Kamduni Case Timeline: হাড়হিম করা ঘটনার ১০ বছর পার, ফিরে দেখা কামদুনির অভিশপ্ত সেই সময়
Calcutta High Court : হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর ফের একবার চর্চায় কামদুনিকাণ্ড।
কলকাতা : এক-দু'বছর নয়। নয় নয় করে দশটা বছর অতিবাহিত। ২০১৩ সালে কামদুনিতে এক কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুনের অভিযোগ উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা রাজ্য। আজ কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) রায় ঘোষণার পর ফের একবার চর্চায় কামদুনিকাণ্ড (Kamduni Case)।
টাইমলাইনে কামদুনিকাণ্ড-
২০১৩ সালের ৭ জুন- গণধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুন করা হয় ওই কলেজছাত্রীকে। হাড়হিম করা সেই ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল গোটা রাজ্য়। বিক্ষোভ, মোমবাতি মিছিল... প্রতিবাদের কোনও মাধ্যমই বাদ পড়েনি। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব হয়ে ওঠে গোটা রাজ্য। ঘটনার আঁচ গিয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
কী হয়েছিল সেদিন ? চোখে ছিল একরাশ স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন সফল করার জন্য ছিল অদম্য ইচ্ছাও। কিন্তু, সেই স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। অভিশপ্ত সেই দিনে কলেজ থেকে ফিরছিলেন। কিন্তু, বাড়ির চৌহদ্দিতে আর ঢোকা হয়নি তাঁর। বাড়ি থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে আট বিঘে ভেরি অঞ্চলে রক্তাক্ত অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয় ওই কলেজছাত্রীর। পাঁচিলঘেরা ফাঁকা জমি থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁর মৃতদেহ !
২০১৩ সালের ১৭ জুন- ঘটনার পর দোষীদের চরম শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে গ্রামবাসী। সেই আন্দোলনের সামনের সারিতে চলে আসেন- টুম্পা কয়াল এবং মৌসুমি কয়াল। ১৭ জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কামদুনিতে গেলে, তাঁর সামনেও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সরব হন টুম্পা, মৌসুমীরা। কিন্তু, প্রতিবাদীদের কথা না শুনে, তাঁদের সিপিএম তকমা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
২০১৩-র ১২ অগাস্ট- কয়েকদিনের মধ্যেই, ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তভার যায় সিআইডি-র হাতে। মুখ্যমন্ত্রী সেই সময় আশ্বাস দিয়েছিলেন ১৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ হবে। কিন্তু, ২২ দিন পর চার্জশিট পেশ হলে, তাতে একাধিক ত্রুটির কথা বলে ভৎর্সনা করে আদালত। এই পরিস্থিতিতে পুনরায় এই ঘটনা নিয়ে বিক্ষোভ দানা বাঁধে। তাই, ১২ অগাস্ট এই মামলা নগর ও দায়রা আদালতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি- ২ বছরের বেশি মামলা চলার পর, ২০১৬-র জানুয়ারিতে অভিযুক্ত ৬ জনকে দোষী সাব্য়স্ত করা হয়। তথ্য প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস করা হয় ২ জনকে। মামলা চলাকালীন ১ অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। নগর দায়রা আদালত ৬ জনকে দোষী সাব্য়স্ত করে। তাদের মধ্য়ে আনসার আলি মোল্লা, সইফুল আলি মোল্লা ও আমিন আলি এই তিনজনের মৃত্য়ুদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। আর ইমানুল হক, ভোলানাথ নস্কর, ও আমিলুর ইসলাম নামে বাকি ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
২০১৬-র ফেব্রুয়ারি- এর প্রায় ২ সপ্তাহ পরে ২০১৬-র ফেব্রুয়ারিতে সাজাপ্রাপ্তরা সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়।
২০২২-এর ডিসেম্বর- সেই আবেদনের শুনানি শুরু হয় গত ডিসেম্বরে। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে।
২০২৩-এর ৬ অক্টোবর- অপরাধী ৬ জনের সাজা মকুবের সেই আবেদনের আজ রায় ঘোষণা হয়। রায় অনুযায়ী, ৩ আসামীর ফাঁসির সাজা মকুব করা হয়। ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ফাঁসির বদলে দোষী সাব্যস্ত আনসার আলি মোল্লা ও সইফুল আলি মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আমিন আলিকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আরও ৩ জনকেও মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সর্বোচ্চ সাজার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় ৩ জনের মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ডিভিশন বেঞ্চে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ইমানুল হক, ভোলানাথ নস্কর, আমিনুর ইসলামের মুক্তি। সর্বোচ্চ সাজার মেয়াদ ৭ বছর, ১০ বছর পেরিয়ে যাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন কামদুনির ২ প্রতিবাদী টুম্পা এবং মৌসুমী কয়াল।