Wriddhiman Saha Retirement: ধোনিকে না দেখে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচের সেরা! ঋদ্ধিমানের অজানা গল্প শোনালেন স্ত্রী রোমি
Eden Gardens: ঋদ্ধিমানের পরিবার ও বন্ধুদের বসার জন্য ক্লাব হাউসে আলাদা এক ঘরের বন্দোবস্ত করেছে সিএবি। সেই ঘরে সামনের আসনে বসেই খেলা দেখছিলেন দেবারতি।

সন্দীপ সরকার, কলকাতা: সে প্রায় ১৭ বছর আগের ঘটনা। সাল ২০০৮। সেবারই প্রথম ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে আসা দেবারতির। দেখতে আসা, শিলিগুড়ির সাদামাটা চেহারার এক ক্রিকেটার কেমন খেলেন।
তারপর পেরিয়ে গিয়েছে ১৭ বসন্ত। শিলিগুড়ির সাদামাটা সেই তরুণই এতদিনে গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিত নাম। ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha)। শুক্রবারও ইডেন গার্ডেন্সে বসেছিলেন দেবারতি। যদিও গত ১৭ বছরের রুটিনের সঙ্গে এদিনের মিল নিজেই খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি।
ইডেন গার্ডেন্সে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ খেলেই অবসর নিচ্ছেন ঋদ্ধিমান। এই ম্যাচে ঋদ্ধিমানের পরিবার ও বন্ধুদের বসার জন্য ক্লাব হাউসে আলাদা এক ঘরের বন্দোবস্ত করেছে সিএবি। সেই ঘরে সামনের আসনে বসেই খেলা দেখছিলেন দেবারতি। এবিপি আনন্দের সঙ্গে আড্ডা জমালেন। বললেন, '২০০৮ সালে রঞ্জি ট্রফিতে বাংলার ম্যাচ দেখতেই প্রথম ইডেনে আসা। তখন আমরা প্রেম করছি। মনোজ তিওয়ারি তখন বাংলার অধিনায়ক। মনোজ স্লিপে ফিল্ডিং করছিল। আমি আপার টিয়ারে বসেছিলাম। মনোজই ওকে ডেকে দেখাল যে, আমি মাঠে এসেছি। ২০১২ সালে ঋদ্ধির সঙ্গে আমার বিয়ে। অবিশ্বাস্য লাগছে, কী করে এতগুলো বছর পেরিয়ে গেল। ইডেনে ওর অবসরের ম্যাচ দেখছি বিশ্বাসই হচ্ছে না।'
বিদায়ী ম্যাচে প্রথম ইনিংসে রান পাননি ঋদ্ধিমান। ০ করে ফিরেছেন। দেবারতি বলছেন, 'খারাপ লাগছে। শেষ ম্যাচে রান পেলে অবশ্যই খুশি হতাম।'
গত ১৭ বছর ধরে বাংলা হোক বা ভারতীয় দল, আইপিএল, ঋদ্ধিমান মাঠে থাকা মানে মাঠের বাইরে স্নায়ুর চাপে ভুগতেন রোমি (ঋদ্ধিমানের স্ত্রীর ডাকনাম)। ঋদ্ধিমান রান পাবেন তো? উইকেটের পিছনে নিজের দায়িত্বপালন নিখুঁতভাবে করতে পারবেন তো? চোট লেগে যাবে না তো? সেই রুটিন তো এবার পাল্টাতে চলেছে... রোমি প্রশ্ন শুনেই বললেন, 'টেনশন একটু কমবে বৈকি! তবে ও নির্লিপ্ত রয়েছে। ও তো বাড়ি থেকেই অবসর ঘোষণা করে দিতে চেয়েছিল। আমিই ওকে বুঝিয়েছিলাম যে, তুমি মাঠ থেকে অবসর নাও। সে ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচ হোক বা আইপিএলে গুজরাত টাইটান্সের জার্সিতে, মোদ্দা কথা ম্যাচ খেলে অবসর নাও। তাতেই ও সিদ্ধান্ত বদলায়।'
মাঝে সিএবি কর্তাদের সঙ্গে মনোমালিন্য, একরাশ অভিমান নিয়ে ত্রিপুরায় চলে গিয়েছিলেন ঋদ্ধি। রোমির কথায়, 'খুব খারাপ লাগত। ঘরের মাঠে খেলতে পারছে না ও, ভাবতেই পারতাম না। আমার আবাসনের ছাদ থেকে ইডেন দেখা যায়। ইডেনের আলো জ্বললে মন খারাপ হয়ে যেত। মনে হতো, নিজের ঘরের মাঠে ও নেই!'
আপনার চোখে ঋদ্ধিমানের সেরা ইনিংস? রোমি বলছেন, 'অনেক ইনিংস রয়েছে। আইপিএল ফাইনালে সেঞ্চুরি, ইনদওরে দলীপ ট্রফিতে সেঞ্চুরি, ভারতের হয়ে দারুণ কিছু ইনিংস। তবে ২০১১ সালের আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে কোচি টাস্কার্সের একটি ম্যাচের কথা মনে পড়ছে। সিএসকে-র কৌশল ছিল, প্রথম ১০ ওভারের মধ্যে ৩ উইকেট পড়ে গেলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নামবে। ঋদ্ধি তখন নিজেকে প্রমাণ করার জন্য ছটফট করছে। চেন্নাইয়ে ঘরের মাঠে সিএসকে প্রথমে ব্যাট করছিল। ধোনি ব্যাট করতে নামার জন্য তৈরি হয়েছিল। কিন্তু নবম ওভারে তৃতীয় উইকেট পড়তেই ব্যাট করতে নেমে পড়ে ঋদ্ধি। আসলে ও দেখেইনি ধোনিকে। ঝোড়ো ৪৬ রান করে ও ম্যাচ জিতিয়েছিল সিএসকে-কে। ম্যাচের সেরাও হয়েছিল। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ধোনি ওকে মজা করে বলেছিল, কীরে তুই তাই বলে দেখবি না আমি ক্রিজে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছি!'
মাঠের বাইরে ঋদ্ধিমানকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? রোমি বলছেন, 'নির্বিকার থাকতে পারে। গায়ে মাখে না কোনও কথা। অসম্ভব মনের জোর। যেভাবে কাঁধের চোট সারিয়ে ফিরেছিল, অভাবনীয়।'
ব্যাটার না উইকেটকিপার, ঋদ্ধিমানের কোন সত্তাকে এগিয়ে রাখবেন? রোমি না ভেবেই বললেন, 'অবশ্যই উইকেটকিপার ঋদ্ধিমানকে। ঈশ্বরপ্রদত্ত দক্ষতা তো ছিলই, সঙ্গে পরিশ্রম, ইচ্ছেশক্তি, সব মিলিয়ে এত দূর পৌঁছেছে।'
ক্রিকেট ছাড়ার পর কি রাজনীতি? নাকি ক্রিকেট প্রশাসনে? ঋদ্ধিমান ইতিমধ্যেই কোচিং করান। আরও বড় ভূমিকায় দেখা যাবে? রোমি বলছেন, 'রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব আগেই ফিরিয়েছে। ধারাভাষ্যকার হিসাবেও ওকে দেখা যাবে না। কোচিং করাচ্ছে। আপাতত তৃণমূল স্তরে কাজ করছে। দেখা যাক পরে কোচিংয়ে আরও বড় ভূমিকায় আসতে চায় কি না।'
অবসরের পর জীবন কতটা বদলাবে? রোমি হেসে বলছেন, 'এবার ছেলে-মেয়ের রুটিন দেখে ওর ছুটি ঠিক করতে হবে। স্কুলের ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে। আমি বলেছি, বাচ্চাদের জন্য আমার এক জোড়া বাড়তি চোখ প্রয়োজন। সেই দায়িত্ব এবার ওকেও নিতে হবে।'
আরও পড়ুন: কোচ লক্ষ্মীর দেওয়া ব্যাটে ইডেনে ধুন্ধুমার ছাত্রের, কুয়াশা কাটিয়ে সূর্যোদয় বাংলার ক্রিকেটে?
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
