জোড়া ধাক্কা দেশের অর্থনীতিতে, খুচরো মুদ্রাস্ফীতি তিন বছরের সর্বোচ্চ, তলানিতে শিল্পোৎপাদন
একদিকে যেমন বেড়ে চলেছে মুদ্রাস্ফীতি, অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে কমে চলেছে শিল্পোৎপাদনের হার।
নয়াদিল্লি: কথায় বলে, ‘একা রামে রক্ষে নেই, সুগ্রীব দোসর’। ভারতীয় অর্থনীতির হাল-হকিকৎ অনেকটা তেমনই। ফের এক জোড়া ধাক্কা খেল এমনিতেই ধুঁকতে থাকা দেশের অর্থনীতি। একদিকে তিন-বছরের সর্বোচ্চ হল খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার। অন্যদিকে, তলানিতে শিল্পোৎপাদনের সূচক। এই দুই পরিসংখ্যানের জেরে আবারও একবার প্রকট হল আর্থিক দুরবস্থার চিত্র। সম্প্রতি, ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্স অফিস (এনএসও) বা জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের থেকে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে দেশের রিটেল ইনফ্লেশন বা খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার গত তিন বছরের সর্বাধিক ৫.৫৪ শতাংশ ছুঁয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্যই মূলত এই মুদ্রাস্ফীতির প্রধান কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। কনজিউমার প্রাইস ইন্ডেক্স (সিপিআই) বা গ্রাহক মূল্য সূচকের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়াএই মুদ্রাস্ফীতির হার গত অক্টোবর মাসে ২.৩৩ শতাংশ ছিল। এক বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে তা ছিল ২.৩৩ শতাংশ। প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ১০.০১ শতাংশ। গত অক্টোবরে এই হার ছিল ৭.৮৯ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে ছিল মাইনাস(-) ২.৬১ শতাংশ। এর আগে, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে সিপিআই ছিল ৬.০৭ শতাংশ। এটিই এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক। প্রসঙ্গত, রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে কেন্দ্র নির্দেশ দিয়েছে, মুদ্রাস্ফীতিকে ৪ শতাংশ রাখতে। অর্থাৎ, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৪ শতাংশের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার। তবে, পরিস্থিতি অনুযায়ী তা আরও ২ শতাংশ এদিক-ওদিক হতে পারে বলেও শীর্ষ ব্যাঙ্ককে জানিয়েছিল কেন্দ্র। এনএসও-র এই পরিসংখ্যান গুরুত্বপূর্ণ কারণ, ঊর্ধ্বমুখী খুচরো মুদ্রাস্ফীতিকে মাথায় রেখে সাম্প্রতিকতম আর্থিক নীতি পর্যালোচনায় ঋণ-সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় শীর্ষ ব্যাঙ্ক। একদিকে যেমন বেড়ে চলেছে মুদ্রাস্ফীতি, অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে কমে চলেছে শিল্পোৎপাদনের হার। এনএসও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অক্টোবরে শিল্পোৎপাদনের সূচক ৩.৮ শতাংশ পড়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে এই সূচক ৮.৪ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উৎপাদন ক্ষেত্রে মন্দার রেশ রীতিমতো টের পাওয়া গিয়েছে। অক্টোবরে তা ২.১ শতাংশ পড়েছে। এক বছর আগে, তা ৮.২ শতাংশ বৃদ্ধি নথিভুক্ত করেছিল। এছাড়া, বিদ্যুৎপাদন অক্টোবরে ১২.২ শতাংশ পড়েছে। এক বছর আগে এই ক্ষেত্রে ১০.৮ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল। খনিক্ষেত্রের উৎপাদন অক্টোবর মাসে ৮ শতাংশ পড়েছে। গত বছরের একই সময় এক্ষেত্রে বৃদ্ধি হয়েছিল ৭.৩ শতাংশ। নির্মলা সীতারমণের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক ধুঁকতে থাকা একাধিক সেক্টর যেমন-- গাড়ি, নির্মাণ, রফতানি, অ-ব্যাঙ্ক ঋণপ্রদানকারী সংস্থা ও আবাসনশিল্পে বিনিয়োগকারী-- সহায়তা দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপের ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি, দেশীয় ব্যাবসায়িক কোম্পানি এবং নতুন উৎপাদন সংস্থার ক্ষেত্রে কর্পোরেট করের হারেও বিশাল কাটছাঁট করেছেন নির্মলা। গতমাসে অর্থমন্ত্রী স্বীকার করে নেন, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার পড়ে গিয়েছে। তবে, এটা মানতে চাননি, যে দেশে মন্দা-পরিস্থিতি চলছে।