Quit India Movement: গাঁধীর ডাকে রাস্তায় নেমেছিল দেশ! সম্বল ছিল অকৃত্রিম দেশপ্রেম
Mahatma Gandhi: ১৯৪২ সালের ৮ আগস্ট ডাক দেওয়া হয়েছিল ভারত ছাড়ো আন্দোলনের।
কলকাতা: তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (Second World War) একেবারে মাঝ গগনে। ১৯৪২ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের জার্মানি এবং তার সহযোগী দেশগুলি যুদ্ধজয়ের বিচারে সাফল্যের শীর্ষে। তখনই সবে সোভিয়েতের উপর হামলা করেছে অক্ষসেনা। টালমাটাল হচ্ছে ব্রিটিশরা। ঠিক সেই সময়েই ভারতেও তুঙ্গে উঠল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ঢেউ (Indian National Movement)। শুরুর দিনটা ছিল ৮ আগস্ট। এদিনই মহাত্মা গাঁধী ডাক দিয়েছিলেন এই আন্দোলনের।
ব্রিটিশদের ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার ডাক দিলেন মহাত্মা গাঁধী (Mahatma Gandhi)। ডাক দিলেন স্বাধীনতার। নাম হল ভারত ছাড়ো আন্দোলন বা Quit India Movement। এটিকে আগস্ট আন্দোলন (August Movement)বলেও ডাকা হয়। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সময়কাল। এর প্রভাব ছিল সূদূরপ্রসারী, এরপরে স্বাধীনতার দাবিতে হওয়া আন্দোলনগুলি আরও জোরদার হওয়ার অন্যতম কারণও ছিল এটি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, রাজনৈতিক মতপার্থক্য নির্বিশেষে এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন প্রায় সকলে। মহাত্মা গাঁধী ডাক দিয়েছিলেন 'করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে'। এই স্লোগানকে সম্বল করেই শুরু হয়েছিল ভারতজোড়া এই অহিংস আন্দোলন। আইন অমান্য, মিছিল, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-ধর্মঘট সম্বল করেই দেশের নানা প্রান্তে ঢল নেমেছিল স্বাধীনতাকামী ভারতবাসীর। নেতারা গ্রেফতার হলেও স্বাধীনতাকামী যে কোনও ভারতীয় এই আন্দোলনে নামবেন এবং নেত্বত্ব দেবেন এমন সিদ্ধান্তই পাশ হয়েছিল কংগ্রেসের বোম্বাই অধিবেশনে। সেখানেই ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব পাশ হয়। সিদ্ধান্ত মেনেই ছড়িয়ে পড়েছিল বার্তাও। ৯ আগস্টই গ্রেফতার হয়ে যান কংগ্রেসের প্রথম সারির সকল নেতা। মহাত্মা গাঁধী, জওহরলাল নেহরু, আবুল কালাম আজাদ-সহ প্রায় সকলেই গ্রেফতার হয়ে যান। তারপরেও চলেছে আন্দোলন। তার কদিনের মধ্যেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই আন্দোলন। অধিকাংশ এলাকাতেই সেই অর্থে স্থানীয় নেতৃত্ব বা কোনওরকম নেতৃত্ব ছাড়াই আন্দোলন সঙ্ঘটিত হয়েছিল। বেশ কিছু ক্ষেত্রে জঙ্গি আন্দোলনও ঘটেছিল।
প্রথম থেকেই এই আন্দোলন দমাতে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেছিল ব্রিটিশরা (British Rule in India)। শুরু হয়েছিল 'অপারেশন জিরো আওয়ার'। শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার হয়েছিলেন। মৃত্যু হয়েছিল, জেলে গিয়েছিলেন বহু সাধারণ মানুষও। এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে শহিদ হয়েছিলেন বাংলার নারী-পুরুষও। আন্দোলন চলাকালীন তমলুকে একটি মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন বিপ্লবী মাতঙ্গিনী হাজরা। ব্রিটিশ অত্যাচারের শিকার যেমন হয়েছেন বহু। তেমনই পাল্টা প্রতিরোধও গড়ে তোলা হয়েছিল। পুরোদস্তর অহিংস হয়নি এই আন্দোলন। দিকে দিকে সশস্ত্র সংগ্রাম, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলনও ঘটেছে এই সময়ে। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রেক্ষাপটেই ভারতবর্ষের বেশ কিছু জায়গায় ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থাকে সরিয়ে সমান্তরাল জাতীয় সরকারও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তারই মধ্য়ে একটা ছিল তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায়- তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার (Tamralipta Jatiyo Sarkar)। ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল সেটি।
প্রবল অত্যাচারের কারণেই হয়তো ১৯৪৪ সালে সেই অর্থে গতি হারায় এই আন্দোলন। কিন্তু ততদিনে স্বাধীনতা আন্দোলন তার সর্বোচ্চ গতি পেয়ে গিয়েছে। আর পাঁচটা ঐতিহাসিক ঘটনার মতোই এই আন্দোলন নিয়েও নানা সমালোচনা রয়েছে। নানা ত্রুটির কথা আলোচিত হয়। কিন্তু সেসব বাদ দিয়েও বলা যায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এর গুরুত্ব অপরিসীম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ব্রিটিশ রাজের শেষ কটা বছরে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছিল ভারত ছাড়ো আন্দোলন। ব্রিটিশদের হাত থেকে যে মুক্তি মেলা সম্ভব, সেই বিশ্বাস এবং তার জন্য লড়াই করার জেদ আপামর ভারতবাসীর মনে গেঁথে দেওয়ার জন্য ভারত ছাড়ো আন্দোলনের গুরুত্ব রয়েছে। এর কয়েক বছর পরেই ১৯৪৭ সালে দীর্ঘদিনের কাঙ্খিত স্বাধীনতা পায় ভারত- যদিও সইতে হয়েছে দেশভাগের তীব্র যন্ত্রণা।
এখনও প্রতিবছর পালিত হয় ভারত ছাড়ো আন্দোলন দিবস। স্মরণ করা হয় ওই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অসংখ্য নাম জানা- না জানা মানুষদের। শ্রদ্ধা জানানো হয় তাঁদের ত্যাগের প্রতিও।
আরও পড়ুন: সুতোর কারিকুরিতে জড়িয়ে দেশের সংস্কৃতি, আজ জাতীয় তন্তু দিবস