(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
চৈত্র মাসে কেন রাখা হয় সন্ন্যাস? গাজন উৎসবের তাৎপর্যই বা কী
Shiv Gajan: চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ জুড়ে শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হয়। চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক পুজোর সঙ্গে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। গাজন হল পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে উদযাপিত হওয়া একটি সনাতন ধর্মীয় লোক উৎসব।
“আমরা দুটি ভাই শিবের গাজন গাই, ডুগডুগি বাজাই।” গ্রামে এমনকী কলকাতাতে বসবাসকারী অনেকেই মনে হয় ছোটবেলায় নিজের ভাই বা ভাইসম বন্ধুর সঙ্গে বগল বাজিয়ে এই গানটা গেয়েছেই গেয়েছে! আর কয়েকদিন পরেই চৈত্রের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সেই শিবের গাজন (shiv gajan)। যাকে কেন্দ্র করে শহর না হলেও গ্রামে শুরু হয়ে গেছে প্রস্তুতি। দক্ষিণ ভারতের মানুষরা যেমন তাঁদের আরাধ্য দেবতা আয়াপ্পার জন্য ৪০ দিন সাত্ত্বিক জীবন যাপন করে কৃচ্ছসাধনের মাধ্যমে ইষ্ট দেবতার কৃপা পেতে চান তেমনি পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশেও সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষরা শিবের গাজনের মাধ্যমে নিজেদের ইষ্টের সঙ্গে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করেন। তার জন্য অনেকে পুরো চৈত্র মাস ধরে পালন করেন সন্ন্যাস। যার অবসান হয় চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত গাজন উৎসবের মধ্যে দিয়ে। আর গাজনের পরিসমাপ্তি হয় চড়ক পূুজোতে (charak puja)।
গাজন উৎসব ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ও বাংলাদেশে উদযাপিত একটি সনাতন ধর্মীয় লোক উৎসব। এই উৎসব শিব, মনসা ও ধর্মরাজ ঠাকুরের পুজোকেন্দ্রিক উৎসব। মালদায় এই গাজনের নাম গম্ভীরা আর জলপাইগুড়িতে গমীরা। চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহজুড়ে সন্ন্যাসী বা ভক্তদের মাধ্যমে শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হয়। আর চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক পুজোর সঙ্গে সঙ্গে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। ধর্মের গাজন বা ধর্মরাজ ঠাকুরের সাধারণত বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে পালিত হয়। চৈত্র মাস ছাড়া বছরের অন্য সময় শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হলে তাকে হুজুগে গাজন বলা হয়। গাজন সাধারণত তিনদিন ধরে চলে। এই উৎসবের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল মেলা।
গাজনের সন্ন্যাসী বা ভক্তরা নিজেদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে যন্ত্রণা দিয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ইষ্ট দেবতাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন। গাজন উপলক্ষ্যে তাঁরা শোভাযাত্রা সহকারে দেবতার মন্দিরে যান। শিবের গাজনে দু'জন সন্ন্যাসী শিব ও গৌরী সাজেন এবং অন্যান্যরা নন্দী, ভৃঙ্গী, ভূতপ্রেত ও দৈত্য-দানব প্রভৃতির সং সেজে নাচ করতে থাকেন। শিবের নানান লৌকিক ছড়া, আবৃত্তি ও গান করা হয়। চৈত্র সংক্রান্তির গাজনে কালীর নাচও একটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান। আর ধর্মের গাজনের বা ধর্ম ঠাকুরের গাজনের বিশেষ অঙ্গ হল নরমুণ্ড বা গলিত শব নিয়ে নাচ। জ্যৈষ্ঠমাসে মনসার গাজনে মহিলা সন্ন্যাসী বা ভক্তরা অংশ নেন, তাঁরা শিবের গাজনের সময় হওয়া চড়ক পুজোর সন্ন্যাসীদের মতোই নানা কৃচ্ছসাধনের অনুষ্ঠান পালন করেন।
প্রাচীনকাল থেকেই রাঢ়বঙ্গের শৈব-সংস্কৃতির একটি বিশেষ অঙ্গ হচ্ছে গাজন। গাজন কথাটির মানে হল, গাঁ বা গ্রাম এবং জন বা জনগণ। অর্থাৎ গাজন হল গ্রামের জনগণের নিজস্ব উৎসব। অতীতে চৈত্র মাসে সূর্যের তীব্র তাপের থেকে বাঁচতে তাঁর সঙ্গে পৃথিবীর প্রতীকী বিয়ে দেওয়ার অনুষ্ঠানকেই গাজন হিসেবে উল্লেখ করা হত। তবে উভয় বাংলাতেই শিবের গাজনের পাশাপাশি ধর্ম ঠাকুরের গাজন ও কালীর গাজন হয় নানা জায়গায়। তবে চৈত্র মাসের বদলে অন্য মাসে তিন দিনের জন্য হওয়া শিবের গাজনকে আদিকাল থেকেই হুজুগে গাজন বলে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন: Poila Boisakh 2024: পয়লা বৈশাখের প্রারম্ভক্ষণ ১৪ না ১৫ এপ্রিল ? কবে শুরু নববর্ষ ১৪৩১ ?
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।