East Bengal: পাঞ্জাবের ডেরায় ফের লাল-হলুদের মাস্তানি? কখন-কোথায় দেখবেন ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ?
Indian Super League: দুই দলেরই হারানোর কিছু নেই। দু’পক্ষই যে চাপমুক্ত হয়ে জেতার জন্য ঝাঁপাবে, শনিবারের পাঞ্জাব এফসি বনাম ইস্টবেঙ্গল এফসি ম্যাচে তেমনই আশা করা যায়।

কলকাতা: দুই দলেরই প্লে-অফে যাওয়ার অঙ্ক যেখানে বেশ কঠিন, তাদের যেখানে হারানোর তেমন কিছু নেই, সেখানে দু’পক্ষই যে চাপমুক্ত হয়ে জেতার জন্য ঝাঁপাবে, শনিবারের পাঞ্জাব এফসি বনাম ইস্টবেঙ্গল এফসি (Punjab FC vs East Bengal FC) ম্যাচে তেমনই আশা করা যায়।
ইস্টবেঙ্গলের মতো পাঞ্জাবের সামনেও সেরা ছয়ে পৌঁছনোর রাস্তা বেশ কঠিন। তাদের আসন্ন সব ম্যাচে তো জিততেই হবে। কিন্তু তার পরেও অন্যান্য দলের ম্যাচের ফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। ইস্টবেঙ্গলের অবস্থাও তথৈবচ। তাই নিজেদের সেরাটা দিয়ে এখন সব ম্যাচেই জেতা লক্ষ্য দুই দলের।
এ পর্যন্ত ২০ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট পেয়ে পয়েন্ট টেবলের ১১ নম্বরেই আটকে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল। গত পাঁচ ম্যাচ থেকে সাত পয়েন্ট তুলেছে তারা। তবে পাঞ্জাব এফসি গত পাঁচ ম্যাচ থেকে চার পয়েন্ট অর্জন করেছে। সাম্প্রতিক এই ফর্ম দিয়ে বিচার করলে শনিবার বিকেলে পাঞ্জাবের ঘরের মাঠে কিছুটা এগিয়ে থেকেই নামবে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু চলতি লিগে তাদের অ্যাওয়ে ম্যাচের পরিসংখ্যান কোচ অস্কার ব্রুজোকে চিন্তায় রাখার মতোই। এ পর্যন্ত দশটি অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলে মাত্র দু’টিতে জয় পেয়েছে তারা। হেরেছে পাঁচটিতে। তিনটি ড্র।
ঘরের মাঠে পাঞ্জাব-জয়ের সুখস্মৃতি
সমর্থকেরা কেউ নিশ্চয়ই ভোলেননি পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে লাল-হলুদ বাহিনীর সেই স্মরণীয় জয়ের কথা। তাদের আইএসএল ইতিহাসের সেরা জয়টি সে দিন তারা পাঞ্জাবের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল ঘরের মাঠে। তখন লিগ টেবলের সেরা ছয়ে ছিল পাঞ্জাব এফসি। তাদের বিরুদ্ধে দু’গোলে পিছিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ৪-২-এ জেতে তারা। আইএসএলের আসরে এ রকম জয় কখনও দেখেননি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা।
ফর্মে থাকা পাঞ্জাব এফসি ২১ ও ৩৯ মিনিটে যথাক্রমে হাঙ্গেরিয়ান ফরোয়ার্ড আসমির সুলজিক ও আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার নর্বের্তো ভিদালের গোলে এগিয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পিভি বিষ্ণু রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামার পরেই ইস্টবেঙ্গলের মেজাজ পুরো বদলে যায় এবং মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যে চার-চারটি গোল করে জয়ের দিকে এগিয়ে যায় তারা।
দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটেই সেটপিস গোল করে প্রথমে ব্যবধান কমান হিজাজি মাহের। এই গোলের আট মিনিট পরেই সমতা আনেন বিষ্ণু। ৬০ মিনিটের মাথায় পাঞ্জাবের ডিফেন্ডার সুরেশ মিতেইয়ের নিজ গোলে এগিয়ে যায় লাল-হলুদ বাহিনী, যে ব্যবধান ৬৭ মিনিটের মাথায় বাড়িয়ে নেন ইস্টবেঙ্গলের ফরোয়ার্ড ডেভিড লালনসাঙ্গা।
ক্রমশ নিম্নগামী পাঞ্জাব
শনিবারের ম্যাচে খেলতে নেমে যেমন বিষ্ণুদের মাথায় থাকবে সেই ম্যাচের পারফরম্যান্স, তেমনই বদলার মনোভাব সঙ্গে নিয়েই নিশ্চয়ই নিজেদের মাঠে নামবে পাঞ্জাব এফসি। ঘরের মাঠে তাদের নজির ভালয়-মন্দয় মিশিয়ে। পাঁচটি জয়, চারটি হার ও একটি ড্র। গত মাসে তারা টানা তিনটি হোম ম্যাচ খেলে, যাতে একটি ম্যাচে জেতে তারা এবং একটিতে ড্র করে ও হারে। শেষ তিন ম্যাচের কোনওটিতেই জিততে পারেনি তারা। ফলে প্রথম ন’টি ম্যাচের মধ্যে ছ’টিতেই জিতে সাড়া জাগানোর পর দশ নম্বর ম্যাচ থেকে সেই যে পতন শুরু হয় তাদের, সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা।
দশম ম্যাচ থেকে টানা চারটি ম্যাচে হারে তারা এবং সাতটি ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেনি। সাত ম্যাচে জয়হীন থাকার পর চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে জয়ে ফেরে তারা। তার পরে ফের শেষ তিন ম্যাচে জয়ের খরা। এ ভাবেই ক্রমশ সেরা ছয়ের দৌড়ে ক্রমশ পিছিয়ে গিয়েছে তারা। সেই জায়গায় ফিরে যাওয়ার রাস্তা এখন বেশ কঠিন।
চোট-আঘাত সমস্যা বহাল লাল-হলুদ শিবিরে
ইস্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। তাদের প্রথম দিকটা খুব খারাপ গেলেও অস্কার ব্রুজো কোচের দায়িত্বে আসার পর থেকে ক্রমশ সাফল্যে ফেরে তারা এবং সেরা ছয়ে যাওয়ার স্বপ্নও দেখতে শুরু করে তারা। কিন্তু চোট-আঘাত ও কার্ড সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ফের ব্যর্থতার অন্ধকারে ডুবে যেতে শুরু করে। মার্চে তাদের এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের পরীক্ষা রয়েছে, আপাতত যা তাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। আইএসএলে সেরা ছয়ে থাকার লক্ষ্য পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সেই আফসোস ভুলতে এখন এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে চায় ইস্টবেঙ্গল এবং তারই প্রস্তুতি হিসেবে আইএসএলের শেষ কয়েকটি ম্যাচকে দেখছে তারা।
তবে তাঁর দলের চোট আঘাত সমস্যা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। ভেনেজুয়েলা থেকে আসা ফরোয়ার্ড রিচার্ড সেলিসকে নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অনিশ্চিত উইঙ্গার নন্দকুমার শেকরও। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সউল ক্রেসপো গত রবিবার মাঠে নেমে গোল পেয়েছেন, এটা একটা স্বস্তির খবর। ডিফেন্ডার আনোয়ার আলিও সুস্থ। তিনিও মাঠে নামবেন। গত ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও আক্রমণে দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের সঙ্গে হয়তো ক্যামেরুনের ফরোয়ার্ড রাফায়েল মেসি বৌলিকেই ফের দেখা যাবে। গত ম্যাচে শুরু থেকে নেমে খারাপ খেলেননি তিনি।
গত সপ্তাহে মহমেডানের বিরুদ্ধে কলকাতা ডার্বিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ২৭ মিনিটের মাথায় নাওরেম মহেশের অনবদ্য গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। দ্বিতীয়ার্ধে এই ব্যবধান বাড়িয়ে নেন স্প্যানিশ মিডিও সউল ক্রেসপো। তবে এর তিন মিনিট পরেই ব্যবধান কমান মহমেডানের ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার কার্লোস ফ্রাঙ্কা। ৮৯ মিনিটের মাথায় ডেভিড লালনসাঙ্গা তাঁর প্রাক্তন ক্লাবের বিরুদ্ধে গোল করে লাল-হলুদের জয় সুনিশ্চিত করেন। দুই দলই সে দিন হাফ ডজন করে শট গোলে রাখে। কিন্তু সুযোগকে গোলে পরিণত করার ক্ষেত্রে ইস্টবেঙ্গলই এগিয়ে ছিল। ফলে আগের দুই ম্যাচে জয়হীন থাকার পর সে দিনই জয়ে ফেরে ইস্টবেঙ্গল। সেই জয়ের ধারা বজায় রাখতে গেলে যে পাঞ্জাবের ঘরের মাঠে যথেষ্ট ভাল ফুটবল খেলতে হবে, তা খুব ভাল করেই জানেন কোচ অস্কার ব্রুজো।
দল ভাল খেলছে, দাবি লাল-হলুদ কোচের
লাল-হলুদ কোচ বলেন, "আমরা কিন্তু খারাপ খেলছি না। গত পাঁচ রাউন্ডের ফল অনুযায়ী আমরা আট নম্বরে ছিলাম। গত দশ রাউন্ডের হিসেব অনুযায়ী আমরা ছিলাম ছয়ে। এমনকী শেষ ১৫ রাউন্ডের ফলেও আমরা ছিলাম সাতে। ওই যে প্রথম ছয় রাউন্ডে আমরা একটিও পয়েন্ট তুলতে পারিনি, তারই খেসারত দিতে হচ্ছে এখন। তা ছাড়া চোট-আঘাত ও তার ফলে খেলোয়াড়দের পজিশনে পরিবর্তনের প্রভাবও পড়েছে পারফরম্যান্সে। তবু বলব, ভাল দলগুলোর বিরুদ্ধে ম্যাচে আমাদের কিছু পয়েন্ট অর্জন করা উচিত ছিল। এখন আমাদের এই মরশুমটা কিছুটা হলেও স্মরণীয় করে রাখতে হলে আইএসএলের শেষ দিকের ম্যাচগুলোতে, এএফসি লিগের ম্যাচগুলোতে ও সুপার কাপে ভাল খেলতে হবে।"
আরও পড়ুন: দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পরেছিলেন, এখন কেমন আছেন সৌরভ?
তবে আপাতত তাদের ফোকাস শনিবারের ম্যাচেই, জানান স্প্যানিশ কোচ। বলেন, "এই ম্যাচে জিতলে আমরা আট নম্বরে উঠব, যা সারা বছরে একবারও হয়নি। আমাদের নিজেদের মধ্যে কথা হয়েছে, শেষ চারটি ম্যাচই জেতার চেষ্টা করব আমরা। যদি পাঞ্জাব ও হায়দরাবাদকে হারাতে পারি, তা হলে শেষ দুই ম্যাচে বেঙ্গালুরু ও নর্থইস্টের বিরুদ্ধে ভাল খেলার আত্মবিশ্বাস পাব। ওরা এখন সেই জায়গায় আছে, যেখানে আমরা থাকতে চাই। সেই জায়গায় পৌঁছতে গেলে ওদের হারাতে হবে। না পারলে সেই জায়গায় থাকা যাবে না।"
পরিসংখ্যান-তত্ত্ব
গত দু’টি অ্যাওয়ে ম্যাচেই অপরাজিত ছিল ইস্টবেঙ্গল। এর আগে ২০২৩-এর নভেম্বর থেকে ২০২৪-এর ফেব্রুয়ারি টানা তিনটি ম্যাচে অপরাজিত ছিল তারা। সেটিই ছিল আইএসএলে অ্যাওয়ে ম্যাচে তাদের অপরাজিত থাকার সেরা নজির। এ বার সেই নজির ছোঁয়ার সুযোগ তাদের সামনে। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গত দুই ম্যাচেই একাধিক গোল করেছে পাঞ্জাব এফসি। কোনও দলের বিরুদ্ধেই তারা পরপর তিন ম্যাচে দুই বা তার বেশি করতে পারেনি। কলকাতার ক্লাবের বিরুদ্ধে শেষ তিন ম্যাচেই হেরেছে পাঞ্জাব। যার মধ্যে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ২-৪ হারও ছিল।
দ্বৈরথের ইতিহাস
দুই দলের মধ্যে এ পর্যন্ত তিনটি ম্যাচ হয়েছে এবং একটি করে ম্যাচ জিতেছে দুই দল ও একটিতে ড্র হয়েছে। ২০২৩-এর ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে জয়হীন পাঞ্জাব এফসি-কে হারাতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। সে দিন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে গোলশূন্য ড্র করে মাঠ ছাড়ে লাল-হলুদ বাহিনী ও পাঞ্জাব এফসি। সেই ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পাওয়ায় অবশ্য লিগ টেবলে প্রথম ছয়ে চলে এসেছিল ইস্টবেঙ্গল। তবে ফিরতি লিগে সুদ-সহ সেই হারের বদলা নিয়ে নেয় পাঞ্জাবের নবাগত দলটি। এপ্রিলে নিজেদের ঘরের মাঠে ইস্টবেঙ্গলকে ৪-১-এ হারিয়ে প্লে অফের দৌড় থেকে পাকাপাকি ভাবে ছিটকে দেয় তারা। এ মরশুমের প্রথম মুখোমুখিতে সেই হারের বদলা নিয়ে নেয় ইস্টবেঙ্গল, পাঞ্জাবের দলকে ৪-২-এ হারিয়ে।
ম্যাচ- পাঞ্জাব এফসি বনাম ইস্টবেঙ্গল এফসি
ভেনু- জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম, নয়াদিল্লি
কিক অফ- ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, বিকেল ৫.০০
সরাসরি সম্প্রচার ও স্ট্রিমিং
স্টার স্পোর্টস ৩- বাংলা, হিন্দি, ইংলিশ, মালয়ালাম; জিওহটস্টার- বাংলা, হিন্দি, ইংলিশ, মালয়ালি (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: ইস্পাত কারখানা কবে তৈরি হচ্ছে? বড় আপডেট দিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
