Milkha Singh Death:‘এ তো দৌড় নয়, উড়ছিলে!’, যখন মিলখা সিংহকে ‘উড়ন্ত শিখ’ বলেছিলেন মুগ্ধ পাক প্রেসিডেন্ট
চারবারের চেষ্টার পর ১৯৫১-তে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। যোগদানের সময় তিনি ক্রস-কান্ট্রি রেসে ষষ্ঠস্থানে ছিলেন। সেজন্য সেনা তাঁকে খেলাধুলোর ক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নিয়েছিল। এরপর সিকান্দরাবাদে ইএমই সেন্টার দৌড়বীর হিসেবে তাঁর প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। সেখান থেকেই প্রকৃতপক্ষে তাঁর কেরিয়ার শুরু হয়।
নয়াদিল্লি: ক্রীড়াজগতে গভীর শূন্যতা। চলে গেলেন 'উড়ন্ত শিখ' মিলখা সিংহ। কাল রাত সাড়ে এগারোটায় থেকে গেল তাঁর জীবনের দৌড়। করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তাঁর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল। কিন্তু কাল রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। গতকাল রাত সাড়ে এগারোটায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ভারতের ক্রীড়া ইতিহাসে সবচেয়ে সফল অ্যাথলিট মিলখা সিংহ। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু থেকে শুরু করে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আয়ুব খান তাঁর গুণমুগ্ধ ছিলেন।
মিলখা সিংহর জন্ম ১৯২৯-এর ২০ নভেম্বর গোবিন্দপুরে( যা এখন পাকিস্তানে) এক শিখ পরিবারে হয়েছিল। শৈশব অতিবাহিত হয়েছিল কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে। দেশভাগের পর মিলখা সিংহ হারিয়েছিলেন তাঁর বাবা-মা ও ভাই-বোনদের। ছোট থেকেই দৌড়ের একটা উৎসাহ তাঁর মধ্যে ছিল। বাড়ি থেকে স্কুলের দুরত্ব ছিল ১০ কিলোমিটার। এই পথটা তিনি দৌড়েই যাতায়াত করতেন।
কালক্রমে এই দৌড়ই তাঁকে খ্যাতি এনে দেয়। পরিচিত হয়ে ওঠেন 'উড়ন্ত শিখ' নামে। আর তাঁর এই অভিধার ক্ষেত্রে জড়িয়ে রয়েছে পাকিস্তানের সম্পর্ক। ১৯৬০-এ রোম অলিম্পিকে পদক হাতছাড়া হওয়ায় বেশ হতাশ হয়েছিলেন তিনি। ওই বছরই তিনি পাকিস্তানে আয়োজিত আন্তর্জাতিক অ্যাথলিট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। দেশভাগেই অসহনীয় দুঃখ মিলখার মন জুড়ে ছিল। পাকিস্তানে যাওয়ার ইচ্ছে তাঁর ছিল না। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু তাঁকে বোঝানোর পর তিনি পাকিস্তানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
পাকিস্তানে ওই সময় অ্যাথলেটিক্সে আব্দুল খালিক বেশ খ্যাতি পেয়েছিলেন। সেখানে তাঁকে সবচেয়ে দ্রুতগতির দৌড়বীর মনে করা হত। সেই খালিকের সঙ্গে দৌড়ের প্রতিযোগিতায় পরিস্থিতি মিলখার প্রতিকূলই ছিল। পুরো স্টেডিয়াম তখন তাদের প্রিয় প্রতিযোগীকে উৎসাহ যোগাচ্ছিল। কিন্তু মিলখার গতির সামনে খালিক দাঁড়াতেই পারেননি। এই প্রতিযোগিতার পর তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল মিলখার দক্ষতায় মুগ্ধ হন। তিনি মিলখাকে বলেছিলেন, 'আরে, তুমি তো দৌড়োচ্ছিলে না, উড়ছিলে। তাই তোমাকে উড়ন্ত শিখ খেতাব দিচ্ছি'।
আর এরপর এই নামেই সারা বিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠেন মিলখা সিংহ। ক্রীড়াক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ভারত সরকার তাঁকে চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী-তে ভূষিত করে।
চারবারের চেষ্টার পর ১৯৫১-তে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। যোগদানের সময় তিনি ক্রস-কান্ট্রি রেসে ষষ্ঠস্থানে ছিলেন। সেজন্য সেনা তাঁকে খেলাধুলোর ক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নিয়েছিল। এরপর সিকান্দরাবাদে ইএমই সেন্টার দৌড়বীর হিসেবে তাঁর প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। সেখান থেকেই প্রকৃতপক্ষে তাঁর কেরিয়ার শুরু হয়। অ্যাথলিট হিসেবে নিজেকে মেলে ধরার উৎসাহ প্রবল ছিল মিলখার। তিনি চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে দৌড়ের অনুশীলন করতেন। এমনটা করতে গিয়ে অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু অনুশীলনে কখনও ক্ষান্তি দিতেন না তিনি।
১৯৫৬-তে মেলবোর্নে অলিম্পিকে তিনি প্রথমবার ২০০ মিটার ও ৪০০ মিটারে অংশগ্রহণ করেন। অ্যাথটিল হিসেবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রথমবারের অভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো হয়নি। কিন্তু পরবর্তীকালে ওই অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও ক্ষুরধার করে তুলেছিল। ওই সময় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অ্যাথলিট চার্লস জেনকিন্সের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়, যা ভবিষ্যতে তাঁর কাছে বড় অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।
১৯৫৮-তে কটকে আয়োজিত জাতীয় ন্যাশনাল গেমসে ২০০ ও ৪০০ মিটারে রেকর্ড গড়েন তিনি। ওই বছরই টোকিওতে আয়োজিত এশিয়ান গেমসে ২০০ ও ৪০০ মিটারে সোনার পদক জেতেন মিলখা সিংহ। ১৯৫৮-তে ইংল্যান্ডের কার্ডিফে আয়োজিত কমনওয়েলথ গেমসে ৪০০ মিটারে সোনা জেতেন। কমনওয়েলথ গেমসে দেশকে প্রথম সোনার পদক এনে দেওয়ার কৃতিত্ব মিলখা সিংহর।
১৯৬০-এ রোম অলিম্পিকে ৪০০ মিটার দৌড়ে অসাধারণ পারফর্ম করেন তিনি। কিন্তু শেষপর্যন্ত সেকেন্ডের ভগ্নাংশে পিছিয়ে গিয়ে ব্রোঞ্জ পদক হাতছাড়া হয় তাঁর।