Jagaddhatri Puja 2024: অঙ্গসজ্জায় শোলার সাজ, জগদ্ধাত্রী পুজোয় চন্দননগরে থিমের বৈচিত্র
Chandannagar News: চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই নতুন নতুন আলোর কারসাজি।
সোমনাথ মিত্র, চন্দননগর: জগদ্ধাত্রীর (Jagaddhatri Puja 2024) অঙ্গসজ্জায় শোলার সাজে থিমের ছোঁয়া। রাজ্যের পাশাপাশি নজর কাড়ছে বিদেশীদেরও। তাই চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় বৃদ্ধি পাচ্ছে থিমের বৈচিত্র। গঙ্গা তীরবর্তী শহরের অলি গলিতে এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা। বর্ধমানের বনকাপাসি থেকে আসা শয়ে শয়ে শিল্পীরা দিনরাত এক করে নতুন নতুন শিল্পকলা ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত। এক পুজো উক্তোদার দাবি, বিগত ৫ বছরে এই শিল্পকলায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে চন্দননগরে।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই নতুন নতুন আলোর কারসাজি। সুউচ্চ প্রতিমা, তার সঙ্গে সোলার সাজে সাবেকিয়ানার ছোঁয়া। প্রতিমার অলঙ্কার বরবারই বাড়তি আকর্ষণ দর্শনাথীদের কাছে। এসবের টানেই জেলা ছাড়িয়ে রাজ্য, রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশ থেকেও পর্যটকের ভিড় উপচে পড়ে গঙ্গা লাগোয়া প্রাচীন এই ঐতিহাসিক শহরে। চলতি বছরের জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ভদ্রেশ্বর, মানকুন্ডু, চন্দননগর মিলিয়ে কম-বেশি আড়াইশোটি জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। যার মধ্যে ১৭৭টি পুজো চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির অধীনে। বিগত কয়েক বছর ধরেই এই শোলার সাজেও এসেছে অভিনবত্বের ছোঁয়া। পুজো কমিটির চিন্তাভাবনা আর শিল্পীদের নৈপুণ্যতায় মায়ের অঙ্গসজ্জাতেও লেগেছে থিমের বৈচিত্র্য। এবারেও সেই সমস্ত শিল্প কলার প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। বর্ধমান জেলার কাটোয়া এলাকার বনকাপাসি গ্রাম থেকে চন্দননগরে এসেছেন শিল্পীরা। কোথাও দুর্গার সঙ্গে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ শোলার সাজের কারুকার্যে সেজে উঠছে প্রতিমা।
চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউ এ বিষয়ে জানান, বিগত ৪ বছর থেকে মায়ের অঙ্গসজ্জায় শোলার সাজে থিমবৈচিত্র্যের প্রভাব বেশি করে বাড়তে শুরু করেছে। কখনও মহিষাসুরমর্দিনী , কখনো মহাভারত - রামায়ণ, কখনও আবার পুরাণের বিভিন্ন কাহিনি, আবার কখনও গৌতম বুদ্ধের জীবন কাহিনি তুলে ধরা হচ্ছে। আর এই সুউচ্চ প্রতিমার সঙ্গে ডাকের সাজ যখন তুলে ধরছি তখন মায়ের এক অভিনব মূর্তি আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু হঠাৎ কেন মায়ের এই থিমবৈচিত্রের প্রভাব বাড়তে শুরু করল? চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউ জানান, ২০২১ সালে যখন করোনার জন্য শোভাযাত্রা হয়নি তখন থেকেই মায়ের অঙ্গসজ্জায় থিম বৈচিত্র্যের কাজে পুজো কমিটি গুলো খরচ বাড়াতে শুরু করে। তারপর দেখা যায় এই শিল্পকলার প্রতি বহু মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছে। করোনার পর যখন শোভাযাত্রা শুরু হয় তখন আলোকসজ্জার সঙ্গে মায়ের শোলার সাজে থিম বৈচিত্র্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন দর্শনার্থীরা। তারপর থেকেই থিমের মাধ্যমে প্রতিমার সাজের প্রবণতা বাড়তে থাকে। আলোকসজ্জা, প্রতিমা শিল্পী, মণ্ডপসজ্জার পাশাপাশি তাই শোলা শিল্পীদের উৎসাহ করার জন্য বর্তমানে শোলা শিল্পীদেরও পুরস্কৃত করে থাকে কেন্দ্রীয় কমিটি।
লালবাজার সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজোসমিতি এবারে দেবী দুর্গার উপর শোলার সাজে থিম বৈচিত্র্য করছে। সমিতির যুগ্ম সম্পাদক কৌস্তভ দত্ত বলেন, শোলা বা ডাকের সাজ চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর ঐতিহ্য। এর একটা মাধুর্য আছে এবং তাই আমরা এটাকে ধরেই এগিয়ে চলতে চাই। তবে এই সাজের শিল্পকলায় গত ৫ বছরে চন্দননগরে আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। আমরাও গত কয়েক বছর ধরে ডাকের সাজে বিভিন্ন রকম থিমের বৈচিত্র্য করে চলেছি। উর্দি বাজারে জগদ্ধাত্রী প্রতিমার অঙ্গসজ্জায় মহিষাসুরমর্দিনী থিম করা হচ্ছে। বাগবাজার চৌমাথা সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজোয় এবারে মানুষের রাশিচক্রের থিমের উপর প্রতিমার শোলার সাজ করা হয়েছে। সমিতির কোষাধক্ষ্য সোমনাথ নিয়োগী জানান, "আমাদের জীবনে ১২টা রাশিচক্রের উপর ভিত্তি করে থিমের অঙ্গসজ্জা করা হয়েছে। এটার তো একটা আলাদা বৈচিত্র্য আছে। আগে সাবেকি সাজসজ্জা করা হত। এখন একটু অন্যরকম করার ফলে মানুষের মধ্যে অভিনবত্বের ছোঁয়া লেগেছে।''
বর্ধমানের বনকাপাসি থেকে শোলা শিল্পীদের দল এসেছে চনন্দনগরে। তাঁদের প্রধান শোলা শিল্পী দিলীপ ঘোষ বলেন, "প্রথাগত সাজের পাশাপাশি অঙ্গসজ্জায় থিমের কাজও বেড়ে চলেছে। এবার লালবাগানে যেমন দুর্গার থিম হচ্ছে। ফটকগোড়ায় তেমনই শিবের মাথায় জল ঢালা থিম তৈরি করছি আমরা। তবে আগের তুলনায় টাকার বাজেট বাড়লেও কাজের পরিধি বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক গুণ। তা সত্বেও চন্দননগরে না এসে থাকা যায় না। এরা আমাদের ছাড়বেও না। আবার মাকে না সাজিয়েও থাকতে পারি না।''
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: SSKM Patient Harassment: ফের সরকারি হাসপাতালে হয়রানির অভিযোগ, SSKM-এ রোগীর মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা