US Presidential Elections 2024: উদাহরণ তৈরির তাগিদ, না কি তীব্র জাতীয়তা বাদ? কমলা বনাম ট্রাম্প, আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে?
US Elections 2024: শেষ পর্যন্ত কাকে বেছে নেন আমেরিকার মানুষ, তা বোঝা যাবে ফলঘোষণার পরই।
নয়াদিল্লি: ঔপনিবেশিক শাসকের হাত থেক মুক্তি মিলেছিল সেই ১৭৭৬ সালে। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের এত বছর পরও মহিলা রাষ্ট্রনেতা বেছে নেওয়ায় সফল হয়নি আমেরিকা। সেই নিরিখে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সবদিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ দেশের নাগরিকদের জন্য। প্রবল শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবার একজন মহিলাকে বেছে নেওয়াই নয়, পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ যে স্বাধীন-মুক্ত আমেরিকার স্বপ্ন মনে পুষে রাখেন, অভিবাসী পরিবারের সন্তান কমলা হ্যারিস যদি জয়যুক্ত হন, সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহলেও মুখরক্ষা হবে আমেরিকার। কিন্তু ডেমোক্র্যাটসদের প্রার্থী কমলার প্রতিপক্ষ যিনি, দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, রিপাবলিকান্সদের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে রয়েছে তীব্র জাতীয়তাবাদী আবেগ, অভিবাসী বিরোধী ভাবনা। তাই কুখ্যাতি, বিতর্ক কানে তুলতে নারাজ ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থকরা। এর আগে, আমেরিকার রাজনীতিতে এত গভীর বিভাজন চোখে পড়েনি বলে মনে করছেন অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে এবারের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেশের ইতিহাসে এক সন্ধিক্ষণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাকে বেছে নেন আমেরিকার মানুষ, তা বোঝা যাবে ফলঘোষণার পরই। (US Presidential Elections 2024)
দেশের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চলছে আমেরিকায়। এখনও পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান উঠে এসেছে, তাতে হোয়াইট হাউসের দখল পেতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে এবার। ডেমোক্র্যাটসদের প্রার্থী কমলার সাফ বার্তা, "কাজে করে দেখানোর সময় এসেথে। আগামী দু'দিন অনেক কিছু রয়েছে। কিন্তু পরিশ্রমই শেষ কথা। পরিশ্রমই শেষ কথা বলে। কোনও ভুলের জায়গা নেই। আমরাই জিতব।" অন্য দিকে, ট্রাম্পের বক্তব্য, "আমেরিকাবাসীকে বলব, এভাবে বাঁচতে হবে না আমাদের। দুর্বল হয়ে বাঁচতে হবে না আমাদের। আপনাদের সমর্থন পেলে দেশের সব সমস্যা মিটে যাবে। আমেরিকাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সফল হব আমরা। আমার গোটা পৃথিবীকে উদ্ধার করতে পারব। আমাদের স্বীকৃতি দেবেন সকলে।" ট্রাম্পের দাবি, তিনি জয়ী হলে মুদ্রাস্ফীতি থেকে নিস্তার মিলবে, সীমান্ত পেরিয়ে অপরাধীদের আমেরিকার প্রবেশ বন্ধ হবে দেশে, পৃথিবীতে শান্তি ফিরবে, 'আমেরিকান ড্রিম' আবারও আগের সেই আস্থা ফিরে পাবে।(US Elections 2024)
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচনে সাতটি প্রদেশ নির্ণায়কের ভূমিকা পালন করবে, অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভ্যানিয়া এবং উইসকনসিন। এই সাতটি প্রদেশে বরাবরই প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান অত্যন্ত কম থেকেছে, যা জয়ী এবং পরাজিত প্রার্থীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেছে। ২০০৪ সালে ওই সাতটি প্রদেশের মধ্যে চারটিতে জয়ী হয়েছিলেন জর্জ বুশ। ২০০৮ সালে পাঁচটিতে জয়ী হন বারাক ওবামা। ২০১২ সালে দ্বিতীয় বার ওবামা চারটিতে জয়ী হন। ২০১৬ সালে ছ'টি প্রদেশে জয়ী হন ট্রাম্প। ২০২০ সালে ছয়টি প্রদেশেই জয়ী হন জো বাইডেন। তাই ওই সাতটি প্রদেশে জয়ের নিরিখে যিনি এগিয়ে থাকবেন, আগামী চার বছর হোয়াইট হাউস তাঁর দখলেই থাকবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তবে আমেরিকার নির্বাচন অন্য দেশের থেকে অনেকটাই আলাদা। বেশি সংখ্যক মানুষের ভোট যিনি পাবেন, তিনিই বিজয়ী হবেন, এমনটা বাধ্যবাধক নয়। যিনি বেশি সংখ্যক মানুষের ভোট পান, তাঁকে 'পপুলার ভোটে' জয়ী হিসেবে গন্য করা হয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আসলে নির্বাচিত হন ইলেক্টোরাল কলেজ নামক নির্বাচকমণ্ডলীর মাধ্যমে। কোন প্রদেশে কত ইলেক্টোরাল ভোট থাকবে, তা নির্ধারিত হয় সেখানে কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের সংখ্যা কত, তার উপর। ক্যালিফোর্নিয়ায় মোট ৫২টি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে। সেনেটে দু'টি আসন রয়েছে সখান থেকে। ফলে সেখানে ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৪টি। সাধারণ মানুষের ভোটদানের আগে দুই দলের তরফে মনোনীত ইলেক্টোরাল ভোটারের তালিকা জমা দেওয়া হয়, যাকে বলা হয় স্লেট। সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে সেই স্লেট নির্বাচন করেন। এর ফলে নির্বাচিত ইলেক্টোরাল কলেজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোট দেন। বুধবার সাধারণ মানুষের ভোটদান হয়ে গেলে, আগামী সোমবার ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটাররা আলাদা ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদান করবেন। সেই নিরিখেই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। ৫৩৮ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটারের মধ্যে ২৭০টি পাবেন যিনি, তিনিই বিজয়ী ঘোষিত হবেন। ২৬৯টি করে হলে 'ড্র' হবে। সেক্ষেত্রে উচ্চকক্ষ, হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টিভসের সদস্যরা ভোটদানের মাধ্যমে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবেন। এক্ষেত্রে, সেনেটে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে, হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। (Kamala Harris)
এবারের নির্বাচনে অভিবাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ক্ষমতায় এলে সীমান্তে দেওয়াল বসানো থেকে সেনাসংখ্যা এবং ১০ হাজার এজেন্ট বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। কমলা গোটা বিষয়টি আইনি পথে মোকাবিলার কথা বলেছেন। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া আমেরিকায় বসবাসের ঘোর বিরোধী ট্রাম্প। কমলা আবার পরিশ্রমের মাধ্যমে, দীর্ঘদিন বসবাসের নিরিখে নাগরিকত্ব অর্জনের পক্ষে। যে H-1B ভিসার মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে তুলনামূলক কম বেতনে কর্মী নিয়োগ করে বিভিন্ন সংস্থা, তাতে আরও কড়া বিধি-নিয়ম চালুর পক্ষে ট্রাম্প। কমলা আবার ভিসার অধিকারী ব্যক্তি এবং তাঁর জীবনসঙ্গীকে আমেরিকায় ঢুকতে দেওয়ার পক্ষে। পরীক্ষায় উতরে যাওয়া ব্যক্তিদের আপনা আপনি গ্রিন কার্ড দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। কমলা সেই নিয়ে যদিও কোনও অবস্থান জানাননি। আমেরিকায় আশ্রয় চাওয়ার ক্ষেত্রে ৪২টি ধাপ পেরোতে হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। কমলা আবার পরিবার এবং শিশুদের জীবনের নিরাপত্তার পক্ষে। ক্ষমতায় এলে বৈধ কাগজপত্র না থাকা মানুষদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। দক্ষতা, যোগ্যতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নিতে চান কমলা। (Donald Trump)
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একেবারে গোড়া থেকে সক্রিয় ছিলেন ট্রাম্প। সেই তুলনায় অনেকটা দেরিতে যাত্রা শুরু করেছেন কমলা। শারীরিক অসুস্থতা এবং দলের অভ্যন্তর থেকে বিরোধিতার জেরে মাস তিনেক আগে দৌড় থেকে সরে দাঁড়ান বাইডেন। ফলে প্রচারে অনেক কম সময় পেয়েছেন কমলা। তবে আর্থিক দুর্নীতি, ধর্ষণ, জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপসের অভিযোগে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে বারংবার। তাই সরাসরি ট্রাম্পকে 'গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক' বলে উল্লেখ করেছেন কমলা। আবার মায়ের দিক থেকে ভারতীয় কমলাকে আক্রমণ করতে প্রবাসী ভারতীয়দের মনজয়ে নেমেছেন ট্রাম্প। কমলা 'ভারতীয় হিন্দুদের নিয়ে ভাবিত নন' বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। আবার ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নিয়ে ভয়ভীত হলেও, ইজরায়েল বনাম হামাস যুদ্ধে আমেরিকার অবস্থান নিয়ে বাইডেন সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলার ভূমিকায় অসন্তুষ্ট পশ্চিম এশিয়া থেকে আমেরিকায় যাওয়া মানুষজনও। তাই শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি কে হাসেন, তা জানতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। কারণ গোটা প্রক্রিয়া কবে মিটবে, তা এখনই নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বিজয়ী প্রার্থী।