(Source: Poll of Polls)
Adenovirus : 'মহামারীর আকার নিয়েছে অ্যাডিনো ভাইরাস', বাড়ির খুদেকে সামলে রাখবেন কীভাবে ? জানাচ্ছেন চিকিৎসক
ABP LIVE Exclusive : অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কাদের বেশি ? বাড়ির শিশুটিকে সাবধানে রাখবেন কীভাবে ? সাধারণ ভাইরাস জ্বরের সঙ্গে এর তফাৎ কোথায় ? দরকার কী কী সতর্কতা ?
নিবেদিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা : রাজ্যজুড়ে এই মুহূর্তে আতঙ্কের নাম অ্যাডিনোভাইরাস। কিন্তু কী এই অ্যাডিনোভাইরাস ? কীভাবে তা ছড়িয়ে পড়ে ? আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কাদের বেশি ? বাড়ির শিশুটিকে সাবধানে রাখবেন কীভাবে ? সাধারণ ভাইরাস জ্বরের সঙ্গে এর তফাৎ কোথায় ? দরকার কী কী সতর্কতা ? এবিপি লাইভকে দেওয়া বিসেষ সাক্ষাৎকারে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূণ গিরি (Doctor Pravash Prasun Giri)। যিনি শহরের এক নামী হাসপাতালে পিআইসিইউ-র দায়িত্বেও। বর্তমানে রাজ্যজুড়ে অ্যাডিনোভাইরাসের মহামারী চলছে বলেই সতর্ক করেছেন তিনি।
অ্যাডিনোভাইরাস কী ? কী কী ভাবে সংক্রমণ ?
অ্যাডিনোভাইরাস (AdenoVirus) একটি ডিএনএ ভাইরাস। সর্দি-কাশি-হাঁচির মাধ্যমে একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষের দেহে প্রবেশ করে। করোনার মতোই ছোঁয়াছে অ্যাডিনোভাইরাস। এক্ষেত্রেও ড্রপলেট ও এয়ারোসোলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অ্যাডিনোভাইরাসের আক্রমণে পেটের সমস্যা তৈরি হয়। তাই সেখান থেকেও সংক্রমণ ছড়ায়। পাশাপাশি চোখেও হয় সংক্রমণের (কনজাংটিভাইটিস) মাধ্যমেও ছড়াতে পারে অ্যাডিনোভাইরাস। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে স্কুল বা ভিড়যুক্ত জায়গায় গিয়ে বা বাড়ির বড়দের ক্ষেত্রে সংক্রমিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। করোনার মতোই সোয়াব নিয়ে নিশ্চিত হতে হয়। তবে অ্যাডিনোভাইরাসের পরীক্ষা সব জায়গায় হয় না ও তা ব্যয়বহুলও।
কী কী উপসর্গ ?
বিগত মাসখানেক ধরে দেখা যাচ্ছে যেসব বাচ্চারা সর্দি-কাশি-হাঁপানি-শ্বাসকষ্ট-নিউমোনিয়া-রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট জাতীয় সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগের মধ্যেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণ। যে হারে শিশুরা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বা আইসিইউতে ভর্তি হচ্ছে, তাতে বলাই যায় কলকাতা সহ রাজ্যে এই মুহূর্তে অ্যাডিনো ভাইরাসের এডিডেমিক (মহামারী) চলছে। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে এরকম অ্যাডিনো ভাইরাস অ্যাডিনো ভাইরাস মহামারীন্যায় পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল। ২০১৮-'১৯ নাগাদ অ্যাডিনো ভাইরাসে এডিডেমিক দেখা গেলেও তা এতটা ভয়ঙ্কর চেহারা ধারণ করেনি। সাধারণ ভাইরাল ফিভারের মতোই উপসর্গ। কিন্তু এবারে অ্যাডিনোভাইরাসের সবথেকে ভয়াবহ ও সংক্রামক টাইপ ৩ ও টাইপ ৭-এর আক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে বলেই নাইসেডের জিনোমিক্স পরীক্ষায় পাওয়া গিয়েছে।
ভাইরাল জ্বরের থেকে তফাৎ কোথায় ?
সাধারণ ভাইরাল ফিভারের ক্ষেত্রে দিনকয়েক জ্বর থাকে। তবে অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ হলে দীর্ঘদিন ধরে তীব্র জ্বর থাকছে। সাত, দশ থেকে কোনও কোনও ক্ষেত্রে দিন চোদ্দ পর্যন্ত তীব্র জ্বর থাকছে বাচ্চাদের। তাপমাত্রা কোথাও কোথাও ১০৪ বা ১০৬ ডিগ্রিতে পৌঁচে যাচ্ছে। জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত প্যারাসিটামল ব্যবহার করলেও অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে জ্বর সেভাবে কমে না। অনেক সময় তীব্র কাঁপুনি নিয়ে জ্বর আসতে পারে। ঠোঁট, মুখ লাল হয়ে যায়। ফুসফুস, চোখ পেটে ইনফেকশন তৈরি করে এই ভাইরাস। যার জেরে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে বাচ্চাদের।
কারা আক্রান্ত হচ্ছে ?
সমস্ত বয়সের বাচ্চারাই আক্রান্ত হচ্ছে অ্যাডিনো ভাইরাসে। তবে ২ বছরের কম ও ১ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের তীব্রতা অনেক বেশি। এই বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা যাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগকে আইসিইউ বা ভেন্টিলেশনে রাখতে হচ্ছে। বয়সে খানিক বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সর্দি, কাশি, জ্বর, অল্প নিউমোনিয়া বা কনজাংটিভাইটিসেই সীমাবদ্ধ থাকছে ভাইরাসের সংক্রমণ। বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হচ্ছে না। তবে ২ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ হয়ে উঠছে মারাত্মক। অ্যাডিনোভাইরাসের আক্রমণে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। বড়দের ক্ষেত্রেও সর্দি-কাশিতেই সীমাবদ্ধ থাকছে বিষয়টা।
কী কী সতর্কতা দরকার ? কীভাবে চিকিৎসা ?
বাড়ির বড়রা যদি সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন, তাহলে বাচ্চাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাই শ্রেয়। বাড়িতে সেক্ষেত্রে মাস্ক পরে থাকতে হবে। বাচ্চাদের জ্বর হলে জোর করে স্কুলে পাঠাবেন না। শ্বাসকষ্ট না হলে হাসপাতালে ভর্তি করার দরকার নেই। উপসর্গ ভিত্তিতে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। জ্বর, সর্দি হলে সেরকম চিকিৎসা। তবে শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়। প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক বা অক্সিজেনের সরবরাহ যাতে দ্রুত শুরু হয়। প্রয়োজন হতে পারে আইসিইউতে স্থানান্তর করা। সেভাবে কোনও ওষুধ নেই অ্যাডিনোভাইরাসের বিরুদ্ধে। আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আর কোনও রকম উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )