Mohun Bagan Vs Mohammedan: মহমেডানকে ৩ গোলে চূর্ণ করে পয়েন্ট টেবিলে চার নম্বরে উঠে এল মোহনবাগান
ISL News: মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনার দল বাছাইয়েই এ দিন ছিল বড় চমক। দলে চারটি পরিবর্তন করেন তিনি। দিমিত্রি পেট্রাটস, জেসন কামিংস কেউই ছিলেন না তাঁর প্রথম এগারোয়।
কলকাতা: আট দিন আগে বেঙ্গালুরুতে তিন গোলে হেরেছিল মোহনবাগান এসজি (MBSG)। এই আট দিনে যে ভুলভ্রান্তিগুলি শুধরে নিয়ে নিজেদের তৈরি করে নিয়েছে হোসে মোলিনার দল, তা বুঝিয়ে দিল শনিবার ঘরের মাঠে কলকাতা ডার্বিতে। মহমেডান এসসি-কে ৩-০-য় হারিয়ে জয়ে ফিরল সবুজ-মেরুন বাহিনী। গত তিন ম্যাচে ক্রমশ উন্নতি করে হার, ড্র ও জয় পাওয়া মহমেডান এসসি বুঝে নিল প্রবল চাপ সামলে জয়ের পথে ফিরতে তাদের এখনও সময় লাগবে।
এ দিন সারা ম্যাচে ১২টি শট গোলে রাখে সবুজ-মেরুন বাহিনী। কিন্তু প্রতিপক্ষকে একটির বেশি শট গোলে রাখতে দেয়নি তারা। মোহনবাগান যেখানে ১৮টি গোলের সুযোগ তৈরি করে ও প্রতিপক্ষের বক্সে ২৪বার বল ছোঁয় মোহনবাগান, সেখানে মহমেডান সাতটির বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি এবং প্রতিপক্ষের বক্সে ১১বারের বেশি বল ছুঁতে পারেনি। এই পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দেয় কতটা দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়ে ম্যাচ জিতে নেয় সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।
মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনার দল বাছাইয়েই এ দিন ছিল বড় চমক। দলে চারটি পরিবর্তন করেন তিনি। দিমিত্রি পেট্রাটস, জেসন কামিংস কেউই ছিলেন না তাঁর প্রথম এগারোয়। মনবীর সিং ও জেমি ম্যাকলারেনকে সামনে রেখে ৪-৪-১-১-এ দল সাজান তিনি। পেট্রাটসকে নামান ম্যাচের শেষ দিকে। কামিংস এ দিন নামেনইনি। গ্রেগ স্টুয়ার্ট ও ম্যাকলারেনের বোঝাপড়ায় এ দিন মোহনবাগানের আক্রমণে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে, ফানাই, ফ্রাঙ্কা ও মকান চোঠেকে আক্রমণে রেখে অপরিবর্তিত দলকে ৪-৩-৩ ছকে সাজিয়ে শুরু করে মহমেডান। যা মোহনবাগানের মতো আগ্রাসী প্রতিপক্ষকে আটকানোর পক্ষে যথেষ্ট ছিল না।
আট মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত গোল করে দলকে এগিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার ও এ লিগের অন্যতম সেরা ফুটবলার ম্যাকলারেন। ৩১ মিনিটের মাথায় ফের আর এক স্মরণীয় হেডে ব্যবধান বাড়ান শুভাশিস বোস এবং ৩৬ মিনিটের মাথায় গোল করে জয় নিশ্চিত করে ফেলেন স্টুয়ার্ট। তবে এ দিন যা পরিমান গোলের সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান, সেগুলি কাজে লাগাতে পারলে অনেক বেশি ব্যবধানে জিততে পারত তারা। শনিবারের এই জয়ের ফলে ফের সেরা ছয়ে ঢুকে পড়ল সবুজ-মেরুন বাহিনী। লিগ তালিকায় চার ম্যাচে সাত পয়েন্ট পেয়ে তারা আপাতত চার নম্বরে। আন্তর্জাতিক অবকাশের পর ফিরে এসেই এ মাসের ১৯ তারিখ তারা আর এক ডার্বিতে নামবে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে।
শুরু থেকেই এ দিন প্রতিপক্ষকে চাপে রাখে মোলিনার দল। মহমেডান পাল্টা আক্রমণের সুযোগ তৈরি করে নিলেও ম্যাকলারেন ও স্টুয়ার্টের দুর্দান্ত বোঝাপড়ার প্রভাব শুরু থেকেই টের পায় তারা। এই জুটির বোঝাপড়াই তাদের প্রথম গোল এনে দেয় আট মিনিটের মাথায়। লিস্টন কোলাসোর কর্নারে প্রথমে হেড ফ্লিক করে ম্যাকলারেনের কাছে বল পাঠান স্টুয়ার্ট। ম্যাকলারেন তা অসাধারণ হেডে গোলে পাঠাতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি। (১-০)। এর ঠিক আগেই আপুইয়ার একটি দূরপাল্লার শট গোলে ঢোকার মুখে যদি চাপড় মেরে বার করে না দিতেন গোলকিপার পদম ছেত্রী, তা হলে তখনই এগিয়ে যেত তারা। এর জেরে পাওয়া কর্নার থেকেই গোল পান ম্যাকলারেন।
প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যেই যেখানে সবুজ-মেরুন বাহিনীর চারটি শট লক্ষ্যে ছিল, সেখানে একটিও গোলে রাখতে পারেনি মহমেডান। সারা প্রথমার্ধেই কোনও শট গোলে রাখতে পারেনি সাদা-কালো ব্রিগেড। প্রথম ৪৫ মিনিটে সব মিলিয়ে ছ’টি শট গোলে ছিল বাগান-বাহিনীর। শুরু থেকেই যে আগ্রাসী ফুটবল খেলে মোহনবাগান, তা এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। গত ম্যাচে শোচনীয় হার যে তাদের এই ম্যাচে আরও ধারালো ও ক্ষুধার্ত করে তুলেছিল, তা তারা শুরু থেকেই বুঝিয়ে দেয়।
২২ মিনিটের মাথায় ফের গোলের সুযোগ পান কোলাসো। ম্যাকলারেনের সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে তিনি বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে দ্বিতীয় পোস্টের দিক দিয়ে গোলে বল ঠেলার চেষ্টা করলেও তা অনেকটা বাইরে দিয়ে চলে যায়। মহমেডান বারবার বল দখলে নিয়ে ম্যাচের গতি কমিয়ে নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করলেও তাদের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে প্রতি আক্রমণে উঠছিলেন মোহনবাগানের অ্যাটাকাররা।
মহমেডানের দুই লাতিন অ্যাটাকার অ্যালেক্সি গোমেজ ও রবার্তো ফ্রাঙ্কাকে আটকানোর দায়িত্বে ছিলেন দুই বিদেশী স্টপার আলবার্তো রড্রিগেজ ও টম অ্যালড্রেড। শুভাশিস ও আশিস প্রায়ই ওভারল্যাপে উঠে আক্রমণে সঙ্গ দেন। ৩১ মিনিটের মাথায় অধিনায়ক শুভাশিসই অসাধারণ এক হেড করে দলকে দ্বিতীয় গোল এনে দেন। বাঁ দিকের উইং থেকে নেওয়া স্টুয়ার্টের নিখুঁত ফ্রিকিক উড়ে আসে তাঁরই মাথায় এবং মাথা দিয়ে গোলে বল ঠেলতে কোনও ভুল করেননি অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার (২-০)। প্রথমার্ধের শেষে এমনই এক কর্নার থেকে হেডে আরও একটি গোলের সুযোগ পান তিনি। তবে এ বার লক্ষ্যভ্রষ্ট হন।
মোহনবাগানের আক্রমণ সামলাতে এ দিন হিমশিম খেয়ে যান মহমেডানের রক্ষণ। গত তিন ম্যাচে যাঁদের রক্ষণকে বেশ মজবুত ও দুর্ভেদ্য মনে হয়েছিল, এ দিন সবুজ-মেরুন আক্রমণের তীব্রতায় সেই রক্ষণই ভেঙে পড়ে। ৩৬ মিনিটের মাথায় শুভাশিসের পাস থেকে বল পেয়ে দলকে যখন তৃতীয় গোল এনে দেন স্টুয়ার্ট, তখনও তাঁকে আটকাতে পারেননি মহমেডান ডিফেন্ডাররা। অসাধারণ ড্রিবল করে তিন ডিফেন্ডারকে ছিটকে দিয়ে বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ে গোলে শট নেন স্কটিশ তারকা (৩-০)।
প্রথমার্ধেই তিন গোলে এগিয়ে যাওয়া মোহনবাগানের খেলায় দ্বিতীয়ার্ধে অতটা আগ্রাসন দেখা যায়নি। প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে তাদের একটিমাত্র শট গোলে ছিল, যা নেন মনবীর সিং। লিস্টন কোলাসোর একটি শট আটকে দেন গোলকিপার ছেত্রী। কিন্তু ৬৩ মিনিটের মাথায় মনবীরের ক্রসে গোললাইনের সামনে যে সুযোগ নষ্ট করেন কোলাসো, তাও অভাবনীয়। তবে কৃতিত্ব ডিফেন্ডার জুডিকারও প্রাপ্য। কোলাসোর শট অসাধারণ ভাবে ব্লক করেন তিনি। ৭৩ মিনিটের মাথাতেও কোলাসোর একটি দূরপাল্লার শট সেভ করেন ছেত্রী।
বিরতির পরে তিনটি পরিবর্তন করে খেলতে নামা মহমেডানও দ্বিতীয়ার্ধে লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা করে। ৫৭ মিনিটের মাথায় কাসিমভের একটি দূরপাল্লার শট আটকে দেন বিশাল কয়েথ। ফ্রাঙ্কার জায়গায় নামেন সিজার মানজোকি। চোঠে ও অমরজিৎকেও তুলে নেওয়া হয়। নামানো হয় বিকাশ সিং ও মাফেলাকে। এর ফলে তাদের আক্রমণে কিছুটা হলেও গতি আসে। সামাদ আলি মল্লিকও মাঠে আসেন।
আরও পড়ুন: অঙ্কিতের সেঞ্চুরিতে বিরাট জয় বাংলার, অভিষেকেই নায়ক কিংবদন্তির পুত্র
আরও পড়ুন: ব্যর্থ অভিমন্যুর লড়াই, ২৭ বছর পর ইরানি কাপ জিতল রাহানের মুম্বই