Arna Mukhopadhyay Exclusive: ছবির শেষ দৃশ্যের শ্যুটিংয়ের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না কখনও: অর্ণ
Arna Mukhopadhyay Exclusive: ''ওভার অ্যাক্টিং', 'আন্ডার অ্যাক্টিং' কাকে বলে সেই বিষয়ে আমার ধারণা নেই, আমি মাথা ঘামাতেও চাই না। আমি মনে করি, যে কাজটা করলাম সেটা দর্শক গ্রহণ করলেন কি না সেটাই বিবেচ্য।'
কলকাতা: মাঝে মাত্র ১ দিন। কাল বাদে পরশু, অর্থাৎ ২৬ জানুয়ারি (26 January) মুক্তি পাচ্ছে অরুণ রায় (Arun Roy) পরিচালিত '৮/১২' (8/12)। ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে ভারতকে মুক্ত করার ইতিহাসে উজ্জ্বল তিন বঙ্গ সন্তানের নাম। বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত (Binay-Badal-Dinesh)। তাঁদের বীরগাঁথাই পর্দায় তুলে ধরছেন পরিচালক। ছবিতে বাদলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা অর্ণ মুখোপাধ্যায় (Arna Mukhopadhyay)। মঞ্চের চেনা মুখ অর্ণ, এখন বড়পর্দাতেও বেশ সুপরিচিত। '৮/১২' ছবি নিয়ে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিলেন এবিপি লাইভকে (ABP Live)।
প্রশ্ন: অর্ণ মুখোপাধ্যায় বললেই চোখের সামনে নাটকের মঞ্চ ভেসে ওঠে। খানিক সিরিয়াস চরিত্রে অভিনয়। বড়পর্দাতেও প্রথম ছবি 'কবীর'। তবে সেই অর্ণকেই একেবারে মেনস্ট্রিম বাংলা ছবিতেও দেখা গেছে। বাদলের চরিত্রেও সেই অর্ণ মুখোপাধ্যায়। কোন ধরনের চরিত্র করা চ্যালেঞ্জিং বেশি?
অর্ণ মুখোপাধ্যায়: খুব সাদা কথায় উত্তর দিলে, যখন আমি একজন অভিনেতা হিসেবে কোনও চরিত্র করছি তখন সেই চরিত্রটাই শুধু প্রাধান্য পায় আমার কাছে। কোন ফর্মে, কোন শেপে, কী করছি সেটা একটা প্রাথমিক পর্যায়ে গুরুত্ব পায় ঠিকই। আমার খুবই ইচ্ছে, আমি যদি কখনও যাত্রাও করি, সেখানেও আমার অভিনীত চরিত্র ও আমার মধ্যে একটা সরলরৈখিক সম্পর্ক তৈরি করাই আমার প্রাথমিক চেষ্টা থাকবে। এরপর কোনও চরিত্র কেন করব সেই ক্ষেত্রে বলি, এমন চরিত্র যা আগে কখনও সেভাবে এক্সপ্লোর হয়নি সেগুলো আমাকে টানে। যেমন আমার মধ্যে একটা বিপ্লবী বা সংগ্রামী মানুষ আছে সেটা আমি কখনও বুঝতে পারতাম না যদি না আমি বাদল চরিত্রটা করতাম। মূলত এই দুটো জিনিসই মাথায় রাখার চেষ্টা করি, প্রথমত কেন কাজটা করছি এবং দ্বিতীয়ত আগে সেই ধরনের চরিত্র নিয়ে কাজ হয়েছে কি না সেটা আমার কাছে প্রাধান্য পায়।
প্রশ্ন: আপনার কথায় ছবির কাজ চলাকালীন বুঝেছেন যে আপনার মধ্যে একটা বিপ্লবী সত্ত্বা আছে। কিন্তু প্রথম যখন আপনার কাছে চরিত্রটির অফার আসে তখন কী মনে হয়েছিল?
অর্ণ: আমার চরিত্রটা দৈর্ঘ্যে প্রস্থে কতটা বড় সেটা আমি প্রাথমিক পর্যায় ভাবিইনি। যখন এই বিষয়টা নিয়ে কাজ হচ্ছিল আমাকে অরুণ দা (পরিচালক অরুণ রায়) বলেছিলেন, 'এই কাজটা করতে হবে। তুই করবি।' তখন কী চরিত্র, বৃত্তান্ত কিছুই বলেননি। বিনয়, বাদল, দীনেশকে নিয়ে কাজ শুনে আন্দাজ করেছিলাম তিন জনের মধ্যে যে কোনও একজনের চরিত্র হবে হয়তো। আমি তখনই রাজি হয়ে যাই। রাজি হওয়ার কারণ, প্রথমত ছবির বিষয় ও দ্বিতীয়ত অরুণ দা। আমি ওঁর সঙ্গে 'হীরালাল' ছবিতে কাজ করেছি। সেটা আমার কাছে একটা অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। ফলে অন্তত এই ছবির ক্ষেত্রে স্ক্রিপ্ট পড়ে হ্যাঁ না বলার বিষয় হয়নি, লাফিয়ে পড়ে রাজি হয়েছি।
প্রশ্ন: এই ধরনের চরিত্রদের তো আমরা চাক্ষুষ করিনি, কিন্তু এঁদের সঙ্গে বাঙালির আবেগ জড়িয়ে থাকে। তাঁদের পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্য কীভাবে নিজেকে তৈরি করেছিলেন?
অর্ণ: আমি বিশ্বাস করি যে অভিনেতাদের একটা সাধারণ প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। মানে যে কোনও একটা চরিত্রের জন্য অভিনেতা আলাদা করে প্রস্তুত হলেন, এমনটা আমি বিশ্বাস করি না। যেহেতু আমি বহুদিন ধরে থিয়েটার করছি তাই আমার ওই একটা জেনারেল চর্চার জায়গা ছিলই এবং সেটা রেখে দিতে চাই যতদিন বাঁচব। আমি মনে করি, কখনওই আমি একজন 'কমপ্লিট অ্যাক্টর' নই, ফলে ওই প্রস্তুতিটা দৈনন্দিন। এবার নির্দিষ্ট কিছু চরিত্রের জন্য বিশেষ কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়। যে মেনস্ট্রিম বাংলা ছবির কথা হল, তার জন্য আমাকে গাড়ির কাজকর্ম শিখতে হয়েছিল। এই ছবির জন্য বা আগের একটি ছবির জন্য় আমাকে বন্দুক চালানো শিখতে হয়েছিল। এইগুলো চরিত্রের খোলসটাকে ঠিকঠাক রাখার প্রস্তুতি। কিন্তু কোনও চরিত্রের মন তৈরির যে কাজ, সেটা সর্বক্ষণই চলতে থাকে। '৮/১২' ছবির জন্য আমি সেই সময়ের ইতিহাসটা ফিরে দেখার চেষ্টা করেছি। তখনকার কিছু আনুষাঙ্গিক ঘটনা জানার চেষ্টা করেছি। এছাড়া রিসার্চার যতটুকু বাদল গুপ্ত সম্পর্কে বলেছিলেন, সেটুকুই মাথায় রেখেছি।
প্রশ্ন: শ্যুটিংয়ের বিশেষ কোনও ঘটনা যা মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
অর্ণ: আমার একটা খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়, এই ছবির শেষ দৃশ্যটা শ্যুট করার দিন। ওই সিনটা শ্যুট করার সময় যে অনুভূতিটা হয়েছিল... আসলে অরুণ দার সঙ্গে কাজ করলে গোটা ছবিটা খুব মজার ছলে, শিখতে শিখতে হয়ে যায়। পরিবারের মতো একটা পরিবেশে কাজ হয়। সেটে গিয়ে শ্যুটিং করছি কখনওই মনে হয় না। কিন্তু শেষ দৃশ্যের শ্যুটিংটা যেদিন করছিলাম, মানে সেই সময়ে ওই ঘরে উপস্থিত ইউনিটের সকলের মধ্যে যে রসায়নটা তৈরি হয়েছিল সেটা অনির্বচনীয়। ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। মানে আমি নিজের জন্য কষ্ট পাচ্ছিলাম, না বাদল গুপ্তের জন্য কষ্ট পাচ্ছিলাম না কি সেই তিন বাচ্চা ছেলের জন্য কষ্ট পাচ্ছিলাম জানি না... সব মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। আমি জানি না সেই অভিনয়টা সঠিক হয়েছিল কি না, কিন্তু সবটা মিলে যে অনুভূতিটা হয়েছিল সেটা ভোলার নয়।
আরও পড়ুন: Kinjal Nanda Exclusive: শট শেষে হঠাৎ দেখি হাত পুরো লাল, গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে টেরই পাইনি: কিঞ্জল
প্রশ্ন: অনেকের মতেই, মঞ্চ থেকে বড়পর্দায় এলে অভিনেতাদের মধ্যে 'অত্যাভিনয়' করে ফেলার প্রবণতা থাকে। সেটা সমর্থন করেন?
অর্ণ: আমি একটা জিনিস বুঝি। অভিনয় করা মানে চরিত্রের সত্যতা তুলে ধরা। চরিত্রটিকে জ্যান্ত করা। এবার কাকে 'ওভার অ্যাক্টিং' বলে, কাকে 'আন্ডার অ্যাক্টিং' বলে সেই বিষয়ে আমার খুব একটা ধারণা নেই, আমি মাথা ঘামাতেও চাই না। আমার মনে হয় যে, আমি যে কাজটা করলাম সেটা দর্শক গ্রহণ করলেন কি না সেটাই বিবেচ্য। এর মাঝে আর কোনও লাইন নেই। আমি চেষ্টা করি চরিত্রের প্রতি যতটা সৎ থাকা যায়। আসলে তো অভিনয় 'বেশি' বা 'কম' হয় না, হলে 'মিথ্যে' হতে পারে। মানুষের কাছে পৌঁছনো যায় না হয়তো। আমি এটুকুর বেশি বুঝি না।