Dead Galaxy Radio Burst: মহাশূন্য থেকে আসছে রহস্যজনক রেডিও সঙ্কেত, উৎস নক্ষত্রদের সমাধিস্থল!
Science News: রহস্যময় রেডিও সিগন্যালের উৎস খুঁজতে নতুন করে গবেষণা শুরু হয় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।

নয়াদিল্লি: প্রায় দু'দশক আগে হঠাৎই আগমন টের পাওয়া যায়। মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে এসে পৌঁছয় রহস্যময় রেডিও সিগন্যাল বা রেডিও সঙ্কেত। সেই রেডিও সঙ্কেতের উৎস খুঁজতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যায় বিজ্ঞানীদের। নানাজনে নানা তত্ত্ব দিলেও, বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়নি। এবার সেই রহস্যের কিনারা করলেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী থেকে ২০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত Cosmic Graveyard থেকে পৃথিবীতে এসে পৌঁছয় বলে জানা গেল। পৃথিবীর মতো মহাশূন্যে কোনও গোরস্থান নেই। বরং প্রাচীনতম নক্ষত্রের অবশিষ্টাংশ নিয়ে বিরাজমান মৃত ছায়াপথ সেটি। Nature জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বিশদ তথ্য রয়েছে। (Dead Galaxy Radio Burst)
রহস্যময় রেডিও সঙ্কেতের উৎস খুঁজতে নতুন করে গবেষণা শুরু হয় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। Canadian Hydrogen Intensity Mapping Experiment (CHIME) নতুন একটি রেডিও সঙ্কেতকে শনাক্ত করে, যাকে FRB 20240209A নাম দেওয়া হয়। একবার, কয়েক মিলি সেকেন্ডের জন্য় নয়, FRB 20240209A-তে একই উৎস থেকে বারংবার জ্বলতে দেখা যায়। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যে ২১ বার এর জ্বলে ওঠার হিসেব মেলে। (Science News)
সেই মতো গবেষণার কাজে হাত দেন বিজ্ঞানীরা। কোনও কম বয়সি ছায়াপথ থেকে ওই রেডিও সঙ্কেত আসতে পারে বলে অনুমান ছিল বিজ্ঞানীদের। কিন্তু গবেষণা করতে গিয়ে দেখা যায়, ১১৩০ কোটি বছর আগের প্রাচীন ছায়াপথ থেকে রেডিও সঙ্কেতটি পৃথিবীতে আসছে। এর পর অত্যাধুনিক কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে ওই ছায়াপথ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। আর তাতেই চমকপ্রদ তথ্য উঠে আসে।
জানা যায়, যে ছায়াপথ থেকে রেডিও সঙ্কেত আসছে, সেটি অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং তার ভর আমাদের সূর্যের চেয়ে ১০ হাজার কোটি গুণ বেশি। বিজ্ঞানী Tarraneh Eftekhari-র কথায়, "এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বৃহত্তম ছায়াপথ থেকে ওই রেডিও তরঙ্গ এসে পৌঁছেছে বলা যায়। মহাশূন্যে যত ছায়াপথ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ ছায়াপথ সেটি।"
এই রেডিও তরঙ্গের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ধাঁধাও। কারণ সাধারণত ছায়াপথের কেন্দ্রস্থলে, যেখানে নক্ষত্র সৃষ্টি হয়, সেখান থেকেই সৃষ্টি হয় রেডিও তরঙ্গ। FRB 20240209A রেডিও সঙ্কেতটি ছায়াপথের একেবারে কিনারা থেকে সৃষ্ট, ছায়াপথের কেন্দ্রস্থল থেকে দূরত্ব প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার আলোকবর্ষ। এর আগে, ২০২২ সালেই একমাত্র সপ্তর্ষিমণ্ডলের অন্দরে, পৃথিবী থেকে ১ কোটি ২০ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত সর্পিল ছায়াপথ Messier 81 (M81)-এর উপকণ্ঠে বিরাজমান নক্ষত্রগুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আসা রেডিও সঙ্কেত FRB 20200120E-র সন্ধান মিলেছিল।
ভিন্ন ছায়াপথ থেকে বেরিয়ে এলেও, FRB 20240209A এবং FRB 20200120E-র মধ্যে কিছু মিল রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ছায়াপথ থেকে নির্গত প্রায় ১০০টি রেডিও তরঙ্গের খোঁজ মিলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী উৎস হল একটি Magnetar, উচ্চ চুম্বকীয় শক্তি সম্পন্ন নিউট্রন নক্ষত্র। সব রেডিও তরঙ্গ যে নিউট্রন নক্ষত্র থেকে ছিটকে আসে না, তা নয়া গবেষণায় প্রমাণিত হল। মৃত ছায়াপথ থেকেও রেডিও সঙ্কেত আসতে পারে পৃথিবীতে। FRB 20240209A রেডিও তরঙ্গও যেখান থেকে ছিটকে এসেছে, সেখানে দু'টি নিউট্রন নক্ষত্র মিলিত হয়ে কোনও উচ্চ চুম্বকীয় শক্তি সম্পন্ন নক্ষত্র সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে, অথবা কোনও বামন নক্ষত্র ভেঙে পড়ে থাকতে পারে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
২০০৭ সালে প্রথম বার পৃথিবীতে ওই রেডিও সঙ্কেত এসে পৌঁছয়, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় Fast Radio Burst (FRB). এই FRB আসলে দ্রুত গতিসম্পন্ন রেডিও তরঙ্গের তীব্র বিস্ফোরণ। মহাকাশ থেকে ছিটকে আসা উজ্জ্বল রেডিও তরঙ্গের ঝলকানি, যার দৈর্ঘ্য মাপা হয় মিলিসেকেন্ড সময়ের সূচকে। অর্থাৎ অতি অল্প সময়ই স্থায়ী হয়, চোখের পাতা ফেলার আগেই অদৃশ্য হয়ে যায় এই রেডিও তরঙ্গের বিস্ফোরণ।
কিন্তু চোখের পলকে অদৃশ্য হলেও, অসম্ভব শক্তিশালী ছিল ওই রেডিও তরঙ্গের বিস্ফোরণ। চোখের পলকে তা থেকে যে পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়, সারা দিনে সূর্য সেই পরিমাণ শক্তি খরচ করে। FRB এত শক্তিশালী যে এক মুহূর্তে গোটা ছায়াপথকে ছাপিয়ে যেতে পারে। মহাজাগতিক বিস্ফোরণে কোনও নক্ষত্রের মৃত্যুতে FRB-র সৃষ্টি। মহাজাগতিক বিস্ফোরণের ফলে উচ্চ চুম্বকীয় শক্তি সম্পন্ন নিউট্রন নক্ষত্র বা নিউট্রন তারার জন্ম হয়।
মহাজাগতিক বিস্ফোরণে যে বড় আকারের নক্ষত্রের মৃত্যু হয়, তার ভিতরের অংশ চুপসে যায়। নক্ষত্রটির ভর যদি সূর্যের বরের তিন গুণ হয়, সেক্ষেত্রে বিস্ফোরণের পর তার কিছুটা অংশ কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়। অবশিষ্ট অংশটির ভর যদি সূর্যের ভরের দেড় বা তিন গুণের মধ্যে হয়, সেক্ষেত্রে নিউট্রন বক্ষত্র হিসেবে গণ্য হয়, যার মূল উপাদানই নিউট্রন। এই নিউট্রন নক্ষত্র থেকেই শুধুমাত্র রেডিও সঙ্কেত মেলে না, ছায়াপথ থেকেও তা পৃথিবীতে আসতে পারে বলে মত বিজ্ঞানীদের।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
