ার পর বললেন, "সকাল থেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রয়েছি। আমি অবশ্যই গিয়ে চেক করব। আর এরকম যদি কোনও বিষয় থাকে, অবশ্যই সহযোগিতা করব আমি।"
বিতর্কের শুরুটা হয়েছিল ২০১৪-'১৫ সালে। রাজারহাটে জমি কিনে ফ্ল্যাট বানানোর জন্য 'সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড' নামে একটি সংস্থা, ৪২৯ জনের থেকে ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা করে অগ্রিম নেয়। মোট অঙ্ক দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৮ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা। কিন্তু গত ন'বছরেও কেউ ফ্ল্যাট পাননি বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: Jadavpur University : যাদবপুরে র্যাগিং রুখতে কী টেকনোলজি? কী জানালেন ISRO-র প্রতিনিধিরা?
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, তাঁদের ফ্ল্যাট না দিয়ে, সেই টাকায় নিজের জন্য বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনেন তৃণমূল সাংসদ। দক্ষিণ কলকাতার অন্য়তম অভিজাত এলাকা পাম অ্যাভিনিউ। সেখানেই ইডেন ইম্পিরিয়াল আবাসনে রয়েছে নুসরতের আড়াই হাজার স্কোয়্যার ফুটের ফ্ল্যাট।
এই ঘটনায় জল আদালত থেকে পুলিশ প্রশাসন পর্যন্ত পৌঁছলেও, কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ।
এই প্রেক্ষাপটে ৩১ জুলাই, অভিযোগকারীদের নিয়ে ED'র দ্বারস্থ হন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। তাঁর বক্তব্য ছিল, "বৃহত্তর অর্থনৈতিক দুর্নীতি হয়েছে। নুসরত জাহানকে এত বড় দুর্নীতির জন্য ডাকা হবে না কেন? কেন মামলা খতিয়ে দেখবে না ED?" তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার দেড় দিন পর এ নিয়ে মুখ খোলেন নুসরত। বলেন, "আমি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে, যা বলবেন করব। চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, দুর্নীতি করিনি আমি।"
সর্ব সাকুল্যে সেদিন মিনিট দশেক সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন বসিরহাটের সাংসদ ও অভিনেত্রী। সঙ্গে করে ফাইল আনলেও, নথি দেখাননি তিনি। উল্টে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মেজাজ হারাতেও দেখা যায় তাঁকে। দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে, নুসরত দাবি করেন, তিনি ওই সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। সুদ-সহ তা মিটিয়েও দেন। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, যিনি সংস্থার ডিরেক্টর পদে রয়েছেন, তিনি কী করে সেই সংস্থা থেকেই ঋণ নিতে পারেন? ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন বলে দাবি করলেও, নথিতে ১ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা লেখা রয়েছে বলে দাবি করেন শঙ্কুদেব।
নুসরতের ঋণ নেওয়ার এই দাবি পত্রপাঠ খারিজ করে দেন 'সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড'-এরই ডিরেক্টর রাকেশ। তিনি বলেন, "নুসরত আমাদের থেকে কোনও ঋণ নেননি। ওমরা ওই ফ্ল্যাটটি কোম্পানির ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে ওই ডেভলপারকে অ্য়াডভান্স করেছিলাম। পরে ফ্ল্যাটটি নুসরতের পছন্দ হয়। বাকি টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। নুসরত যা বলছেন, সঠিক নয়।"
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কে ঠিক বলছেন? নুসরত নাকি, সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেডের আরেক ডিরেক্টর রাকেশ? নুসরত এই সংস্থা থেকে সত্যিই কি ঋণ নিয়েছিলেন? এসবের মধ্যেই এই ঘটনায় কলকাতা পুলিশের তদন্তের বিস্ফোরক রিপোর্টের নথি আসে এবিপি আনন্দের কাছে।
অবসরের পর শেষ জীবনে মাথায় নিজের একটা ছাদের স্বপ্ন নিয়ে, 'সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড'-এ ফ্ল্যাটের জন্য টাকা জমা করেছিলেন, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কের বিভিন্ন ব্রাঞ্চে একদা কর্মরত, ৪২৯ জন। কিন্তু সেই স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায়, অর্থাৎ টাকা দিয়েও ফ্ল্যাট না পাওয়ার অভিযোগে প্রথমে থানায় যান ক্রেতারা। অভিযোগ, সেখানে সুরাহা না হওয়ায় ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের দ্বারস্থ হন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত আলিপুর আদালতে মামলা করা হয়। ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা করে তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া হয়, কিন্তু ফ্ল্যাট মেলেনি বলে জানা যায়। এর প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২২শে ডিসেম্বর, কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট সিপি ক্রাইমকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেন, আলিপুর আদালতের ষষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুস্তাক আলম। জয়েন্ট সিপি ক্রাইমের থেকে তদন্তের নির্দেশ যায় গড়িয়াহাট থানায়। তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেন গড়িয়াহাট থানার তদন্তকারী অফিসার।
২০২৩-এর ৩০ জানুয়ারি আদালতে জমা দেওয়া, গড়িয়াহাট থানার তদন্তকারী অফিসারের রিপোর্টে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। কলকাতা পুলিশের দেওয়া এই রিপোর্টে অভিযুক্ত হিসাবে নাম রয়েছে তৃণমূল সাংসদ নুসরতের। এর পরই, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ এবং সম্মিলিত অপরাধের ধারায় মামলা হয় এবং আদালতে তরফে সমন জারি করা হয়।
কিন্তু তারপর আর কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। অভিযোগকারীদের আইনজীবী কমল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "প্রথমে গড়িয়াহাট থানায় গিয়েছিলাম, মামলা নেয়নি। তার পর আদালতে যাই আমরা। এর পর নুসরতকে সমন করা হয়। ওয়ারেন্টও হল, কিন্তু তার পরও কিছু হয়নি।" ED-র নোটিস পেয়ে নুসরত যদিও জানিয়েছেন, তদন্তে সবরকম ভাবে সহযোগিতা করবেন তিনি।
কিন্তু নিজের সংস্থা থেকে কি ঋণ নিয়েছিলেন নুসরত? উঠছে প্রশ্ন। ইডি সূত্রে দাবি, মূলত আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগ তারা খতিয়ে দেখবে।
ফ্ল্যাট তৈরির জন্য তোলা টাকা কোথায় গিয়েছে, কার বা কাদের মাধ্যমে গেল, এক্ষেত্রে নুসরতের কোনও ভূমিকা আছে কিনা, সংস্থার ডিরেক্টর হিসেবে কী ভূমিকা তিনি পালন করতেন, এই টাকার বেনিয়মের বিষয়ে তৃণমূল সাংসদ কিছু জানতেন কিনা, এখন সেইসব উত্তরই পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)