কবর থেকে কপালজোরে প্রাণ ফিরে পাওয়া, পদ্মশ্রী গুলাবো সাপেরার সঙ্গে 'শিশুকন্যা মাস' পালন Her Circle-এর
তিনি এও জানান যে সাপেরা সম্প্রদায়ের মোহক জাতির মধ্যে এই প্রথা রয়েছে যে মেয়ে হয়ে জন্ম হলেই তাঁদের বোঝা বলে মনে করা হয়।
মুম্বই: জীবন্ত অবস্থায় এক মহিলা পুঁতে দিয়েছিলেন একটি ফুটফুটে শিশুকন্যাকে। সেই কবর থেকে কপালজোড়ে প্রাণ ফিরে পেয়েছিল শিশুটি। এরপর শুরু আরেক লড়াই। সেই শিশুটিই বড় হয়ে পেলেন 'পদ্মশ্রী'। শিশুকন্যাদের বাঁচানোর ছ'মাস ধরে কাজ করার উদযাপনস্বরূপ অক্টোবর মাসটিকে 'শিশুকন্যা মাস' পালন করছে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের 'Her Circle'। আর সেই মহিলা হলেন গুলাবো সাপেরা। ৫১ বছর বয়সি এই নৃত্যশিল্পীই এবার এক প্রতিভা ও অনুপ্রেরণার গল্প বলে চললেন।
Her Circle-এর সঙ্গে একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে তিনি একেবারে প্রথম দিনের লড়াইয়ের গল্প বর্ণনা করেন। জানান, তিনি মেয়ে হয়ে জন্মানোর জন্য তাঁকে এক সম্প্রদায়ের মহিলারা জীবিত কবর দিয়েছিলেন। যদিও পাঁচ ঘণ্টা পর তাঁর মা এবং মাসি তাঁকে কবর থেকে উদ্ধার করেন। আজ তিনি বিশ্বখ্যাত লোকশিল্পী, শিক্ষক, এবং নারী অধিকার কর্মী। ২০১৬-এ দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী সহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতেছেন।
তিনি এও জানান যে সাপেরা সম্প্রদায়ের মোহক জাতির মধ্যে এই প্রথা রয়েছে যে মেয়ে হয়ে জন্ম হলেই তাঁদের বোঝা বলে মনে করা হয়। তাই মেয়ে জন্ম হলেই তাঁকে হত্যা করা হত। যদিও সেই প্রতিকূল পরিবেশ থেকে মেয়ে হয়েই কীভাবে লড়াই চালিয়েছেন তিনি সেই সাহস ও দৃঢ়তার গল্পই বর্ণনা করেছেন তিনি ভিডিও সাক্ষাৎকারে। সেদিনের অবাঞ্চিত কন্যা থেকে আজ তিনি বিশ্ববন্দিত।
গুলাবো সাপেরা বলেন, "আমার লড়াই, আমার কাজ পদ্মশ্রী জিতেছে। আর এই পুরস্কার আমাকে শিশুহত্যার বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস জুগিয়েছে। আমার সম্প্রদায়ের মেয়েরা আজ শিক্ষা পাচ্ছে এবং নিজেদের সমাজের প্রথম সারিতে নিয়ে আসছে। সারা বিশ্বে প্রশিক্ষিত কালবেলিয়া নৃত্যশিল্পী রয়েছে।"
আন্তর্জাতিক কন্যা দিবসে গুলাবো সেই সব মেয়েদের উদ্দেশে বার্তা দেন যারা লিঙ্গবৈষম্যর শিকার হয়ে থাকেন। তিনি বলেন, "তোমরা নিজেদের দুর্বল ভাববে না। আমার দিকে দেখ। আমার লড়াই দেখো। আমার মা আমাকে বিশ্বাস করে আমার জীবন বাঁচিয়েছেন। সব মা আসলে মেয়েদের লড়াইয়ের সেই উৎসস্থল। তিনিই অনুপ্রাণিত করেন। তাই মেয়ে বোঝা নয়। তাঁকে বাঁচতে দিন। জীবনে এগিয়ে যেতে দিন। একদিন সেই আপনাকে গর্বিত করবে।"
লিঙ্গবৈষম্যর প্রেক্ষিতে তিনি এও বলেন, "নারীরা কোনোভাবেই পুরুষের চেয়ে নিকৃষ্ট নয়। একজন নারী যে পুরুষকে জন্ম দিয়েছেন কেন তাকে নিকৃষ্ট মনে করা উচিত? লোকেরা আমাকে পিছনে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু আমি এগিয়ে যেতে থাকি। সব মেয়েদের কাছে আমার বার্তা হল এগিয়ে যাওয়া। কোন কিছুই আমাদের আটকাতে পারবে না। আসুন একসঙ্গে এই বৈষম্যর বিরুদ্ধে লড়াই করি।"
সমান ভবিষ্যতের জন্য এবং মেয়ে সন্তানের জন্য প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী মেয়ে দিবস পালিত হয়। শিশুকন্যা হত্যা এবং বাল্যবিবাহের মতো প্রথা এখনও ভারতের অনেক অঞ্চলে প্রচলিত আছে। গুলাবোর সঙ্গে হার সার্কেল একসঙ্গে মেয়েশিশুদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ প্রদানের জন্য কাজ করছে। ওই অনুষ্ঠানে কথা বলার সময়, রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন এবং হার সার্কেলের প্রতিষ্ঠাতা, নীতা মুকেশ আম্বানি বলেছিলেন, “নারীদের উত্থান ও উজ্জ্বল হওয়ার চেয়ে বড় কিছু আনন্দ কিছু নেই! মেয়েদের আন্তর্জাতিক দিবসে, আমার ইচ্ছা হল সব যুবতী মেয়েরা তাদের সঠিক জায়গা যাতে খুঁজে পায়। আমাদের অবশ্যই তাদের শক্তিকে ক্ষমতায়ন করতে হবে। আমি আনন্দিত যে ছয় মাসের স্বল্প সময়ের মধ্যে, হার সার্কেল ভ্রাতৃত্ব এবং সংহতির ডিজিটাল আন্দোলন তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে মহিলাদের সঙ্গে সংযোগ, তাদের গল্প বলার এবং সত্যিকারের শোনার জায়গা। রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনে আমাদের সব কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে নারী এবং শিশুরা, বিশেষ করে ছোট মেয়েরা সবসময়ই থাকে। আমাদের কর্মসূচি ভারত জুড়ে বিস্তৃত। আমরা মহিলাদের স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাই এবং তাদের সাফল্য কামনা করি। ”
হার সার্কেলের চিফ কন্টেন্ট অফিসার, প্রধান সম্পাদক, ডিজিটাল অ্যান্ড ডাইভারসিটি ইনিশিয়েটিভস, রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন, তানিয়া চৈতন্য বলেছেন, “অক্টোবর মাস জুড়ে, হার সার্কেলের সম্পাদকীয় ক্যালেন্ডারে এমন অর্জনকারীদের গল্প উপস্থাপন করা হবে যারা অবাঞ্ছিত ছিল, এবং কিভাবে তারা ভেঙে পড়েছিল সমস্ত বাধা/বিধিনিষেধ বিশ্বকে দেখাতে যে তারা কম নয় তারা সমান। নৃত্যশিল্পী থেকে শুরু করে ক্রীড়াবিদ, কর্পোরেট থেকে শোবিজ ব্যক্তিত্ব, এই গল্পগুলি আমাদের উৎসাহিত করবে।"
Her Circle একটি ডেস্কটপ এবং মোবাইল-রেসপনসিভ ওয়েবসাইট এবং এটি গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে একটি ফ্রি অ্যাপ হিসেবে পাওয়া যায়।
(এটি একটি বিজ্ঞাপনমূলক প্রতিবেদন। এবিপি এবং/ কিংবা এবিপি লাইভ এর সঙ্গে উক্ত বিষয়ের মতামত ও ঘোষণার যোগসূত্র নেই। উল্লিখিত অনুচ্ছেদের সঙ্গে কোনরূপ সম্পর্কে অথবা যে কোন বিষয়ে আমরা কোনওভাবেই দায়ী এবং/অথবা কোনওভাবেই দায়বদ্ধ থাকব না। তাই দর্শকদের বিবেচনা ও ভাবনা একান্তভাবে তাঁদের নিজস্ব ও ব্যক্তিগত।)