Malda: মায়ের চিকিৎসায় মালদা ছেড়ে মেডিক্যাল কলেজে আস্তানা, গাছতলায় থেকে অন্য জীবনসংগ্রাম
কয়েকদিনের মধ্যেই এই কাজ শেষ হয়ে যাবে। আশা, মিঠুনের মা-ও সুস্থ হয়ে যাবেন। আবার শুরু হবে, নতুন লড়াই। অন্য কোথাও, অন্য কোনও খানে। এই শহর শুধু সাক্ষী থেকে যাবে অন্য এক জীবনযুদ্ধের।
ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা : মা অসুস্থ। ভর্তি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। তাই সংসার গুছিয়ে নিয়ে মালদা থেকে এসে মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে আস্তানা গেঁড়েছেন মালদার বাসিন্দা এক পরিবার। খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় থেকে চলছে জীবনযুদ্ধের নতুন লড়াই।
ইঁট গাঁথছেন, তার ওপর দিচ্ছেন সিমেন্টের প্রলেপ। কাজ মিটলেই, ফিরে যাচ্ছেন সংসারে। বউ বাচ্চার কাছে। এটুকু শুনে মনে হতকেই পারে আর পাঁচজনের মতোই দিনলিপি। কিন্ত না। এ শহরে তাঁর কোনও আস্তানা নেই। সংসার বলতে মেডিক্যাল কলেজের গাছতলা। মেডিক্যাল কলেজের খোলা আকাশের নিচে এই জায়গাই এখন মিঠুন বসাকের অস্থায়ী ঠিকানা।মিঠুনের বাড়ি মালদার ভুতনির চর এলাকায়। এতদিন ওড়িশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। কিন্তু করোনা আবহের মাঝে দীর্ঘ লকডাউনের জেরে কাজ চলে যায়। কর্মহীন হয়ে ফিরে আসেন মালদায়। এরইমধ্যে মিঠুনের মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পেটে টিউমার ধরা পড়ে। দেখা দেয়, করোনার উপসর্গ। ১৪দিন আগে, মাকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করেন মিঠুন। সঙ্গে নিয়ে আসেন স্ত্রী ও দেড় বছরের ছেলেকে।
এদিকে চিকিত্সকরা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর মায়ের চিকিত্সা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু, জমানো টাকাও তো ক্রমে শেষ হয়ে আসছে। কীভাবে বাকি দিন চলবে? এই আতঙ্ক যখন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে, তখনই রোজগারের একটা দরজা তাঁর সামনে খুলে যায়। মেডিক্যাল কলেজ চত্বরেই অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটরের যন্ত্র বসানোর কাজ চলছে। সেখানেই কাজ জুটিয়ে নেন তিনি। মিঠুনের কাজে খুশি ঠিকাদার সংস্থাও। সংস্থার মালিক অভিজিত্ ঘরামি বলেছেন, 'টার্গেট ছিল ১৪ অগাস্টের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। ও কাজ জানত। আমাদের লোক লাগতই। তাই ওকে নিয়েছি।' এদিকে, রাজমিস্ত্রি মিঠুনের স্ত্রী টুম্পা বসাক বলেছেন, 'আমরা তো গরিব। কিছুটা রোজগার হবে। তাই কাজ শুরু করে দেয়।'
কয়েকদিনের মধ্যেই এই কাজ শেষ হয়ে যাবে। আশা, মিঠুনের মা-ও সুস্থ হয়ে যাবেন। আবার শুরু হবে, নতুন লড়াই। অন্য কোথাও, অন্য কোনও খানে। এই শহর শুধু সাক্ষী থেকে যাবে অন্য এক জীবনযুদ্ধের।