Shivaji Tiger Claw: সত্যি সত্যিই শিবাজি-ব্যবহৃত, নাকি গোটাটাই ‘গিমিক’, ভোটের আগে ‘বাঘ নখ’ নিয়ে জোর বিতর্ক মহারাষ্ট্রে
Chhatrapati Shivaji: মারাঠা বীর, শিবাজিকে নিয়ে কম জয়গাথা নেই। কৌশলে শত্রুপক্ষকে মাত দেওয়ার জন্যই ইতিহাস মনে রেখেছে তাঁকে।
নয়াদিল্লি: ২০০ বছর ধরে শুধু শোষণই নয়, ভারত থেকে বহুমূল্য জিনিসপত্রও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল ইংরেজরা। এর মধ্যে কোহিনুর নিয়েই আলোচনা সব চেয়ে বেশি। কিন্তু আরও বহু দুর্মূল্য জিনিস আজও ইংরেজদের দখলে রয়েছে। এর মধ্যে একটি 'বাঘ নখ' নিয়ে এবার বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সেটি ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের (Chhatrapati Shivaji) বলে দাবি করছে রাজ্যের বিজেপি এবং একনাথ শিন্ডে নেতৃত্বাধীন শিবসেনার (অধুনা) জোট সরকার। কিছু সময়ের জন্য ওই 'বাঘ নখ'দেশে আনা হচ্ছে। শিবাজির সিংহাসনে আরোহনের ৩৫০তম বছর ২০২৩। সেই আবহেই তাঁর ব্যবহৃত 'বাঘ নখ' ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আর তাতেই জোর পেয়েছে বিতর্ক। ওই 'বাঘ নখ' আসলে শিবাজির নয়, বিধানসভা নির্বাচনের আগে খামোকা মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। (Shivaji Tiger Claw)
মারাঠা বীর, শিবাজিকে নিয়ে কম জয়গাথা নেই। কৌশলে শত্রুপক্ষকে মাত দেওয়ার জন্যই ইতিহাস মনে রেখেছে তাঁকে। ১৬৫৯ সালে বিজাপুরে জেনারেল আফজল খানকে পরাজিত করেন শিবাজি। ওই 'বাঘ নখ' ব্যবহার করেই শিবাজি আফজল খানকে পরাজিত করেন বলে দাবি মহারাষ্ট্রের বর্তমান সরকারের। বর্তমানে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে রয়েছে সেটি। আগামী তিন বছরের জন্য সেটি দেশে আনা হচ্ছে, প্রদর্শনীরও আয়োজন হবে সেটিকে দেখতে।
মহারাষ্ট্রের সংস্কৃতি মন্ত্রী সুধীর মুঙ্গান্তিওয়ার বিষয়টি খোলসা করেছেন। জানিয়েছেন, মঙ্গলবার লন্ডন পৌঁছবেন তিনি। মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্বাক্ষর করবেন চুক্তি, যাতে তিন বছরের জন্য ওই 'বাঘ নখ' দেশে রাখা যায়। সংবাদ মাধ্যমে মুঙ্গান্তিওয়ার বলেন, "প্রথম পর্যায়ে 'বাঘ নখ' আনা হচ্ছে। নভেম্বর মাসেই সেটি এসে পৌঁছবে, তার জন্য মউ স্বাক্ষর হবে। যে দিন আফজল খানকে পরাজিত করেন শিবাজি, ওই দিনই সেটি দেশে আনা লক্ষ্য আমাদের।" এখনও পর্যন্ত যা খবর, সেই অনুযায়ী, দক্ষিণ মুম্বইয়ে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ মিউজিয়ামে ওই 'বাঘ নখ' রাখা থাকবে।
আরও পড়ুন: PM Narendra Modi: হাতে গ্লাভস পরে নোংরা পরিষ্কার, 'সুস্থ থাকতে' ঝাঁটা হাতে সাফাই অভিযান মোদির
১৬৫৯ সালের প্রতাপগড়ের যুদ্ধ মারাঠা সাম্রাজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সংখ্যায় কম হয়েও আফজল খান নেতৃত্বাধীন আদিলশাহি বাহিনীকে পরাজিত করেন মারাঠারা। এর পর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে শিবাজির নাম। বীর যোদ্ধাই নন শুধু, কৌশলী হিসেবেও খ্য়াতি পান তিনি। প্রতাপগড় কেল্লার পাদদেশে আফজল খানকে হত্যা করেন শিবাজি। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে সেই অধ্যায়। মুঙ্গান্তিওয়ার বলেন, "পিছন থেকে শিবাজিকে ছুরি মারেন আফজল খান। ওই নিষ্ঠুরকে খুন করতে তার পরই বাঘ নখের থাবা বসান শিবাজি।" ওই 'বাঘ নখে'র সঙ্গে মারাঠাদের আবেগ এবং গর্ব জড়িয়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যদিও ওই 'বাঘ নখে'র সত্যতা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। ইতিহাসবিদ ইন্দ্রজিৎ সাওয়ন্ত জানিয়েছেন, শিবাজি ওই 'বাঘ নখ' কখনও ব্যবহার করেননি বলেই লেখা রয়েছে ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের ওয়েবসাইটে। ওই 'বাঘ নখে'র সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনা (সাবেক) নেতা উদ্ধব ঠাকরের ছেলে আদিত্য ঠাকরেও। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে যে, ওই 'বাঘ নখ'টি আসলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জেমস গ্রান্ট ডাফের। ১৮১৮ সালে সাতারায় মোতায়েন করা হয় তাঁকে। ওই আধিকারিক 'বাঘ নখ'টি শিবাজির বলে উল্লেখ করলেও, তার সপক্ষে কোনও প্রমাণ মেলেনি। মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষও বিষয়টি পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। তাই মহারাষ্ট্র সরকার মানুষের আবেগ নিয়ে ছেলেখেলা না করে, সত্যাসত্য তুলে ধরুক বলে আর্জি জানান আদিত্য। তিন বছরের জন্য সেটিক ভাড়া করে এনে লাভই বা কী, আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি-র জোট সরকার মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে বলে অভিযোগ অন্য বিরোধী দলগুলিরও।