ABP Exclusive: রঙিন নয়, সাদা কালোয় গল্প বলতেই আগ্রহী হচ্ছেন পরিচালকেরা
হঠাৎ করে কি উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করেছে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের কাঁটা? ভিএফএক্স থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তিতে মজে যে দর্শক, তাঁদের জন্য পরিচালকেরা পরিকল্পনা করছেন সাদা কালো উপহার!
কলকাতা: হঠাৎ করে কি উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করেছে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের কাঁটা? ভিএফএক্স থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তিতে মজে যে দর্শক, তাঁদের জন্য পরিচালকেরা পরিকল্পনা করছেন সাদা কালো উপহার! নতুন ছবি তৈরীর সময় ছুঁয়ে যেতে চাইছেন নস্টালজিয়াকে। অতিমারী কাটিয়ে রুপোলি পর্দায় রঙিন গল্প সাদায় কালোয় দেখবেন দর্শকেরা।
ইতিমধ্যেই একটা গোটা ছবি সাদায় কালোয় এঁকে ফেলেছেন পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র। তাঁর নতুন ছবি 'অভিযাত্রিক' গোটাটাই সাদা-কালো। অপুর নস্টালজিয়া ছোঁয়া এই ছবির মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন অর্জুন চক্রবর্তী। আর অপর্ণা হিসাবে দেখা যাবে দিতিপ্রিয়া রায়কে। অপুর গল্প বলতে গিয়ে প্রথমবার একটা সম্পূর্ণ সাদা কালো ছবি বানানোর সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছিলেন শুভ্রজিৎ? পরিচালক বলছেন, 'অভিযাত্রিককে আমি অপু ট্রিলজির সিক্যুয়েল হিসাবে দর্শকদের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছি। অপুর সংসারের সঙ্গে দর্শক যেন যোগসূত্র খুঁজে পায়। আমি যখন থেকে চিত্রনাট্য লিখছি, তখন থেকে বিষয়টাকে ভেবেছি সাদা কালোয়। স্বাধীনতার আগে যা যা নিউজ ফুটেজ ছিল প্রায় সবটাই সাদা কালোয়। আমার ছবি ১৯৪০-এর প্রেক্ষাপটে। ২০২১-এর দর্শককে মানসিকভাবে ১৯৪০-এ ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই আমি সাদা কালো রঙকে বাছলাম। আর কথায় আছে, রঙিন পর্দায় বাহ্যিক আড়ম্বর ধরা পড়ে আর সাদা কালোয় মানুষ অন্তরাত্মাকে দেখতে পায়। আমি চেয়েছিলাম মানুষ অপু আর কাজলের যাত্রাটা দেখুক, তাদের মানসিক টানাপোড়েনটা দেখুক। সাদা কালো ছবি করব বলে আমায় প্রযোজকের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। এখন চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি প্রশংসিত হচ্ছে, পুরষ্কার পাচ্ছে। ভালো লাগে। মনে হয় সেসময় সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম। করোনা পরিস্থিতি না হলে ছবিতে এতদিনে সাধারণ দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারতাম।'
ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি 'এক্স=প্রেম' এর শ্যুটিং। আপাতত মুম্বইতে 'শাবাশ মিঠু' -র শ্যুটিং-এ ব্যস্ত সৃজিত। ২০২২-এ মুক্তি পাওয়ার কথা সৃজিতের 'এক্স=প্রেম'। প্রযোজনা সূত্রে খবর, কলেজ প্রেমের গল্প বলা এই ছবি গোটাটাই হবে সাদা-কালোয়। এসভিএফের ব্যানারে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে সৃজিতের বাজি নতুন মুখেরাই। 'এক্স=প্রেম'-এর হাত ধরে প্রথমবার পর্দায় পা রাখছেন অনিন্দ্য সেনগুপ্ত ও শ্রুতি দাস। এছাড়াও রয়েছেন অর্জুন চক্রবর্তী ও মধুরিমা বসাক। ছবির বিষয়ে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি অবশ্য কোনও উত্তর দেননি।
সেপ্টেম্বরের শেষে শুরু হতে পারে পরিচালক অনীক দত্তের নতুন ছবি 'অপরাজিত'-র শ্যুটিং। এই ছবির হাত ধরেই রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর পর্দায় ফিরছেন সায়নী ঘোষ, আর মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন আবীর চট্টোপাধ্যায়। 'অপরাজিত'-র বেশ কিছুটা অংশের শ্যুটিং হবে সাদা কালোয়। অনীক বলছেন, 'আমার ছবির বেশ কিছু অংশে এর আগেও সাদা-কালো প্রাধান্য পেয়েছে। ভূতের ভবিষ্যতের কিছু অংশও সাদা কালোয় ছিল। এই ছবিটা করার আগে বাবুদার (সন্দীপ রায়) থেকে অনুমতি নিয়েছিলাম। এটা ঠিক সত্যজিৎ রায়ের বায়োপিক নয়। চরিত্রের নামগুলো বদলানো হয়েছে। সেইসঙ্গে কিছুটা কল্পনাও করে নেওয়া হয়েছে। সেসময় ঠিক কী কী ঘটনা ঘটতে পারে তার ওপর ভিত্তি করেই এগিয়েছে চিত্রনাট্য। তবে রঙিন অংশ থাকলেও ৮০ শতাংশই হবে সাদা কালোয়। আর বাকি চমক দর্শকদের জন্যই তোলা থাক।'
'৮/১২' ছবিটির একটি গান মুক্তি পেয়েছে ইতিমধ্যেই। বিপ্লবী বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্তের রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানের গল্পকে রুপোলি পর্দায় তুলে ধরেছেন পরিচালক অরুণ রায়। রুপম ইসলামের গলায় মুক্তি পাওয়া গানে ছবির যে অংশবিশেষ দেখা গিয়েছে, তার সবটাই সাদায় কালোয়। পরিচালক বলছেন, 'সাদা আর কালো ছাড়াও আমরা লাল ও আগুন রঙকে ছবিতে রেখেছি। করোনা পরিস্থিতির পর দর্শক হলে এসে নতুন কিছু দেখতে চাইবেন। সেইজন্যই রঙ নিয়ে খেলা করার এই পরিকল্পনা। এটা একটা পিরিওডিকাল অ্যাকশান মুভি। ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। ওনার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা সবসময়ই ভালো। বাঙালি যেন ৮/১২-কে ভুলে যেতে বসেছে। আমাদের ইচ্ছা আছে এই বছরের ৮ ডিসেম্বরই মুক্তি পাবে ৮/১২'।