এক্সপ্লোর

Singur Movement: দেড় দশক পরও টাটকা ক্ষত, কী বলছে সিঙ্গুর, খোঁজ নিল এবিপি আনন্দ

Singur Land Case: নতুন করে বঙ্গ রাজনীতিতে ফের আলোচনার কেন্দ্রে সিঙ্গুর।

অর্ণব মুখোপাধ্যায়, বিজেন্দ্র সিংহ: নয় নয় করে দেড় দশক কেটে গেলেও, বঙ্গ রাজনীতিতে সিঙ্গুর প্রসঙ্গ এখনও টাটকা। টাটাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে এই মুহূর্তে চরমে দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপের পালা চলছে। কিন্তু সিঙ্গুর এবং সেখানকার কৃষকদের জন্য সিঙ্গুর আন্দোলন ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে, সেখানকার মানুষজন কী বলছেন? খোঁজ নিয়ে দেখল এবিপি আনন্দ। (Singur Movement)

নতুন করে বঙ্গ রাজনীতিতে ফের আলোচনার কেন্দ্রে সিঙ্গুর। কিন্ত সেই নিয়ে তেমন মাথাব্যাথা নেই সিঙ্গুরের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলির। জমি ফেরত পেলেও, সব জমি এখনও চাষযোগ্য হয়ে ওঠেনি। তই স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছিলেন যাঁরা এবং জোর করে জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ শিল্পের পক্ষে সওয়াল করছেন, কেউ কেউ আবার বলছেন জমি চাষযোগ্য করে দিলে ফের চাষের কাজে ফিরতে চান তাঁরা। (Singur Land Case)

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হন স্থানীয় বাসিন্দা চিন্ময় দাস। চোখে জল নিয়ে, ধরা গলায় তিনি বলেন, "প্রায় দেড়-দু'বিঘে জমি ছিল আমাদের।  সেই সময় কৃষিই ঠিক ছিল। জমি চাষযোগ্য না থাকলে শিল্প হলে অসুবিধে নেই। কিন্তু জমি যদি পরিষ্কার করে ফের চাষযোগ্য করে দেওয়া হয়, নতুন করে চাষ করতে পারি। ক্ষতি যা হওয়ার, আগেই হয়ে গিয়েছে। ক্ষতি হয়ে গিয়েছে ২০০৬ সালেই। বাবা চাষের উপরই নির্ভরশীল ছিল। নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া ছাড়তে হয় আমাকে।"

চিন্ময় আরও বলেন, "বাবা চাষের উপর নির্ভর ছিল। কাজ থেকে এসে চাষ করত। আমাদের বড় পরিবার। চাষ এবং চাকরি দু'টোই করতে হতো। লোহার কাজ করত বাবা। ভারী ওজন তুলতে হতো। হাঁটুর সমস্যা ছিল। তাই চাষের কাজই করতে চেয়েছিল। ২০০৬ সালে যখন চাকরি ছাড়বে বলে ভাবছে, তখন জানা গেল জমি অধিগ্রহণ করবে। জমি অধিগ্রহণে সমস্যা ছিল না। কিন্তু যদি লেখা থাকত যে যোগ্য়তা অনুযায়ী কাজ মিলবে, তাহলে কারও কোনও আপত্তি থাকত না।"

আরও পড়ুন: Singur Land Case: জমি ভাগের শর্ত মানেননি বুদ্ধবাবু, বিকল্প জমি নিতে রাজি হয়নি টাটাও, এত বছর পর ক্ষতিপূরণের দায় মমতার কাঁধে

সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানা হয়নি। শিল্পের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গিয়েছে। সেই কারখানা করতে গিয়ে সরকার পড়ে যায় বামেদের, ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় তৃণমূল নেত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছিল যে বিজেপি, বর্তমানে সিঙ্গুরে শিল্পের পক্ষে সওয়াল করছে তারাও। এত কিছুর মধ্যে না পাওয়ার তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হয়েছে সিঙ্গুরবাসীর। 

রাজ্যে ক্ষমতায় এসে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই সিঙ্গুরে জমি ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয় মমতা সরকার। সুপ্রিম কোর্ট বাম আমলের জমি অধিগ্রহণকে অবৈধ বলে রায় দেওয়ার পর, ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে, সিঙ্গুরে জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সিঙ্গুরের জমির একটা বড় অংশে কংক্রিটের টুকরো পড়ে থাকায়, সেখানে চাষ করতে পারছেন না জমি মালিকরা। স্থানীয় বাসিন্দা অমিত হাম্বিরের পরিবার স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছিল। তিনি বলেন, "এখানে কিছু নেই। ওই জমিতে আর চাষ হবে না। শিল্প করতে হবে।"

এই পরিস্থিতিতে বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, "কৃষকের জমিকে সামনে রেখে এরা শিল্প বন্ধ করেছিল। আজ কত ছেলে-মেয়ে বেকার। ট্রেনিংয়ের পর সার্টিফিকেট নিয়েছিল তারা। সেই সার্টিফিকেট জলে চলে গেল। কেউ গুজরাত, কেউ উত্তরপ্রদেশ চলে গিয়েছে। বলা হয় পৃথিবী গোল। এত বছর পর আজ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।"

সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম নেতা, এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে চলে গিয়েছেন। পুরনো দলের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই তাঁর। কিন্তু সিঙ্গুরের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বামেদের দিকেই আঙুল তুলেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, "টাটারা ন্যায্য দাবি করেছে। এর দায় বামফ্রন্টের। আমরা শিল্পের বিরোধী ছিলাম না। পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ছিলাম। কৃষকদের পক্ষে ছিলাম। টাটাদের বিরোধী ছিলাম না। আজ যে টাকা দিতে হচ্ছে, এর দায় সম্পূর্ণ ভাবে বামফ্রন্টের।"

যদিও হুগলি জেলা সিপিএম-এর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমরা এখনও শিল্প চাই। এখন যদি টাকা দিতে হয়, সেটা করদাতারা কেন দেবেন? তৃণমূলের ভুল ছিল।  শিল্পে বাধা দিয়েছিলেন। আমরা শিল্পের পক্ষে।" সিঙ্গুরের বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক এবং কৃষি বিপনণ মন্ত্রী বেচারাম মান্না অবশ্য এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। যদিও সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি মানিকচন্দ্র দাস বলেন, "সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, তাই জমি ফেরানো হয়েছে। যে জায়গায় চাষ হচ্ছে না, সেখানে মালিকরা বর্গা দিয়ে করাচ্ছিল। কিছু সমস্যার জন্য হচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হয়েছিল। "

রাজ্য সরকার টাটাদের ক্ষতিপূরণ দেবে, নাকি ট্রাইব্যুনালের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানাবে, তা সময় বলবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দুর্গতির অবসান দেখছেন না সিঙ্গুরবাসী। 

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

Team India Flight: ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
Hemant Soren: ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত, শপথ নিয়েই ভোটবার্তা, চম্পাই-অস্ত্রে শান বিজেপি-র
ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত, শপথ নিয়েই ভোটবার্তা, চম্পাই-অস্ত্রে শান বিজেপি-র
Narendra Modi in Space: মহাকাশ অভিযানে যাবেন মোদি! আশাবাদী ISRO প্রধান, কংগ্রেস বলল...
মহাকাশ অভিযানে যাবেন মোদি! আশাবাদী ISRO প্রধান, কংগ্রেস বলল...
Mamata Banerjee: এককালীন অবসরভাতা বেড়ে ৫ লক্ষ, প্যারা টিচার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুখবর মমতার
এককালীন অবসরভাতা বেড়ে ৫ লক্ষ, প্যারা টিচার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুখবর মমতার
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

Kolkata Municipality: মুখ্য়মন্ত্রীর বাড়ির কাছে সরকারি সম্পত্তি দখলমুক্ত করল কলকাতা পুরসভা। ABP Ananda LiveDengue In Bengal: বর্ষা আসতেই রাজ্য়ে ফিরেছে ডেঙ্গির ভয়! ABP Ananda LivePetrol Density: গাড়িতে তেল ভরার সময় কোন কোন বিষয়ে নজর রাখা দরকার? না রাখলে কী ক্ষতি হতে পারে?Bhupatinagar Incident: ভূপতিনগর বিস্ফোরণকাণ্ডে প্রথম চার্জশিটেই বিস্ফোরক দাবি NIA-র! ABP Ananda Live

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
Team India Flight: ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
Hemant Soren: ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত, শপথ নিয়েই ভোটবার্তা, চম্পাই-অস্ত্রে শান বিজেপি-র
ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত, শপথ নিয়েই ভোটবার্তা, চম্পাই-অস্ত্রে শান বিজেপি-র
Narendra Modi in Space: মহাকাশ অভিযানে যাবেন মোদি! আশাবাদী ISRO প্রধান, কংগ্রেস বলল...
মহাকাশ অভিযানে যাবেন মোদি! আশাবাদী ISRO প্রধান, কংগ্রেস বলল...
Mamata Banerjee: এককালীন অবসরভাতা বেড়ে ৫ লক্ষ, প্যারা টিচার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুখবর মমতার
এককালীন অবসরভাতা বেড়ে ৫ লক্ষ, প্যারা টিচার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুখবর মমতার
West Bengal Assembly: আমাদের দুর্বল ভাবা ভুল', রাজ্যপালকে নিশানা বিমানের, শপথ জটিলতার মধ্যে কাল বিশেষ অধিবেশন
আমাদের দুর্বল ভাবা ভুল', রাজ্যপালকে নিশানা বিমানের, শপথ জটিলতার মধ্যে কাল বিশেষ অধিবেশন
Bihar Bridge Collapse: ধসে নেমে গেল মাঝের অংশ, নদীতে বসে গেল থাম, বিহারে ফের ভাঙল সেতু, ১৭ দিনে ১২টি
ধসে নেমে গেল মাঝের অংশ, নদীতে বসে গেল থাম, বিহারে ফের ভাঙল সেতু, ১৭ দিনে ১২টি
Brain Eating Amoeba: মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবার সংক্রমণ, পুকুরে স্নান করে চরম পরিণতি কিশোরের
মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবার সংক্রমণ, পুকুরে স্নান করে চরম পরিণতি কিশোরের
Team India Victory Parade Live: বৃষ্টি ও ট্রাফিকের জন্যই পিছিয়ে যাচ্ছে প্যারেডের সময়, এখনও বিমানবন্দরেই রোহিতরা
বৃষ্টি ও ট্রাফিকের জন্যই পিছিয়ে যাচ্ছে প্যারেডের সময়, এখনও বিমানবন্দরেই রোহিতরা
Embed widget