Sourav Chakraborty Exclusive: 'সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়ে লুচি তরকারি খেতাম, কবিতা শোনাতাম ফোন করে'
Sourav Chakraborty Exclusive: বাবা চেয়েছিলেন, ছেলে অভিনয় করুক। আর ছেলে? অভিনয়ের পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই তাঁর কবিতা লেখার বড্ড শখ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি।
কলকাতা: বাবা চেয়েছিলেন, ছেলে অভিনয় করুক। আর ছেলে? অভিনয়ের পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই তাঁর কবিতা লেখার বড্ড শখ। আস্তে আস্তে বয়স বাড়ছে যখন, বইমেলার বইয়ের ব্যাগে ভূতের গল্পের সঙ্গে জায়গা করে নিচ্ছিল শক্তি চট্টোপাধ্যায়, ভাস্কর চক্রবর্তী, তুষার রায়ের কবিতাসমগ্ররা। বাবা দেখতেন, প্রশ্রয় দিতেন, খুশি হতেন মনে মনে। তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি পরিচালনাতেও হাত পাকিয়েছেন। এই সবের মধ্যে পড়ে, কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল ছোটবেলার সেই কবিতা লেখার অভ্যাস। বহু বছর পর, বাবার জন্মদিনে ফের কলম ধরলেন সৌরভ চক্রবর্তী (Sourav Chakraborty)।
বাবার জন্মদিনের আগের রাতে চলছিল নতুন সিরিজের লুক সেট। সেখান থেকে ফিরে এবিপি লাইভের সঙ্গে কথা বলছিলেন অভিনেতা। জি ৫-এর নতুন ওয়েব সিরিজ 'শ্বেত কালী'-তে অভিনয় করছেন সৌরভ। সানি ঘোষ পরিচালিত রহস্য রোমাঞ্চ এই সিরিজে একটি পরিবারের গল্প বলবে। কিন্তু শুধুই পরিবার নয়, সেই পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে অতিপ্রাকৃত সব ঘটনা। পুরনো বাড়ির দেওয়াল ভেঙে বেরিয়ে আসা একটা সাদা কালীমূর্তিকে ঘিরেই মোড় ঘুরবে গল্পের। সামনেই সপ্তাহ থেকেই শুরু হলে শ্যুটিং।
শ্যুটিং, পরিচালনা সব পেরিয়েও ইদানিং লেখার জন্য সময় বের করে ফেলছেন সৌরভ, অভিনেতা বলছেন, 'একবার বাবার জন্মদিনে মনে হল, তাঁর উদ্দেশে কিছু লিখি। ছোটবেলার অনেক ঘটনাই তো ভুলে যাই। যেটুকু মনে আছে লিখে রাখা ভালো। সেই শুরু। আস্তে আস্তে লেখার অভ্য়াসটা ফিরিয়ে আনলাম। তারপর নিজের লেখাগুলোই ছোট ছোট ভিডিও করে ফেসবুকে দিতে শুরু করালম। অবাক হয়ে দেখলাম প্রচুর মানুষ দেখছেন। শুধু তাই নয়, কমেন্টে অনেকে লিখছেনও ছন্দ মিলিয়ে। এই আদানপ্রদানটা বেশ লাগল। ছন্দহীন জীবনে যদি এমন করে একটু ছন্দ খুঁজে পাওয়া যায় ক্ষতি কী? অনেকে লেখেন, আমার কবিতার জন্য অপেক্ষা করেন। খুব উৎসাহিত করে এগুলো। মনে হয় এটাই খুব বড় পাওনা।'
আরও পড়ুন:শ্যুটিং ফ্লোরে ফিরলেন করোনামুক্ত সুদীপা
প্রশংসা এসেছে, আর প্রেম প্রস্তাব? হাসতে হাসতে সৌরভ বললেন, 'একটা কথা তো খুব শুনি। 'ক্রাশ খেয়েছি'। অনেকে আবার রীতিমতো কবিতার ছন্দেই প্রেম নিবেদন করে ফেলেন।' এইসব প্রেমিকাদের জন্য কলম ধরবেন? একটু লাজুক হেসে সৌরভ বললেন, 'আমি কবিতার মধ্যে দিয়ে প্রেমের কথা, জীবনের কথা বলার চেষ্টা করি। ব্যাস।'
ছোটবেলা থেকেই বইয়ের নেশা। সৌরভ বলছেন, 'ছোটবেলা থেকে গোটা পরিবার মিলে বইমেলায় যেতাম। মায়ের কাছে গল্প শুনতে শুনতে দুপুরে ঘুমাতাম। আমি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে (Sunil Gangopadhyay) খুব কাছের থেকে দেখেছি। ছোটবেলায় আমার কবিতা শোনানোর স্বভাব ছিল। আমি টেলিফোন ডিরেক্টরি খুঁজে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে ফোন করেছিলাম একবার। তখন ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে পড়ি। সেসময় উনি বাড়িতে ছিলেন না। ওনার স্ত্রী ফোন ধরে বলেন বিকেলে ফোন করতে। বিকেলে আমি আবার ফোন করে ওনাকে কবিতা শোনাই। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার কবিতা শুনে আমায় বাড়ি আসতে বলেন। সেই থেকেই শুরু। আমি এরপর হামেশাই ওনার বাড়ি গিয়েছি। লুচি-তরকারি খেয়েছি, কবিতার আলোচনায় থেকেছি। উনি আমায় কবিতার বই উপহার দিয়েছিলেন। মনে আছে, একবার রামায়ণ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আমি ওনাকে বলেছিলাম, আমার রাবণ খুব প্রিয়। নিজের মতো করে ব্যাখ্যাও দিয়েছিলাম। তাতে উনি বেশ মজা পেয়েছিলেন।'
এখানেই শেষ নয়, সৌরভ বললেন, 'আমি তারাপদ রায়ের বাড়িতেও গিয়েছি একাধিকবার। এমন হাফ প্যান্ট পরা কবি তো খুব একটা পাওয়া যায় না। সবাই খুব স্নেহ করতেন তাই। তারাপদ রায়ের বাড়িতে যেতে দেরি হলে উনি ক্যালেন্ডারে ছন্দ করে স্টিকারে লিখে রাখতেন। কবীর সুমনকে এমন করে কবিতা শোনাতে গিয়ে ওনার মায়ের সঙ্গেও আলাপ হয়েছিল।'
ছোটবেলার 'হাফ প্যান্ট পরা কবি' এখন ব্যস্ত অভিনেতা, পরিচালক। তারপরেও, আজ বাবার জন্মদিনে তাঁকে উদ্দেশ্য করে সৌরভ লিখছেন, 'কোনও একদিন লোডশেডিং-এর রাতে/ এই পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়ার পরে/ গুটিসুটি মেরে তোমার লেপে ঢুকে/ দেখব ক্রিকেট মহাকাশের ঘরে'