এক্সপ্লোর

Meghnad Saha: আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যেই প্রত্যন্ত গ্রামে পড়াশোনা ! নজরকাড়া যাত্রাপথ দুনিয়া-খ্যাত বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার

Indian Scientist: রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে অধ্যাপক হিসাবে যোগদান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাপ গতিবিদ্যা পড়ানো শুরু করেন সাহা

কলকাতা : গত ২০ বছর ধরে, আমি পুঙ্খনাপুঙ্খভাবে বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, শাস্ত্র, জ্যোতিশাস্ত্রের বই এবং বিজ্ঞানীর উপর বিভিন্ন প্রাচীন লেখালেখিতে খুঁজে চলেছি, কিন্তু সেইসবে আধুনিক বিজ্ঞানের কোনও শিখর খুঁজে পাইনি। 'আধুনিক বিজ্ঞান ও হিন্দু ধর্ম' শীর্ষক এক প্রবন্ধে এমনই উল্লেখ করেছিলেন প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী (Astrophysicist) মেঘনাদ সাহা (Meghnad Saha)।

জীবনের বিভিন্ন সময়ে জাতপাতের শিকার হওয়ায় অল্প বয়স থেকেই বৈদিক হিন্দু ধর্মের গোঁড়ামির প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মেছিল মেঘনাদ সাহার মনে। তাই যে কোনও বিষয়ের গোঁড়ায় গিয়ে তার সারসত্য খুঁজে বের করার নেশা ছিল তাঁর মজ্জাগত। উপরোক্ত প্রবন্ধেই তিনি দাবি করেছিলেন, 'জীবাশ্ম-জ্ঞানী' ব্যক্তিরা ছাড়া আর কেউ এই দাবি করার সাহস করবে না যে হিন্দুদের বেদে সবকিছু রয়েছে।

হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের এই দাবিও তিনি নস্যাৎ করেছিলেন যে, ইংরেজ গণিতজ্ঞ আইজ্যাক নিউটনের (১৬৪৩-১৭২৭) বহু শতাব্দী আগে দ্বাদশ শতকের প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ ভাস্করাচার্য মাধ্যাকর্ষণ শক্তি খুঁজে বের করেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ভাস্করাচার্য উপবৃত্তাকার কক্ষপথে গ্রহদের ভ্রমণের কথা উল্লেখ করেননি বা প্রমাণ করেননি যে মহাকর্ষ এবং গতিবিদ্যার নিয়ম প্রয়োগ করে এই কক্ষপথগুলি নিশ্চিত করা যায়।

সাহা এও বলেছিলেন যে, হিন্দুদের অবতারবাদের (পুনর্জন্ম) তত্ত্বকে বিবর্তনের সঙ্গে তুলনা করাও হাস্যকর বিষয় ছিল। তিনি সরাসরি লিখেছিলেন, বিবর্তনের তত্ত্বকে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান আবিষ্কার এবং ভালভাবে পরীক্ষিত তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানীদের সংগ্রহ করা প্রাচীনকালের হাজার হাজার জীবের দেহাবশেষের আবিষ্কার। এই অবশিষ্টাংশগুলি বৈজ্ঞানিকভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে, তাদের কালানুক্রম যুক্তির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ভৌত বিজ্ঞানের পদ্ধতি ব্যবহার করে তারিখ দেওয়া হয়েছে।

আধুনিক বিজ্ঞানের বৈদিক-শিখর সংক্রান্ত হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের দাবি নিয়ে বিশ্বমানের কোনও ভারতীয় বিজ্ঞানীর পর্যবেক্ষণ হিসাবে রয়ে গেছে সাহার-এই লেখনিগুলি। এহেন মেঘনাদ সাহার জীবনের শুরুটা প্রতিকূলতায় ভরা ছিল। 

১৮৯৩ সালের ৬ অক্টোবর তৎকালীন ঢাকা জেলার শেওড়াতলী গ্রামে (বর্তমানে বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর জেলা) জন্ম মেঘনাদ সাহার। বাবা জগন্নাথ সাহা ছিলেন একজন মুদি। মা ভুবনেশ্বরী সাহা। তৎকালীন সময়ে ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে শৈশব হোক বা কিশোর বয়স, এমনকী কর্মজীবনেও জাতপাতের শিকার হতে হয় সাহাকে।  গ্রামের টোলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। বাবা অবশ্য চেয়েছিলেন, ছেলে লেখাপড়ার থেকে দোকানের কাজ শিখুক। কিন্তু, দাদা ও মায়ের প্রচেষ্টা এবং ইতিহাস ও গণিতে মেধার কথা বিবেচনা করে, মেঘনাদকে হাই স্কুলে ভর্তি করতে রাজি হন মেঘনাদের বাবা। কিন্তু, সাত মাইল দূরে যাতায়াত করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া তাঁর পক্ষে কঠিন হয়ে ওঠে। বাবার আর্থিক সামর্থ্যও সেরকম ছিল না। তাই দূরের শিমুলিয়া গ্রামের এক চিকিৎসক মেঘনাদের দাদার অনুরোধে তাঁর বাড়িতে রেখে পড়াশোনা করাতে সম্মত হন। সেখানার স্কুল থেকেই শেষ পরীক্ষায় ঢাকা জেলার মধ্যে প্রথম হন সাহা।

এরপর কিশোরীলাল জুবিলি হাই স্কুল। সেখান থেকে ১৯০৯ সালে পূর্ববঙ্গের সমস্ত স্কুলের মধ্যে প্রথম স্থান পেয়ে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বৃত্তি-সহ উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকা কলেজে ইন্টারমিডিয়টে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯১১ সালে গণিতে অনার্স নিয়ে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৩ সালে গণিতে স্নাতক এবং ১৯১৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। উভয় পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রথম হন। বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ১৯১৯ সালে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি দেয়। গবেষণার সুযোগ মেলে ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে। 

রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে অধ্যাপক হিসাবে যোগদান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাপ গতিবিদ্যা পড়ানো শুরু করেন সাহা। সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আবিষ্কারের তিন বছরের মধ্যেই তিনি ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু সেটা জার্মান থেকে অনুবাদ করেছিলেন। এটাই ইংরেজি ভাষায় সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের সর্বপ্রথম অনুবাদ বলে বিবেচিত। ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিএসসি ডিগ্রি পান, বিকিরণ চাপ সম্পর্কিত গবেষণার জন্য।

তাপীয় আয়নায়ন তত্ত্ব বিষয়ে Ionisation of the solar chomosphere শীর্ষক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেন মেঘনাদ সাহা। 

১৯২১ সালে চলে যান এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ করতে। আবার ১৯৩৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। কলকাতায় ফিরে তাঁর গবেষণার মূল বিষয় ছিল- নিউক্লিয়ার ফিজিক্স। তাঁর গবেষণার মূল বিষয়গুলি হয়ে উঠেছিল- জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান। বিকিরণ তাপ, তাপগতিতত্ত্ব, বর্ণালী বিজ্ঞান, পরমাণু বিজ্ঞান এবং আয়নোস্ফিয়ার সম্পর্কিত অনেক গবেষণা করেছেন সাহা।

শুধু একজন সফল বিজ্ঞানীই নন, সক্রিয় ও চিন্তাশীল রাজনীতিবিদও ছিলেন সাহা। মহাত্মা গাঁধীর মতাদর্শের সঙ্গে মিলত না তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ। ১৯৫২ সালে কলকাতা উত্তর-পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্র (বর্তমানে কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্র) থেকে বামপন্থী দলের সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়ান। জয়লাভও করেন ।

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

Stock market Crash: দু-বছরে সবথেকে বেশি পতন, টানা ৮ দিন পড়ল বাজার, কোথায় সাপোর্ট জানেন ?
দু-বছরে সবথেকে বেশি পতন, টানা ৮ দিন পড়ল বাজার, কোথায় সাপোর্ট জানেন ?
Note Exchange Rules : ছেঁড়া নোট হলেই পাল্টে দেয় ব্যাঙ্ক, ভুল ধারণা আপনার, কী আসল নিয়ম ?
ছেঁড়া নোট হলেই পাল্টে দেয় ব্যাঙ্ক, ভুল ধারণা আপনার, কী আসল নিয়ম ?
RCB New Captain: নতুন মরশুমের আগে অধিনায়ক ঘোষণা করল আরসিবি, অবশেষে কার হাতে উঠল দায়িত্ব?
নতুন মরশুমের আগে অধিনায়ক ঘোষণা করল আরসিবি, অবশেষে কার হাতে উঠল দায়িত্ব?
WB Voter Data Row: মহারাষ্ট্র, দিল্লির পুনরাবৃত্তি বাংলায়? ’২৬-এর আগে ভুয়ো ভোটার নথিভুক্তির অভিযোগ, ‘ভুতুড়ে পার্টি’র বিরুদ্ধে সরব মমতা, কমিশনে যাচ্ছে TMC
মহারাষ্ট্র, দিল্লির পুনরাবৃত্তি বাংলায়? ’২৬-এর আগে ভুয়ো ভোটার নথিভুক্তির অভিযোগ
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

Narendra Modi: আদানির সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা হয়েছে? কী বললেন মোদি ? | ABP Ananda LIVEMohan Bhagwat: ১৬ ফেব্রুয়ারি মোহন ভাগবতের সভায় অনুমতি কলকাতা হাইকোর্টের | ABP Ananda LIVEBangladesh News: ফের বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত BSF ! | ABP Ananda LIVESantipur News: অসুস্থ শিশু বমি করে ফেলার শাস্তি, পরিষ্কার করতে হল বাবাকে! | ABP Ananda LIVE

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
Stock market Crash: দু-বছরে সবথেকে বেশি পতন, টানা ৮ দিন পড়ল বাজার, কোথায় সাপোর্ট জানেন ?
দু-বছরে সবথেকে বেশি পতন, টানা ৮ দিন পড়ল বাজার, কোথায় সাপোর্ট জানেন ?
Note Exchange Rules : ছেঁড়া নোট হলেই পাল্টে দেয় ব্যাঙ্ক, ভুল ধারণা আপনার, কী আসল নিয়ম ?
ছেঁড়া নোট হলেই পাল্টে দেয় ব্যাঙ্ক, ভুল ধারণা আপনার, কী আসল নিয়ম ?
RCB New Captain: নতুন মরশুমের আগে অধিনায়ক ঘোষণা করল আরসিবি, অবশেষে কার হাতে উঠল দায়িত্ব?
নতুন মরশুমের আগে অধিনায়ক ঘোষণা করল আরসিবি, অবশেষে কার হাতে উঠল দায়িত্ব?
WB Voter Data Row: মহারাষ্ট্র, দিল্লির পুনরাবৃত্তি বাংলায়? ’২৬-এর আগে ভুয়ো ভোটার নথিভুক্তির অভিযোগ, ‘ভুতুড়ে পার্টি’র বিরুদ্ধে সরব মমতা, কমিশনে যাচ্ছে TMC
মহারাষ্ট্র, দিল্লির পুনরাবৃত্তি বাংলায়? ’২৬-এর আগে ভুয়ো ভোটার নথিভুক্তির অভিযোগ
Capital Punishment in India: শেষবার নির্ভয়ার দোষীদের ফাঁসি, মৃত্যুদণ্ডের সাজা কার্যকর হয়নি কয়েকশো অপরাধীর, TMC-র দেবকে জানাল কেন্দ্র
শেষবার নির্ভয়ার দোষীদের ফাঁসি, মৃত্যুদণ্ডের সাজা কার্যকর হয়নি কয়েকশো অপরাধীর, TMC-র দেবকে জানাল কেন্দ্র
WB State Budget : দেশের তুলনায় বেকারত্বে কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলা ? পরিসংখ্যান দিয়ে এই দাবি অর্থমন্ত্রীর
দেশের তুলনায় বেকারত্বে কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলা ? পরিসংখ্যান দিয়ে এই দাবি অর্থমন্ত্রীর
Samay Raina: 'ইন্ডিয়াজ গট ল্যাটেন্ট'-এর সব ভিডিয়ো মুছে দিলেন সময়; চরম কটাক্ষের মাঝে কী লিখলেন ?
'ইন্ডিয়াজ গট ল্যাটেন্ট'-এর সব ভিডিয়ো মুছে দিলেন সময়; চরম কটাক্ষের মাঝে কী লিখলেন ?
Greece Earthquake Swarm: দু’সপ্তাহে ৮০০০ ভূমিকম্প, গ্রিস এখন টাইম বোমা, শেষের শুরু, বলছেন বিজ্ঞানীরা
দু’সপ্তাহে ৮০০০ ভূমিকম্প, গ্রিস এখন টাইম বোমা, শেষের শুরু, বলছেন বিজ্ঞানীরা
Embed widget

We use cookies to improve your experience, analyze traffic, and personalize content. By clicking "Allow All Cookies", you agree to our use of cookies.