Puri Jagannath Rath Yatra: পুরীর রথযাত্রা : জগন্নাথদেবকে কেন খিচুড়ি নিবেদন করা হয় ?
সামনেই রথযাত্রা। তার আগে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বিভিন্ন আকর্ষণীয় বিষয় ও রীতি-নীতি নিয়ে চলছে এই সিরিজ। আজকের প্রতিবেদনেও রইল এরকমই কিছু তথ্য। পর্ব-৫।

পুরী : হিন্দু ধর্মে চার ধামের বিশেষ তাৎপর্য আছে। এই চার ধামের অন্যতম পুরীর জগন্নাথ । কথিত আছে, জগন্নাথদেবের প্রথম পুজো করেছিলেন উপজাতি সম্প্রদায়ের বিশ্ববসু। নীলমাধবের আকারে পূজা করা হয়েছিল তাঁকে। মন্দির স্থাপন করেছিলেন রাজা ইন্দ্রদুম্ন। ঐতিহাসিক দলির অনুযায়ী, বর্তমানে যে জগন্নাথ মন্দিরটি রয়েছে তা দ্বাদশ শতকে স্থাপন করেছিলেন রাজা ছোড়াগঙ্গা দেব। কলিঙ্গ শৈলী মতো এই মন্দিরের স্থাপত্য।
পুরীর রথযাত্রার টানে প্রতি বছর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ হাজির হন। জমে ওঠে ওড়িশার উপকূলবর্তী এই শহর। প্রতিবছর সাধারণত আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিনে এই উৎসব পালিত হয়। রথযাত্রা উপলক্ষে জগন্নাথদেব, বলভদ্র ও সুভদ্রাকে রথে বসানো হয়। বিগ্রহের যাত্রা শুরু হয় তিন কিলোমিটার দূরে গুণ্ডিচা মন্দিরের উদ্দেশ্যে। চতুর্থ দিনে দেবী লক্ষ্মী তাঁর স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে মন্দিরে আসেন। কয়েকদিন পর সেখান থেকে আবার জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রাকে তাঁদের নিজের জায়গায় ফিরিয়ে আনা হয়।
এহেন জগন্নাথদেবকে খিচুড়ি ভোগ দেওয়া হয়। কিন্তু, কেন খিচুড়ি-ই দেওয়া ? তা নিয়ে ভক্তদের মধ্যে কৌতূহল আছে। এর পিছনে রয়েছে জনশ্রুতি। কথিত আছে, কর্মাবাঈ নামে এক ধর্মপ্রাণ মহিলা ছিলেন। তিনি পুরীতে থাকতেন। জগন্নাথদেবকে তিনি সন্তান হিসেবে দেখতেন। তাঁর পুজো করতেন। একদিন জগন্নাথকে খিচুড়ি খাওয়ানোর ইচ্ছা হল তাঁর। ধর্মপ্রাণ মায়ের মনোবাসনার কথা বুঝতে পারলেন জগন্নাথদেব। তাই নিজেই মায়ের সামনে হাজির হয়ে খিদে পাওয়ার কথা জানালেন। কর্মাবাঈ তখন খিচুড়ি রান্না করে ভগবানকে তা নিবেদন করেন। এর পর থেকে প্রতিদিন খিচুড়ি খাওয়ার ইচ্ছার কথা কর্মাবাঈকে জানান জগন্নাথদেব।
একদিন এক মহাত্মা কর্মাবাঈকে বললেন, রোজ স্নান করে জগন্নাথকে পুজো দিতে। পরের দিন স্নান করার পর খিচুড়ি রাঁধেন তিনি। যদিও একটু দেরি হয়ে যায়। যখন জগন্নাথদেব পৌঁছান, তখন তিনি কর্মাবাঈকে বলেন তাড়াতাড়ি খিচুড়ি দিতে। কারণ, মন্দির খোলার সময় হয়ে গেছে। কর্মাবাঈ খিচুড়ি পরিবেশন করার পর, জগন্নাথ তা দ্রুত খেয়ে নিয়ে মন্দিরে ফিরে যান। তাঁর মুখে একটু খাবার লেগেছিল।
এদিকে মুখে খাবার লেগে থাকতে দেখে মন্দিরের পুরোহিত বিষয়টি জানার চেষ্টা করেন। তখন জগন্নাথদেবই তাঁকে খিচুড়ির পুরো গল্পটা শোনান। এর পর থেকে প্রতিদিন কর্মাবাঈ জগন্নাথকে খিচুড়ি খাওয়াতেন। কিন্তু, একদিন কর্মাবাঈ মারা গেলেন। মন্দিরের পুরোহিত দেখেন, জগন্নাথ কাঁদছেন। তিনি কারণ জানতে চান। জগন্নাথ তাঁকে কর্মাবাঈয়ের মৃত্যুর কথা জানান। এর পাশাপাশি পুরোহিতকে জিজ্ঞাসা করেন, এর পর থেকে কে তাঁকে রোজ খিচুড়ি খাওয়াবেন ? পুরোহিত তাঁকে জানান, তিনিই তাঁকে রোজ খিচুড়ি খাওয়াবেন। এরপর থেকে পুরোহিত রোজ জগন্নাথদেবকে খিচুড়ি খাওয়াতেন। সেই থেকে সকালে প্রভুকে খিচুড়ি খাওয়ানোর রীতি চলে আসছে বলে বিশ্বাস।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
