Mohun Bagan vs Odisha FC: ওড়িশাকে হারালেই লিগ শিল্ড নিশ্চিত, তাও ম্যাচটিকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে নারাজ মোহনবাগান কোচ
Mohun Bagan Super Giant: আপাতত দ্বিতীয় স্থানে থাকা গোয়ার থেকে সাত পয়েন্টে এগিয়ে মোহনবাগান। ২১ ম্যাচে তাঁদের সংগ্রহ ৪৯ পয়েন্ট

কলকাতা: টানা দ্বিতীয়বার লিগ শিল্ড জয়ের নজির থেকে মাত্র তিন পয়েন্ট দূরে থাকলেও মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan Super Giant) কোচ কিন্তু তাঁর দল নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক। এখনও তিন ম্যাচে বাকি তাদের। লিগশিল্ড জয়ের জন্য মাত্র তিন পয়েন্ট প্রয়োজন। এই অবস্থায় দলের ফুটবলারদের মধ্যে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও গা ছাড়া মনোভাব আসার সম্ভবনা থাকেই। কিন্তু মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনা (Jose Molina) মনে করেন, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কোনও জায়গা নেই তাদের শিবিরে। দলের ফুটবলারদের ওপর চাপ কমাতে এই ম্যাচকে বাড়তি গুরুত্ব দিতেও নারাজ তিনি।
ঘরের মাঠে ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে নামার আগে শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে মোলিনা বলেন, “সবাই জানেন এই ম্যাচটার গুরুত্ব কী। তবে আমাদের কাছে এটা আর পাঁচটা ম্যাচের মতোই, যাতে জিততে হবে আমাদের। এই তিন পয়েন্ট আমাদের কাছে এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্য ম্যাচগুলোতে আমরা যা করেছি, এই ম্যাচেও তা-ই করব। বাড়তি কিছু করার নেই এই ম্যাচে”।
সময়টা এমনই, যখন দলের ফুটবলারদের মধ্যে আত্মতুষ্টি আসার সম্ভাবনা থাকেই। তাঁরা যেহেতু জানেন তিন ম্যাচে তিন পয়েন্ট পেলেই শিল্ড জেতা হয়ে যাবে তাঁদের, তাই এই সমস্যা আসতেই পারে। তবে এই সময়টাকে কঠিন বলে মানতে নারাজ মোলিনা। বলেন, “কঠিন কেন হতে যাবে! বরং এটা আমাদের সেরা সময়। আগের চেয়ে এখন আমরা সেরা মুহূর্তের সবচেয়ে কাছে আছি। সে ভাবেই দেখছি আমরা এই সময়টাকে। লিগে এখনও তিনটে ম্যাচ বাকি আমাদের। এই সময়েই এই জায়গায় এসে যাওয়াটা খুবই ভাল”।
অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস নিয়ে তাঁর মন্তব্য, “বাড়তি আত্মবিশ্বাসী হওয়া বা গা ছাড়া হওয়ার কোনও জায়গাই নেই আমাদের দলে। আমাদের সামনে এখন শিল্ড রয়েছে, তা জিততেই হবে। সে জন্য ৯০ মিনিট ধরে লড়াই করতেই হবে। এখানে রিল্যাক্স করার কোনও জায়গাই নেই। আমরা তখনই রিল্যাক্সড হব, যখন আমাদের হাতে শিল্ড উঠবে। আত্মবিশ্বাসী থাকতেই হবে। কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী কখনওই নয়”।
‘শুধু ভাল মানের ফুটবলার থাকলেই হয় না’
এ মরশুমে কেন এতটা সফল তাঁর দল, জানতে চাইলে স্প্যানিশ কোচ বলেন, “আমরা শুরু থেকেই যথেষ্ট পরিশ্রম করেছি। শুধু খেলোয়াড়রা নয়, ক্লাবের সবাই। মাঠের বাইরে থেকে প্রচুর সাহায্য ও সমর্থন পেয়েছি। মালিক, ম্যানেজমেন্ট, স্টাফ, সমর্থক, মিডিয়া সবার সাহায্য পেয়েছি। আমিও যথাসাধ্য সাহায্য করছি দলকে। প্রতিদিনই নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। খেলোয়াড়দের মান অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে শুধু ভাল মানের ফুটবলার থাকলেই হয় না, তাদের পরিশ্রমও করতে হয়। কালও আমাদের খেলায় সেই পরিশ্রমের ছাপই থাকবে”।
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “আমি সবসময়ই চেষ্টা করেছি যাতে আমরা দল হিসেবে সেরা জায়গায় পৌঁছতে পারি। আমাদের দলে অনেক ভাল ভাল খেলোয়াড় আছে ঠিকই। কিন্তু তাদের একত্রিত করে একটা সেরা দল তৈরি করাই বরাবর ছিল আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আমি এ ভাবেই কাজ করতে অভ্যস্ত। জানি না, এটা ঠিক না ভুল”।
এ পর্যন্ত ১৩টি ম্যাচে গোল অক্ষত রাখতে পেরেছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। ক্লিন শিট বজায় রাখা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তাদের কোচ। বলেন, “আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটা। সারা ম্যাচে গোল অক্ষত রাখতে পারলে একটা গোল করলেই জেতা যায়। সে জন্যই এই ব্যাপারটা আমার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আক্রমণের মতো রক্ষণও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিশ্রম।
ধরুন আমরা যদি ২১ ম্যাচে ২১টা ক্লিন শিট রাখতাম এবং একটাও গোল না করতাম, তা সত্ত্বেও আমরা ২১ পয়েন্ট পেতাম। কিন্তু পয়েন্ট টেবলে শীর্ষে থাকতে পারতাম না, এমনকী সেরা ছয়েও থাকতে পারতাম না। তাই গোল করাটাও জরুরি। রক্ষণ ও আক্রমণের মধ্যে এই ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব পরিশ্রমের মাধ্যমে। শুরুর দিকে এই ভারসাম্যটা আমাদের ছিল না। পরে তা এসেছে। এবং পরিশ্রমের ফলেই তা এসেছে। ফুটবলে আক্রমণ ও রক্ষণকে আলাদা করা যায় না। দুটোই এর অপরিহার্য্য অঙ্গ। সেরা দলের সব দিকই ভাল হওয়া দরকার এবং আমি আমার দলকে সেভাবেই তৈরি করতে চাই”।
প্রথম লিগে যে দলের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেও ১-১ ড্র করতে হয়েছিল তাঁদের, সেই ওড়িশা এফসি সম্পর্কে মোলিনা বলেন, “ওড়িশা কতটা ভাল দল, কত ভাল খেলে, তা আমরা জানি। ওদের আক্রমণ, রক্ষণ সম্পর্কেও আমরা জানি। কী ফরমেশনে ওরা সাধারণত খেলে, তাও জানা আছে। হয়তো একই রকম থাকবে ওদের সব কিছু। তবে চমকও দিতে পারে ওরা। আমরাও এই মরশুমে অনেকবার প্রতিপক্ষকে চমক দিয়েছি।
অনেক দলই শুধু আমাদের বিরুদ্ধে পাঁচ ব্যাকে খেলেছে। তবে কোনও দল কী রকম খেলতে চায়, তা তাদের লাইন-আপ ও ফর্মেশন দেখলে বোঝা যায়। পাঞ্জাব যেমন আমাদের বিরুদ্ধে ৫-৩-২-এ খেলেছিল। ওড়িশাও তেমন পরিবর্তন আনতে পারে তাদের খেলায়। তবে চিন্তা করার কিছু নেই। আমরা কতটা ভাল, কেমন খেলব, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে কাল আমাদের ম্যাচটা কঠিন হবে। আমাদের অনেক লড়াই করতে হবে। আমার কাছে আমার দলের খেলোয়াড়রাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওরা ভাল খেললে, জয়ের ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী। নিজেদের মাঠে সমর্থকদের সামনে নামলে আমরা সব সময়ই আত্মবিশ্বাসী থাকি”।
‘পরের ম্যাচে শিল্ড-জয় উদযাপন করুক বাগান’
অন্য দিকে, ওড়িশার কোচ সের্খিও লোবেরার আশা, যুবভারতীতে ভাল খেলবে তাঁর দল। কলকাতায় আসার আগে ভুবনেশ্বরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের মানসিকতা ইতিবাচক। আমরা আশাবাদী। আমরা নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখি। অতীত অতীতই, কিন্তু গত মরশুমে আমরা কলকাতায় গুরুত্বপূর্ণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছিলাম (২-২) এবং আশা করি এবারও তার পুনরাবৃত্তি করতে পারব। আমরা জানি, এটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। এই ম্যাচ নিয়ে আমরা দারুণ উত্তেজিত। আশা করি, আমরা আবারও সফল হতে পারব”।
যুবভারতীর রোমাঞ্চকর পরিবেশ নিয়ে লোবেরা বলেন, “কোচ, খেলোয়াড়রা এই ধৎনের ম্যাচই খেলতে চায়। যখন ভরা গ্যালারির সামনে এই ধরনের ম্যাচ খেলতে হয়, তখন মনে হয়, আমরা বড় কিছু পাওয়ার জন্য লড়ছি। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। অবশ্যই, ওদের সামনেও বিশাল কিছু উদযাপনের সুযোগ থাকছে। তবে আমরা চাই, তারা এটি তাদের পরবর্তী ম্যাচে উদযাপন করুক”।
কলিঙ্গ-বাহিনীর আত্মবিশ্বাসী কোচ বলেন, “আমরা তিনটে ফাইনাল খেলছি। সেরা ছয়ে থাকার সম্ভাবনা আমাদের আছে। আমরা নিজেদের জন্য খেলছি, আমাদের নিজেদের জন্য লড়তে হবে। গত মরশুমে যখন আমরা কলকাতায় গিয়েছিলাম, তখন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম। এই মরশুম এবং প্রতিটি মরশুম আলাদা। তুলনা করা সম্ভব নয়। তবে আমরা ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছি যে, আমরা এই ধরনের চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত, এবং আবারও সবাইকে দেখাতে চাই যে, আমরা এই ধরনের ম্যাচের জন্য তৈরি”।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছেন খেলোয়াড়রা, লিগ তালিকায় ওপরের দিকে শেষ করতে মরিয়া ইস্টবেঙ্গল কোচ
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
