RRR Review: 'আরআরআর' ছবির 'নায়ক' এস এস রাজামৌলির অনবদ্য সিনেম্যাটিক কল্পনা
RRR Review: বিনোদনের রংমশাল। অনবদ্য, অসামান্য বুনোটে টানটান তিন ঘণ্টা দু’মিনিটের এক দুরন্ত রোলারকোস্টার রাইড। এস এস রাজামৌলির ছবি ‘আরআরআর’ দর্শক মনোরঞ্জনে এক নতুন মাইলফলক তৈরি করল।
![RRR Review: 'আরআরআর' ছবির 'নায়ক' এস এস রাজামৌলির অনবদ্য সিনেম্যাটিক কল্পনা RRR Review: review of film RRR by abp ananda director SS Rajamouli did a great job RRR Review: 'আরআরআর' ছবির 'নায়ক' এস এস রাজামৌলির অনবদ্য সিনেম্যাটিক কল্পনা](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2022/04/01/1605996eabf1071a177f145b8b1c36cd_original.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
পুরুষোত্তম পণ্ডিত, কলকাতা: লোড (load), এইম (aim), শ্যুট (shoot)। এই তিনটে শব্দই ভিত গড়ে দিল বৈপ্লবিক এক কাহিনির। এই তিনটে শব্দই চেতনায় গেঁথে দিল পরাধীন ভারতকে ব্রিটিশ মুক্ত করতে হবে। যে কোনও মূল্যে। হলে ঢোকার পর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা কাটিয়ে বেরিয়ে আসার সময়ও এই তিনটে শব্দ কানে বাজতে থাকে। ঘোর লেগে থাকে এক অসামান্য, অনবদ্য সিনে-সফরের মূর্চ্ছনায়। সেই মূর্চ্ছনায় বন্ধুত্বের সুর আছে, প্রেম আছে, যন্ত্রণা আছে, চাবুকের ঘায়ে রক্তক্ষরণ আছে, আর জীবন-মরণ লড়াইও আছে। আর এই মূর্চ্ছনাতেই জাদুকর এস এস রাজামৌলি (SS Rajamouli) সম্মোহিত করে রাখছেন দর্শকদের। হ্যাঁ। ‘আরআরআর’ (RRR) দেখার পর রাজামৌলিকে পরিচালকও বলা যেতে পারে, আবার জাদুকরও বলা যেতে পারে। তিন ঘণ্টা দু’মিনিটের ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই মুগ্ধতায় দর্শকদের পলকহীন ভাবে ধরে রাখার ক্ষমতা তো জাদুকরেরই থাকে! ‘বাহুবলী’, ‘বাহুবলী-টু’ দেখার পর যে বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে হলমুখো হচ্ছেন দর্শকেরা, সেই প্রত্যাশা পূরণে রাজামৌলি ১০০ শতাংশ সফল।
'আরআরআর' ছবির প্রেক্ষাপট
‘আরআরআর’ , রাইজ (Rise), রোর (Roar), রিভোল্ট (Revolt)। ছবিটির কাহিনি শুরু হচ্ছে ভারতের এক প্রত্যন্ত এলাকায় জঙ্গলে ঘেরা আদিবাসী গ্রামে। সেই গ্রামেরই এক কিশোরী মেয়েকে জোর করে নিজের প্রাসাদে নিয়ে আসেন গভর্নর স্কট বক্সটন এবং তাঁর স্ত্রী লেডি বক্সটন। সেই কিশোরীকে আবার তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার শপথ নিয়ে এক অসম লড়াইয়ের জন্য তৈরি হয় তেলঙ্গানার আদিবাসী নেতা ভীম। অন্যদিকে আর এক বিপ্লবী, রামা রাজু। তাঁর বাবা ভেঙ্কটের স্বপ্ন ছিল দেশকে স্বাধীন করতে একদিন প্রত্যেক স্বাধীনতা যোদ্ধার হাতে একটি বন্দুক থাকবে। নিজের গ্রামের লোকেদের বাঁচাতে নিজের শরীরে বিস্ফোরক বেঁধে সে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রিটিশ সেনার। আর বাবার শরীরে বাঁধা সেই বিস্ফোরকে গুলি করে ব্রিটিশদের নিকেশ করেছিল ছোট্ট রামা রাজু। নিজের জীবন দেওয়ার আগে ভেঙ্কট রামাকে দিয়ে শপথ করিয়ে নিয়েছিল, যে ভাবেই হোক একদিন সে প্রত্যেক স্বাধীনতা সংগ্রামীর হাতে বন্দুক তুলে দেবে। বাবাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্যই ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনীতে চাকরি নেয় রামা রাজু। তারপর একটু একটু করে নিজের লক্ষ্যে এগোতে থাকে। এর মাঝেই রামার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় ভীমের। তারপর দু’জনের লক্ষ্যপূরণের পথে হঠাৎ একে অন্যের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। পরিস্থিতির কারণেই বন্ধুত্ব দ্বন্দ্বের রূপ নেয়। তারপর সেই দ্বন্দ্ব মেটে। দুই বন্ধু এক হয়ে লড়ে যায় ব্রিটিশ ঔদ্ধত্যের বিনাশের জন্য। শেষ পর্যন্ত রামা রাজু আর ভীম, দু’জনেরই স্বপ্নই সফল হয়। কাহিনি শেষ হয় এক অনাবিল পরিতৃপ্তিতে।
মুগ্ধ করে 'আরআরআর' ছবির চরিত্ররা
স্বীকার করতেই হবে, ভীমের চরিত্রে এনটিআর জুনিয়র (NTR Jr), রামা রাজুর চরিত্রে রামচরণ (Ram Charan) -এর মতো প্রতিভাবান অভিনেতা থাকলেও এই ছবির নায়ক তাঁরা নন। এই ছবির নায়ক হল এস এস রাজামৌলির সিনেম্যাটিক কল্পনা। ছবির প্রতিটি ফ্রেম যে ভাবে ভিস্যুয়ালাইজ করেছেন রাজামৌলি, তার কোনও তুলনা নেই। মনে হতেই পারে এ যেন সিনেমা নয়, কোনও মার্ভেল কমিক্স। থ্রি-ডি তে মুগ্ধ হয়ে এই ছবি দেখতে দেখতেও মন ফিরে যেতে পারে ছোটবেলায় ফেলে আসা সেই কমিক্সের পাতাগুলোয়। সেখানে বাস্তব আর অবাস্তবের মাঝে কোনও সীমারেখা নেই, সেখানে প্রতিটি চরিত্র অতিমানবীয় ক্ষমতায় বলীয়ান। কাহিনির অসামান্য বুনোটে মন হারিয়ে যায় যাবতীয় প্রশ্ন, যুক্তি, আর তুলনার ঘেরাটোপ থেকে। রামচরণ, এনটিআর জুনিয়র, অজয় দেবগন (Ajay Devgn), আলিয়া ভট্ট (Alia Bhatt), শ্রীয়া শরণ, রে স্টিভেনসন, অ্যালিসন ডুডি - সবাই নিজের নিজের সেরাটুকু উজাড় করে দিয়েছেন তাঁদের চরিত্রে। রাজামৌলির ভাবনাকে অনবদ্যভাবে ক্যামেরায় ধরেছেন সিনেম্যাটোগ্রাফার কে কে সেন্থিল কুমার। আর এডিটিংয়ে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেছেন কে শ্রীকর প্রসাদ। ছবির প্রতিটি গানে এম এম কীরাবাণীর সুর এই ছবির বিশালতাকে ছুঁয়েছে অবলীলায়। ছবিতে বাংলা সংলাপের ব্যবহারে উচ্চারণ সম্পর্কে সজাগ থেকেছেন পরিচালক। কে ভি বিজয়েন্দ্র প্রসাদের লেখা কাহিনিকে চিত্রনাট্যে রূপ দিয়েছেন রাজামৌলি নিজেই। এই মাত্রায় এমন একটা ছবি বানানোর জন্য পরিচালকের যে কুশলতা প্রয়োজন, তা রাজমৌলিকে মৌলিক করে তুলেছে। বাস্তবিক ভাবেই রাজামৌলি এখন ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে রাজার আসনে। সাধারণ ভাবে মনে হতেই পারে সিনেমার দৈর্ঘ্য যখন তিন ঘণ্টা তখন চিত্রনাট্যে দুর্বলতা থাকবেই, কোথাও গল্পে ভাটা পড়বে, কোথাও মনে হবে সংলাপ ক্লান্তিকর। কিন্তু এই সমস্ত ধারণাকে নস্যাৎ করে বিনোদনের এক অদ্ভুত রংমশাল জ্বলতে থাকে টানা তিন ঘণ্টা ধরে। সেই আলোর মুগ্ধতা চোখ মেলে শুধু দেখে যেতে হয়। কল্পনায় ভেসে পড়তে হয়। 'আরআরআর' ভারতীয় সিনেমাকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। এই ছবির ত্রুটি ধরতে যাওয়া, বা সমালোচনার উপাদান খোঁজার চেষ্টা ধৃষ্টতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ভারতীয় সিনেমার কাছে এক বিরাট অভিবাদন প্রাপ্য এস এস রাজামৌলির।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)