Delhi Stampede : ট্রেনের একইরকম নামের ফলেই পদদলিত হওয়ার ঘটনা? দিল্লি-বিপর্যয়ের ভয়াবহ ৫ কারণ
New Delhi Railway Station Stampede : ট্রেনের নাম নিয়ে বিভ্রান্তির বিষয়টিও উঠে আসছে ।

মহাকুম্ভে যাওয়ার পথে, নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে ১৮ জনের মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পরেও একই ছবি। পদপিষ্ট হওয়ার পরদিনও নয়াদিল্লি স্টেশনে চলছে একইরকম হুড়োহুড়ি। প্রাণ বাজি রেখে, হুড়োহুড়ি করেই প্রয়াগরাজগামী ট্রেনে উঠছেন যাত্রীরা। পাটনা স্টেশনে হাওড়া-নিউ দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসেও ঠাসাঠাসি ভিড়। তার মধ্যেই ধাক্কাধাক্কি করে উঠে পড়তে দেখা যায় যাত্রীদের। মর্মান্তিক দুর্ঘটনার বিভীষিকা এখনও কাটেনি, তবু যেন চেতনার অভাব। কিন্তু দিল্লির মতো স্টেশনে এতবড় একটা বিপর্যয় কীভাবে ঘটে গেল, অনেকেরই মনে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন। কেউ দোষ ঠেলছে রেলের ঘাড়ে, কেউ যাত্রীদের ঘাড়ে, কেউ আবার প্রশাসনের দিকে তুলছে আঙুল।
সাধারণ মানুষ , প্রশাসন, রেলওয়ের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে এই ঘটনার পেছনে পাঁচটি কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
অতিরিক্ত ভিড়
শনিবার রাতে, মহাকুম্ভ স্নানের জন্য প্রয়াগরাজে যাওয়ার জন্য প্রচুর সংখ্যক ভক্ত স্টেশনে উপস্থিত হন। রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনের আজমেরী গেটের সংলগ্ন জায়গা প্রচন্ড ভিড় ছিল। কারণ উত্তরপ্রদেশ ও বিহারগামী ট্রেনগুলি ওই একই প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়ার কথা ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই চারটি ট্রেনের উপচে পড়া ভিড় ছিল একটি প্ল্যাটফর্মে। প্রশ্ন হচ্ছে, ক্রাউড ম্যানেজমেন্টে একেবারে ডাহা ফেল করল রেল? মহাকুম্ভের দরুণ ভিড় হবে জেনেও তা নিয়ন্ত্রণ করার কোনও ব্যবস্থাই কেন করা হয়নি? দিল্লির আনন্দবিহার, পুরনো দিল্লি বা গাজিয়াবাদ স্টেশন থেকে প্রয়াগরাজগামী ট্রেনগুলোকে ভাগ করে দেওয়া হল না কেন? প্রশ্ন তুলছেন যাত্রীরাই। বছরের পর বছর ধরে স্টেশনে কাজ করা কুলি এবং বিক্রেতারা দাবি করেন যে তারা আগে কখনও এত ভিড় দেখেননি। প্রশ্ন হলো, যখন এত বিশাল ভিড় স্টেশনে পৌঁছেছিল, তখন রেল প্রশাসন কেন সময়মতো ব্যবস্থা নেয়নি? পদদলিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি কেন তৈরি হল? রেল প্রশাসন সমালোচনার মুখে।
ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তনের ঘোষণা
অনেকেরই মতে,ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম বদলের বিভ্রান্তিকর ঘোষণাই এত বড় বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে পদদলিত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তনের ঘোষণা। প্রয়াগরাজ স্পেশাল ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে যাচ্ছিল। স্বাধীন সেনানী এক্সপ্রেস ১৩ নম্বর থেকে আর প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস ১৪ নম্বর থেকে । প্রায়ওই সময়ই নয়াদিল্লি-বেনারস এক্সপ্রেস ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। চারটি ট্রেনই প্রয়াগরাজের দিকে যাচ্ছিল। জেনারেল টিকিট নিয়ে কুম্ভগামী যাত্রীদের অনেকেই যে কোনও একটি ট্রেন ধরার লক্ষ্যে ছিলেন।। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রয়াগরাজগামী বিশেষ ট্রেনটি ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে যাচ্ছিল। সেই প্ল্যাটফর্মে বিশেষ ট্রেন ধরার যাত্রীদের ভিড় ছিল। কিন্তু পদদলিত হওয়ার ঘটনার ঠিক আগে ঘোষণা করা হয়েছিল ওই ট্রেনটি ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে। তার ফলে ১২ নম্বরে দাঁড়িয়ে থাকা জনতা দৌড়তে শুরু করে। এমনকি দিল্লি পুলিশের কারও কারও দাবি, প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তনের ঘোষণার পরই এই দুর্ঘটনা ঘটে । রেলওয়ের সিপিআরও হিমাংশু শেখর অবশ্য দাবি করছেন, প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তনের কোনও ঘোষণা হয়নি। রেলওয়ের দাবি, ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে বিশেষ ট্রেনের ঘোষণার পরই ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের যাত্রীরা সেই ট্রেন ধরতে দৌড়তে শুরু করে। তাতেই দুর্ঘটনা।
ট্রেনের নাম নিয়ে বিভ্রান্তি
এছাড়াও, ট্রেনের নাম নিয়ে বিভ্রান্তির বিষয়টিও উঠে আসছে । প্রয়াগরাজ স্পেশাল আর প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস নামের মধ্যে বিভ্রান্তির কারণেও মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে বলে মত কারও কারও। অভিযোগ, প্রায়শই এমনটা ঘটে যে রেলের ঘোষণার সময় মানুষ পুরো কথা না শুনেই ছুটতে শুরু করে। একদলকে ছুটতে দেখে আরেক দলও পিছু নেয়। প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। আর প্রয়াগরাজ স্পেশাল ১২ নম্বর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। হতে পারে, নাম নিয়ে বিভ্রান্তির কারণেই ভিড় এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করে এবং পদদলিত হয়।
পকেটমারির ঘটনার কারণে আতঙ্ক
কারও কারও দাবি, যখন ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তনের ঘোষণা হয়, তখন ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দৌড়াতে শুরু করে মানুষ। সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে তৎপর হয়ে ওঠে কিছু চোর - পকেটমার। যাত্রীদের পকেট কেটে তারা নিজেদের পকেট ভরানো শুরু করে । প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সিঁড়িতে ছুরি-মারা এবং ব্লেড দিয়ে হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
একজন যাত্রীর পড়ে যাওয়ার কারণেই পদদলিত হওয়ার ঘটনার সূত্রপাত। এছাড়াও, আরেকটি সম্ভাব্য কারণের কথা নিজেই জানিয়েছেন, রেলের সিপিআরও। তিনি জানান, লোকজন ভিড় করে সিঁড়ি দিয়ে উঠছিল। তখন কারও পা পিছলে যায় । একজনের ধাক্কায় অনেকে পড়তে শুরু করে। এর ফলে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
