S Jaishankar: রাশিয়া থেকে তেল কিনে মোটেও যুদ্ধের ফয়দা লুঠছে না ভারত, ইউরোপকে কড়া জবাব জয়শঙ্করের
War Profiteer Allegation Against:রাশিয়া থেকে তেল কেনায় ভারতের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় দেশগুলি যে ভাবে যুদ্ধের ফয়দা তোলার অভিযোগ আনছে,তার কড়া বিরোধিতা করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
নয়নিমা বসু, নয়াদিল্লি: রাশিয়া (Russia) থেকে তেল (oil) কেনায় ভারতের (India) বিরুদ্ধে ইউরোপীয় (Europe) দেশগুলি যে ভাবে যুদ্ধের ফয়দা (war profiteer) তোলার অভিযোগ আনছে,তার কড়া বিরোধিতা করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ( S Jaishaknar)। সঙ্গে জানালেন,জি-২০-র বর্তমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইউক্রেনের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি আর্থিক বৃদ্ধির দিকেও নজর দেবে ভারত।
ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমকে এই নিয়ে একঝাঁক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এস জয়শঙ্কর। তাতে জানান,ইউক্রেনের সংঘর্ষ থামাতে ভারত এর মধ্যেই যথেষ্ট চেষ্টা করেছে।
বিদেশমন্ত্রীর কথায়, 'ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফয়দা তোলার যে অভিযোগ উঠছে, তা রাজনৈতিক ও গাণিতিক, দুদিক থেকেই আমি জোরাল ভাবে অগ্রাহ্য করছি। ইউক্রেনের যুদ্ধে তেলের দাম দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ যদি অন্য দেশের থেকে কম দামেও তেল কেনে, তাতেও আগের থেকে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।'
বিদেশমন্ত্রীর আরও দাবি,'ইরানে তেলের উপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে বা ভেনেজুয়েলায় যা চলছে, তাতেও তেলের দাম চড়া। এই পরিস্থিতিতে বাজার ঘুরে সবথেকে ভালো দর খোঁজাটাই কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সাইপ্রাস থেকে অস্ট্রিয়া সফরে গিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। তখনই জানান,গত ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়া থেকে ১০ হাজার ২০০ কোটি ডলারের শক্তি কিনেছে ইউরোপ। তাঁর কথায়, 'এটি আমরা যা কিনেছে তার ছয়গুণ।'
'রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদে যে নীতির কথা বলা হয়েছে, সব দেশই বলবে যে তারা সেগুলি সমর্থন করে। কিন্তু গত ৭৫ বছরে গোটা বিশ্বে কী ঘটেছে দেখুন। রাষ্ট্রপুঞ্জের সমস্ত সদস্য় কি সেই সনদ মেনে চলে? অন্য দেশে সেনা পাঠায় না?'রাশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন ও ভারতের বিরুদ্ধে তাকে সমর্থনের যে অভিযোগ উঠেছে, তাই নিয়ে পাল্টা অবস্থান জয়শঙ্করের।
তাঁর আরও দাবি, যেহেতু ইউরোপ এখন ভারতের সাবেকি জায়গাগুলি থেকে তেল কিনছে, তাই নয়াদিল্লিকে বাধ্য হয়ে মস্কোর উপর বেশি ভরসা করতে হচ্ছে।
ভারতের বিদেশমন্ত্রীর মতে, এর মধ্যেই রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছে ভারত। খাদ্যশস্য চুক্তি তারই অংশ যার জেরে রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুতরফই কৃষ্ণসাগর দিয়ে গম ও সার পাঠাতে রাজি হয়। তাঁর কথায়, 'ঝাপোরিঝিয়া পরমাণু চুল্লিকেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও আমরা চেষ্টা করেছি।'প্রসঙ্গত, এই পরমাণু চুল্লিকেন্দ্রটির দখল নিয়েছিল রুশবাহিনী যার জেরে পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা তুঙ্গে ওঠে।
আমরা রাশিয়ার থেকে গত ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তেল কিনছি। এটি নতুন কিছু নয়...এই ৬০ বছরে, ইউরোপ-সহ পশ্চিমের বহু দেশ পাকিস্তানের সেনা শাসককে অস্ত্র বিক্রি করেছে। সেই সময় একমাত্র যে দেশ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল তা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। তাই আজ যদি আমাদের রাশিয়ার সঙ্গে কোনও বোঝাপড়া হয়ে থাকে তার কারণ আমাদের অঞ্চলে সেনা শাসনকেই গুরুত্ব দিয়েছে পশ্চিমি দুনিয়া।
'জি-২০-র শুধুমাত্র আর্থিক সমস্যার দিকে নজর দেওয়া দরকার'
জি-২০-তে বর্তমান সভাপতিত্ব নিয়ে বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য, স্রেফ যুদ্ধ থামানো নয়,আর্থিক বৃদ্ধির দিকটি নিশ্চিত করাও নয়াদিল্লির অন্যতম ফোকাস। 'ইউরোপ স্পষ্টতই এই মুহূর্তে ইউক্রেন সমস্যা নিয়ে বেশি ব্যস্ত। কিন্তু বিশ্বের বড় অংশ তেলের ক্রমবর্ধমান দাম, খাদ্যপণ্যের অভাব, সারের অভাব নিয়ে ভুগছে। ফলে ইউক্রেন ছাড়াও বহু সমস্য়া রয়েছে।'
তাঁর মতে, 'বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলির এমন বহু সমস্যা রয়েছে যা এখনও বিশ্বের বাকি অংশ শুনে উঠতে পারেনি। তাই জি-২০-র এই মুহূর্তে বিশ্বের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে কথা বলা উচিত।'
গত বছর ক্রিসমাসের পরদিনই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করে আর্জি জানান যে জি-২০-তে যেন যুদ্ধ বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সেই প্রসঙ্গে জয়শঙ্করের বক্তব্য, 'এই সংঘাতে কারও কোনও লাভ নেই। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই বলবে, যত দ্রুত এই যুদ্ধ শেষ হয় ততই মঙ্গল। বহু দেশই হয়তো সাহায্য় করতে পারবে। আমরা এর মধ্য়েই অনেকটা মধ্যস্থতা করেও ফেলেছি। ভারত সমস্যার সমাধান খুঁজছে।'
'সার্বিক শান্তিচুক্তিই' একমাত্র লক্ষ্য নয়...
তবে তাঁর মতে,যাঁরা এই যুদ্ধ শেষ করতে চায় তাঁদের যে সার্বিক শান্তিচুক্তির পথে হাঁটতে হবে এরকম নয়। খাদ্য ও শক্তি সমস্যার মতো যে সঙ্কটগুলি এই মুহূর্তে ভাবাচ্ছে,সেগুলি দেখা দরকার।
তাঁর কথায়, 'বহু আফ্রিকান দেশের জন্য, সারের সমস্যা একটি বড় ব্যাপার। রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে যদি যথেষ্ট সার না আসে, তা হলে গোটা বিশ্বে কয়েক মাসের মধ্যেই খাবারের অভাব ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। কোভিড অতিমারির পর এই সংঘর্ষের জেরে গোটা বিশ্বের শক্তি ও খাবারের বাজারে কতটা ধাক্কা লাগতে পারে, সেটাই ভাবাচ্ছে আমাকে।
'সর্বত্র শুধু খারাপ খবর। এই মুহূর্তে কেউ যুদ্ধ চায় না। আমরা ভয়ঙ্কর সময়ের মধ্য়ে দিয়ে যাচ্ছি। এই নতুন সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে আরও অনেকটা সময় লাগবে।'
আরও পড়ুন:রাজ্যের মিড-ডে মিলে এবার মুরগির মাংসও, বরাদ্দ অতিরিক্ত