![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/Premium-ad-Icon.png)
Rabindra Jayanti 2023: ভোরে উঠে কুস্তি! কলের জলের অমোঘ টান! কেমন ছিল রবিঠাকুরের ছোটবেলা?
Rabindranath Tagore Birth Anniversary: কেমন ছিল স্কুলের দিনগুলি? কবে প্রথম ভয় পেয়েছিলেন বালক রবি? মন ছিল কুস্তির আখড়ায়?
![Rabindra Jayanti 2023: ভোরে উঠে কুস্তি! কলের জলের অমোঘ টান! কেমন ছিল রবিঠাকুরের ছোটবেলা? Rabindra Jayanti 2023: ABP Exclusive story, Get to know the unknown facts of Rabindranath Tagore Rabindra Jayanti 2023: ভোরে উঠে কুস্তি! কলের জলের অমোঘ টান! কেমন ছিল রবিঠাকুরের ছোটবেলা?](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2023/05/08/72f19b3afeb1e723502968f66d2f97c61683533071608385_original.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
কলকাতা: প্রেমে পড়ার আনন্দ থেকে প্রেম হারানোর বেদনা। বসন্তের রঙিন উচ্ছ্বাস থেকে ঘোর আষাঢ়ের অবিরাম বর্ষণ। এক ব্য়ক্তির গোটা জীবনে নানা সময়ে যতরকম অনুভূতি থাকে, সেই সবরকম অনুভূতির জন্যই হয়তো কথা-সুরের সৃষ্টি রেখে গিয়েছেন রবিঠাকুর। দার্শনিক, সাহিত্যিক, কবি, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, শিক্ষক- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছড়িয়ে রয়েছে সর্বত্র। বিশ্বভারতীর স্রষ্টা, নোবেলজয়ী এই মহান ব্যক্তি বাংলা ও বাঙালির শ্বাস-প্রশ্বাসে বিরাজ করেন। এমন এক মহীরূহের ছোটবেলাটা (Rabindranath Tagore Childhood) ঠিক কেমন ছিল? কেমন ছিল তাঁর শৈশব, কোন খাতে বয়েছে তাঁর কৈশোর? আর পাঁচজনের মতোই নাকি বেশ খানিকটা আলাদা? এই প্রশ্ন মনে আসবেই। তারও উত্তর দিয়ে গিয়েছেন কবিগুরু। কখনও জীবনস্মৃতির পাতার, কখনও কোনও কবিতায়।
নিঝুম দুপুরগুলো:
ঠাকুর পরিবারের সন্তান। বিশাল জমিদারি, বিপুল বৈভব। কিন্তু ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ বড় হয়ে উঠেছেন সাদামাটা ভাবেই। ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তাঁর স্মৃতিতে উঠে এসেছে বাড়ির একদিকে থাকা ঘাটবাঁধানো পুকুরের কথ। ঘরের জানলা দিয়ে দেখা যেত নীচেই থাকা ঘাটবাঁধানো পুকুরটাকে। ভৃত্যনির্ভর জীবনে ঘর ছেড়ে বেরোবার উপায় ছিল না। তাই সারাটা দুপুর কেটে যেত ওই পুকুর, পুকুরে আসা লোকজন আর সাঁতার কেটে বেড়ানো হাঁস দেখে। কারও স্নানের বিশেষ ভঙ্গিমা, হাঁসের খাবার খোঁজা, পুকুরের পাশে বট---সবটা বারবার দেখে হয়তো ছবি তৈরি হয়েছিল শিশু রবীন্দ্রনাথের মনে। পরে যা বেরিয়েছে তাঁর কলম থেকে।
স্নানে মুক্তির আনন্দ:
কত ছোট ছোট বিষয়েও কতটা গভীরভাবে আনন্দ খুঁজে নেওয়া যায় তা জীবনস্মৃতির পাতায় পাতায় ফুটে উঠেছে। স্মৃতিচারণে রবিঠাকুর লিখেছেন তাঁর বাবার ঘরের কথা। প্রায়শই সেই ঘর তালাবন্ধ থাকত। সেই ঘরেই মাঝেমধ্যে ঢুকে পড়তেন তিনি। কারণ তাতে এক অমোঘ আকর্ষণ ছিল। তেতলার সেই ঘরের স্নানঘরে কলের জল আসত। তাতেই মুক্তি আনন্দ ছিল। জীবনস্মৃতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখছেন..'সে-স্নান আরামের জন্য় নহে, কেবলমাত্র ইচ্ছাটাকে লাগাম ছাড়িয়া দিবার জন্য়। একদিকে মুক্তি, আর-একদিকে বন্ধনের আশঙ্কা, এই দুইয়ে মিলিয়া কোম্পানির কলের জলের ধারা আমার মনের মধ্যে পুলকশর বর্ষণ করিত।'
আকাশ ছোঁয়া যায় না?
মাথার উপরের নীল আকাশ। ছোটবেলায় আমাদের কতজনের মনে কতরকম কল্পনাই তো আসত। একইরকম ছিলেন কবিগুরুও। যেদিন প্রথম জানলেন আকাশ ছোঁয়া যায় না, কেমন ছিল অনুভূতি? রবিঠাকুর যা লিখেছেন, তাতে মনে হতেই পারে এতো আমার ছোটবেলার মতোই ভাবনা। বোধোদয় পড়ানোর সময় পণ্ডিতমশাই শিশু রবীন্দ্রনাথতে বলেছিলেন...সিঁড়ির উপর সিঁড়ি উঠে গেলেও কখনও মাথা ঠেকবে না। আরও সিঁড়ির সংখ্যা বাড়াতে বললেও পণ্ডিতমশাইয়ের উত্তর ছিল একই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখছেন, 'শেষকালে যখন বুঝা গেল সিঁড়ির সংখ্যাা বাড়াইয়া কোনও লাভ নাই তখন স্তম্ভিত হইয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলাম এবং মনে করিলাম, এটা এমন একটা আশ্চর্য খবর যে পৃথিবীতে যাঁরা মাস্টারমশাই তাঁহারাই কেবল এটা জানেন, আর কেহ নয়।
স্কুলজীবনের গোড়ার কথা:
একেবারে গোড়ায় ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে পড়তেন শিশু রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু সে বড় অল্প দিন। তারপরেই তিনি ভর্তি নর্মাল স্কুলে। আজও স্কুল শুরু হয় প্রেয়ারের পরে। নতুন পড়ুয়াদের সেই গানে গলা মেলাতে প্রথম প্রথম বিস্তর বেগ পেতে হয়। রবিঠাকুরের ছোটবেলাও অন্যরকম ছিল না। ইংরেজি কিছু কথা আর তাতে সুরের আরোপ। কতকটা এমনটাই ছিল সেই প্রার্থনাসঙ্গীত। বড় বয়সে এসে কবির স্মৃতিতে সেই কথাও অস্পষ্ট। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? জীবনস্মৃতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখছেন, 'আমরা যে কী মন্ত্র আওড়াইতেছি এবং কী অনুষ্ঠান করিতেছি, তাহা কিছুই বুঝিতাম না। প্রত্যহ সেই একটা অর্থহীন একঘেয়ে ব্যাপারে যোগ দেওয়া আমাদের কাছে সুখবর ছিল না।' কিন্তু কী ছিল সেই সঙ্গীতে? রবিঠাকুর লিখছেন, 'কেবল একটা লাইন মনে পড়িতেছে- কলোকী পুলোকী সিংগিল মেলালিং মেলালিং মেলালিং'- এই লাইন কার অপভ্রংশ, কী অর্থ - তা অবশ্য কালের গভীরে হারিয়েছে। বিভিন্ন কারণেই স্কুলজীবন যে বিশেষ সুখকর ছিল না- তা নানাভাবে ব্য়ক্ত হয়েছে রবিঠাকুরের লেখায়। নর্মাল স্কুলের স্মৃতি নিয়েই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন ছোটগল্প- 'গিন্নি'
পরীক্ষায় প্রথম:
নর্মাল স্কুল ভাল না লাগলেও পরীক্ষায় প্রথম স্থান পেয়েছিলেন পড়ুয়া রবীন্দ্রনাথ। জীবনস্মৃতিতে তিনি লিখেছেন, এক বছর কেটে যাওয়ার পরে বাংলার বাৎসরিক পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা শিক্ষকের না-পসন্দ ছিল। তাই আবার পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। সুপারিন্টেন্ডেন্ট পাশে বসেছিলেন চৌকি নিয়ে, সেবারও সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছিলেন ছোট্ট রবি।
স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা না পসন্দ হলেও বাড়িতে নিয়ম করে একাধিক শিক্ষকের কাছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সাহিত্য, ভাষা, অঙ্ক, বিজ্ঞান, ভূগোল বাদ ছিল না কিছুই। শিখেছেন কুস্তিও। সেজদাদা হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উৎসাহেই প্রতিদিন ভোরে হীরা সিং নামে এক পালোয়ানের কাছে কুস্তিও শিখেছেন।
কবে শুরু কবিতা লেখা:
যাঁর কবিতা সাহিত্যে নোবেল এনেছে। কেমন ছিল তাঁর কবিতা লেখার শুরুটা? এই প্রশ্ন বোধহয় সবার মনেই কোনও না কোনও সময়ে এসেছে? এর উত্তর কিন্তু রবীন্দ্রনাথ নিজেই জীবনস্মৃতিতে দিয়েছেন। গুণেন্দ্রনাথের বড় বোন কাদম্বিনী দেবীর পুত্র জ্যোতিপ্রকাশ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে কবিতা লেখার উৎসাহ দেন। তখন রবীন্দ্রনাথের বয়স সাত-আট। পদ্য লেখার রীতিনীতিও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন গুণেন্দ্রনাথই। জীবনস্মৃতিতে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, 'পদ্য-জিনিসটিকে এ-পর্যন্ত ছাপার বহিতেই দেখিয়াছি। কাটাকুটি নাই, ভাবাচিন্তা নাই, কোনোখানে মর্ত্যজনোচিত দুর্বলতার কোনো চিহ্ন দেখা যায় না। এই পদ্য যে নিজে চেষ্টা করিয়া লেখা যাইতে পারে, এ কথা কল্পনা করিতেও সাহত হইত না।' তবে ভয় ভেঙে কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই কাজে তাঁকে বিপুল উৎসাহ জুগিয়েছিলেন তাঁর দাদা সোমেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
ভয় পেয়েছিলেন:
জীবনস্মৃতির পাতায় রয়েছে অঘোরবাবুর কথা। তিনি রবিঠাকুরকে ইংরেজি পড়াতেন, আর নিজে মেডিক্যাল কলেজে পড়তেন। একদিন তাঁর সঙ্গেই মেডিক্যাল কলেজের শবব্যবচ্ছেদের ঘরে গিয়েছিলেন রবিঠাকুর। সেখানে মেঝের উপর একখণ্ড কাটা পা দেখে চমকে উঠেছিলেন তিনি। এতটাই তার গভীরতা ছিল যে দীর্ঘদিন পরেও ছোটবেলার সেই স্মৃতি তিনি ভুলতে পারেননি।
বাবার সঙ্গে হিমালয়ে:
এখনকার সঙ্গে তখনকার পরিবারের ধারণাও অনেকটাই আলাদা ছিল। পিতার সাহচর্য সেই সময় হয়তো প্রায় মিলতই না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখাতেও বারবার তেমনটাই উঠে এসেছে। অধিকাংশ সময়েই বাইরে থাকতেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। বালক রবির সঙ্গে তাঁর দেখা-সাক্ষাৎও কম। এরই মধ্যে পৈতে হয়েছিল রবির। তারপরেই তেতলার ঘরে ডাক। বাবার সঙ্গে হিমালয় যাওয়ার প্রস্তাব পেয়ে তাঁর মনে যে কী আনন্দ হয়েছিল, তা হয়তো একটা লাইনেই বোঝা সম্ভব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখছেন, 'চাই- এই কথাটা যদি চীৎকার করিয়া আকাশ ফাটাইয়া বলিতে পারিতাম, তবে মনের ভাবের উপযুক্ত উত্তর হইত।' সেই যাত্রাপথেই প্রথম বোলপুরে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। খোয়াই, নুড়িপাথর, গাছ- গভীর প্রভাব ফেলেছিল বালক রবির মনে। এই যাত্রার সময়েই পিতার সঙ্গে রবির সম্পর্ক কতটা ভালবাসার, শ্রদ্ধার ছিল তা ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে জীবনস্মৃতির পাতায়।
সেই সময় বালক রবির কাছে অল্প কিছ পয়সা রাখতে দিতেন মহর্ষি। আর একটা দায়িত্ব ছিল রবির, বাবার ঘড়িটিকে দম দেওয়ার দায়িত্ব। বালক রবিকে যখন সঙ্গে নিয়ে বের হতেন মহর্ষি। তখন পথের কোনও ভিক্ষুককে ভিক্ষা দিতে হবে রবিকেই আদেশ করতেন। সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রবিঠাকুর লিখছেন, সেই জমাখরচ কোনওদিনই মিলত না।
ভানুসিংহের পদাবলী:
তখন রবিঠাকুর কিশোর। বছর ১৫-১৬। শিক্ষক অক্ষয় চৌধুরীর কাছ থেকে ইংরেজ-কবি চ্যাটার্টনের কথা শুনেছিলেন। তাঁর লেখন-ভাবনা পদ্ধতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ভানুসিংহ ঠাকুর ছদ্মনামে লেখা শুরু করেন। রবিঠাকুর লিখছেন, '...সেই মেঘলাদিনের ছায়াঘন অবকাশের আনন্দে বাড়ির ভিতরে এক ঘরে খাটের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া একটি শ্লেট লইয়া লিখিলাম 'গহন কুমুসকুঞ্জ মাঝে'। লিখিয়া ভারি খুশি হইলাম।' ভারতীতে প্রকাশিত হয়েছিল ভানুসিংহের পদাবলী-- সমকালীন সময়ে সেই কবিতা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল সাহিত্য সমাজে।
ছোট্ট থেকে বড় হয়ে ওঠা। কবিতা-লেখা, বাল্মিকী প্রতিভা, হিমালয় ভ্রমণ, বিলেত যাত্রা- জীবনে বড় হয়ে ওঠার প্রতি ধাপের বিবরণ ছবির মতো করে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রয়েছে মৃত্যুশোকের প্রসঙ্গও। মায়ের মৃত্যু, তারপর কাদম্বরী দেবীর কাছে স্নেহ-প্রশ্রয় পেয়ে বড় হয়ে ওঠা। সেই ছায়াও একদিন চলে যায়। ১২৯১ সালের ৮ বৈশাখ মারা যান কাদম্বরী দেবী, তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বয়স ২৪। সেই বেদনা চিরস্থায়ী ছিল। তারপর থেকে অজস্র মৃত্যুশোক পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আর সেই দুঃখের মধ্যে থেকেই হয়তো নতুন করে বাঁচার জন্য় আলোর দিশা পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই দিশাই ছত্রে ছত্রে রয়েছে তাঁর কবিতায়-গানে-সুরে। তাঁর সৃষ্টিই দুঃখ-ব্যধি-শোক কাটিয়ে ওঠার মহাসঞ্জীবনী। আঘাতে আঘাতে জীর্ণ মনের উপশমের একমাত্র মলম।
তথ্যসূত্র: জীবনস্মৃতি
আরও পড়ুন: গরমের দিনে বেরোতেই হচ্ছে বাড়ির বাইরে, ব্যাগে গুছিয়ে নিন এই জিনিসগুলি
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)