(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
Aparna Sen: বিএসএফ ৫০ কিমি ভেতরে চলে এলে চোরাচালান আটকাবে কী করে, 'ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন' অনুষ্ঠানে প্রশ্ন অপর্ণা সেনের
রাজ্য সরকারের অবস্থানে সমর্থন জানিয়ে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব বিদ্বজ্জনদের একাংশও। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেত্রী অপর্ণা সেন।
কলকাতা: বিএসএফের কাজের পরিসর বৃদ্ধির বিরোধিতায় রাজ্যের তৃণমূল সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। এনিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন বিমান বসু এবং অধীর চৌধুরী। বাম-কংগ্রেসের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূল। পাল্টা মুখ খুলেছে বিজেপি।
রাজ্য সরকারের অবস্থানে সমর্থন জানিয়ে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব বিদ্বজ্জনদের একাংশও। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেত্রী অপর্ণা সেন। বিএসএফের কাজের এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিবাদে সরব অপর্ণা সেন। ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন অনুষ্ঠানে অপর্ণা সেন বলেছেন, 'সবচেয়ে আগে বলা দরকার, ১৯৪৫-র জেনিভা কনভেনশন অনুযায়ী, ইন্টারন্যাশনাল বর্ডার পিলার (আইবিপি) থেকে দেড়শো গজ দূরে থাকবে কাঁটাতারের বেড়া বা দেওয়াল। কিন্তু সেগুলো বাড়তে বাড়তে অনেক জায়গায় ইতিমধ্যেই ৬ কিলোমিটার, অনেক জায়গায় ১২ কিলোমিটার হয়ে গেছে' ।
বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধি পেলে অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, জঙ্গি কার্যকলাপ রোখার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে অপর্ণা সেন বলেছেন, 'চোরাচালনের কথা বলা হলে, বর্ডার পিলার থেকে যদি কাঁটাতার এতটা দূরে থাকে তাহলে তো চোরাচালান চলবে। বিএসফের উচিত আইবিপি-র কাছাকাছি থাকা । তারা যদি ৫০ কিমি ভেতরে চলে আসে তাহলে ওদিকে কী হচ্ছে, তা কী করে আটকানো যাবে। মাথায় ঢুকছে না'।
বিএসএফের ক্ষমতার পরিসর বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে ২২১৬ কিমি জুড়ে। এরমধ্যে প্রায় ১৬৩৮ কিমি ফেন্সিং দেওয়া হয়েছে। ৬০০ কিমির মতো এলাকায় ফেন্সিং নেই। ফলে অনুপ্রবেশের বিপদ বেশি। বিএসএফের ক্ষমতার পরিসর এক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা হবে। এই যুক্তি প্রসঙ্গে অপর্ণা সেন বলেছেন, 'এটা বিশ্বাস করা কঠিন, প্রতি বছর দেড়শো জন বিএসএফের গুলিতে মারা। বিচার হচ্ছে না। বলা হচ্ছে আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে হয়। এমনটা হলে তাহলে দুই পক্ষের হতাহতের আশঙ্কা থাকে। মৃতদের অনেকেরই পিঠে গুলি লেগেছে'।
কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় এক বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খান অর্পণা সেনকে নিশানা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে ট্যাগ করে সমালোচনা করেছেন বিজেপি সাংসদ। এ ব্যাপারে অপর্ণা সেন বলেছেন, ' ওঁরা যা খুশি যা তাই বলতে পারেন। যে ঘটনা ঘটছে, সে ব্যাপারে মন্তব্য করছি। তাঁরা যদি জবরদস্তি বলতে চান, তাহলে বোঝাই যাবে, তাঁরা মানুষের ওপর জবরদস্তি করেন'।
বিএসএফের প্রাক্তন উচ্চপদস্থ আধিকারিক সমীর মিত্রও বিএসএফের ক্ষমতার পরিসর বৃদ্ধি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন অনুষ্ঠানে প্রাক্তন বিএসএফ কর্তা বলেছেন, 'আগে যখন এরিয়া অফ অপারেশন ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছিল, (গুজরাত ও রাজস্থান ব্যতিক্রম), তা অনেক ভাবনা চিন্তা করে নেওয়া হয়েছিল। জনসংখ্যার ধরণ, ঘণত্ব, অপরাধের ধরণ ও বাহিনীর সম্পদের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল'। তিনি বলেছেন, 'বিএসএফের কাজ সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধ প্রতিরোধ করা এবং সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা'।
তিনি বলেছেন, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়াটাই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। পঞ্জাবে খুব ভালোভাবে তা হয়েছে। কিন্তু এখানে রক্ষণাবেক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা হয়নি। ফলে অনেক জায়গায় ফেন্সিং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার পক্ষেও সওয়াল করেছেন তিনি।
এই ঘটনা ঘিরে কেন্দ্র ও রাজ্যের অপ্রয়োজনীয় সংঘাতের আশঙ্কা প্রসঙ্গে অপর্ণা সেন বলেছেন, এক্ষেত্রে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের দুঃখ-দুর্দশার বিষয়টিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অপর্ণা সেন বলেছেন, বছর দু-তিন আগে ছিটমহলে মানুষের দুর্দশা দেখে এসেছি। সবচেয়ে আগে, সেখানকার মানুষের প্রয়োজনীয়তার দিকে নজর দেওয়া দরকার। প্রান্তিক মানুষদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম কেন্দ্র ও রাজ্যের সংঘাতের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।