Corona Inspiration Story: দায়িত্বের সামনে তুচ্ছ পরিবারের টান, অতিমারির শুরু থেকে দেড় বছর বাড়ি যাননি এই চার নার্স
কেউ দুধের শিশুকে ছেড়ে আছেন, কেউ ভিনরাজ্যে থাকা অসুস্থ মা-বাবাকে...
ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা: কেউ দুধের শিশুকে ছেড়ে আছেন। কেউ ভিনরাজ্যে থাকা অসুস্থ মা-বাবাকে। দায়িত্বের কাছে তুচ্ছ পরিবারের টান। তাই সব ভুলে অতিমারির শুরুর সময় থেকে আর বাড়ি যাননি ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালের চার নার্স। হাসিমুখে নীরবে কর্তব্যে অবিচল চারমূর্তি।
সমস্যা হওয়ার আগেই পৌঁছে যাচ্ছেন রোগীর কাছে। বাড়িয়ে দিচ্ছেন ভরসার হাত। দেখলে কে বলবে, বছর দেড়েক বাড়িই যাননি। বিরক্তি দূরের কথা, হাসিমুখেই সামলাচ্ছেন সব। গতবছর কোভিড শুরুর সময় থেকে হাসপাতালের চার দেওয়ালই এঁদের ঘরবাড়ি।
কখনও কোভিড রোগীদের সামলাচ্ছেন, কখনও অন্য রোগীদের। ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালের চার সিস্টার কর্তব্যের প্রতি অবিচল। একজন উত্তর-পূর্বের মণিপুরের বাসিন্দা ইন্দিনা কো, একজন ত্রিপুরার পায়েল দাস। আর বাকি দু’জন কেরলের শায়জা জর্জ এবং সায়নো এস মামেন।
শুধু চিকিৎসক নয়, সিস্টাররা পাল্লা দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, একদিকে ঝুঁকি নিয়ে কাজ, বাড়িতে যেতে পারেননি, এভাবে বিভিন্ন রোগীর শুশ্রুষা করে যাচ্ছেন চিকিৎসকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে করোনাকে জয় করতে।
পায়েল দাস বলেন, কোভিড ওয়ার্ডে পিপিই পরে কাজ করা কঠিন লাগত, ওয়ার্ডের মধ্যে টানা ডিউটি, খাওয়া-টয়লেটে যাওয়ার সুযোগ ছিল না।
এক আধ মাস নয়, এঁরা প্রায় দেড় বছর বাড়ি যেতে পারেননি। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগে মোবাইল ফোনই একমাত্র ভরসা। বাড়ি ভুলে, কর্তব্যের টানে টানা ডিউটি করে চলেছেন সবাই।
ইন্দিনা কো বলেন, এখন যা পরিস্থিতি তাকে ঘরে যেতে পারিনি, বাড়ি থেকে চলে আসতে বললেও আমি বলেছিলাম এখানে যারা অসুস্থ তাদের কে দেখবে, এটাই আমার ডিউটি।
গত বছর এমন সময় দুধের শিশুকে কেরলের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন শায়জা। মাকেও পাঠিয়ে দেন। তারপর নতুন লড়াই। করোনাকে হারানোর বার্তা দিলেন এই সকল বীর নারীরা।
একদিকে, এই চার নার্সের কাহিনী যখন দায়িত্ববোধের পাঠ পড়াচ্ছে, তেমনই কর্তব্যে অবিচল থাকার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে এক তরুণ চিকিৎসকের গল্প।
২০২০ শুরুর দিকে রাজ্যে যখন কোভিড হানা দেয়, তখন রাজ্য সরকার যে ক’টি হাসপাতালকে কোভিড হাসাতাল করেছিল তার একটি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ।
শুরুর সেই দিন থেকে হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন জেনারেল মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম রায়। করোনা রোগীদের নিয়ে কাজ করতে করতে নিজে আক্রান্ত হয়েছেন। ভাইরাস ছেড়ে কথা বলেনি কলকাতা মেজিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজিস্ট স্ত্রীকেও। তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন আড়াই বছরের ছেলে। কিন্তু কাজ বন্ধ হয়নি।
২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর করোনা আক্রান্ত হন বৃদ্ধ বাবা। কিন্তু বাবার জন্য একটিও বেড জোগাড় করতে পারেননি নিজের আরোগ্য নিকেতনে। বাধ্য হয়ে বেলঘরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন বাবাকে। ৩ ডিসেম্বর মারা যান তিনি।
বাবাকে হারিয়েও সারা দিন রোগীদের কাছেই ছিলেন অরিন্দম। আজও সমানতালে কাজ করে চলেছেন কামারহাটির সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর অরিন্দম।