Delhi Stamped Mahakumbh: প্রথমে গুজব বলে বিবৃতি, বয়ান বদল! নয়াদিল্লিতে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল?
Delhi Stamped Mahakumbh 2025: মহাকুম্ভে যাওয়ার পথে মহাবিপর্যয়। নয়া দিল্লি স্টেশনে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল কমপক্ষে ১৮ জনের।

বিজেন্দ্র সিংহ, সুদীপ্ত আচার্য, ঝিলম করঞ্জাই, নয়াদিল্লি: নয়া দিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে ১৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা কি প্রথমে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল প্রশাসন? কারণ প্রথমে একে গুজব বলে বিবৃতি দেয় রেল। এমনকী রেলমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়াতেও পদপিষ্ট হওয়ার উল্লেখ ছিল না। মৃত্যুর কথা জানিয়েও সমাজমাধ্যমে করা পোস্ট এডিট করে ফেলেন দিল্লির উপরাজ্যপাল। এ নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। সাফাই দিয়েছে কেন্দ্রের শাসকদল।
মহাকুম্ভে যাওয়ার পথে মহাবিপর্যয়। নয়া দিল্লি স্টেশনে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল কমপক্ষে ১৮ জনের। খাস রাজধানীতেই চূড়ান্ত অব্যবস্থা! ট্রেন লেট থেকে শুরু করে রেলের বিভ্রান্তিকর ঘোষণা তো ছিলই, তারপরেও পদপিষ্ট হওয়ার গোটা ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার মারাত্মক অভিযোগ উঠল রেল ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ঠিক যেমন অভিযোগ উঠেছিল, ২৯ জানুয়ারি প্রয়াগরাজে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনার সময়েও।
ভুক্তভোগী যাত্রীদের দাবি, শনিবার রাত ৯টা ২০ থেকে রাত ১০টার মধ্যে, চূড়ান্ত হুড়োহুড়িতে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে নিউ দিল্লি স্টেশনে। বেশ কয়েকজনের প্রাণ চলে যাওয়ার পাশাপাশি, বহু মানুষ গুরুতর আহত হন। একজন মহিলা যাত্রী বলছেন, '১৩ নম্বরে ট্রেনের আসার কথা ছিল। ১২ নম্বরে, ওটা অ্যানাউন্স করে দিল ১৬ নম্বরে আসবে। এরপরই হুড়োহুড়ির মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে।' কিন্তু প্রথমে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা অস্বীকার করে বিবৃতি দেয় রেল! দাবি করা হয়, হঠাৎ করে যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় কিছু মানুষ অজ্ঞান হয়ে যান। যা থেকে পদপিষ্ট হওয়ার গুজব ছড়ায়। এর ফলে বাকি যাত্রীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
এমনকী শনিবার রাত ১১টা ৩৬-এ রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এক্স হ্যান্ডেলে দাবি করেন, নয়া দিল্লি স্টেশনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দিল্লি পুলিশ ও RPF পৌঁছেছে। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ রেলের তরফে তখনও পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর কোনও কথা বলা হয়নি। কিন্তু কেন? তাহলে কি মৃত্যু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছিল? এক্স হ্যান্ডলে রাহুল গাঁধী লিখেছেন, 'এই ঘটনায় রেলের ব্যর্থতা এবং সরকারের অসংবেদনশীলতা ফের প্রমাণিত। প্রয়াগরাজে বিপুল সংখ্যক ভক্তের আসার জন্য স্টেশনে আরও ভাল ব্যবস্থা করা উচিত ছিল।' সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদব সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, 'আহতদেরকে সর্বোচ্চ সাহায্য দেওয়া হোক। বিজেপি সরকার মৃতদের সংখ্যা গোপন করার পাপ যেন না করে।' একই সুর কুণাল ঘোষের গলাতেও।
উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী যখন সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তখন ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়ে কার্যত দায় সারলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলছেন, 'আয়োজন বড় ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, নিউদিল্লি রেল স্টেশনে, একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। আমি, সেইসব পুণ্যার্থীদের আত্মার প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।'
এদিকে নয়া দিল্লি স্টেশনে মৃত্যুর বিষয়টি প্রথম পোস্ট করেন দিল্লির উপরাজ্যপাল বিনয় কুমার সাক্সেনা। রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে এক্স করে তিনি বলেন, 'নয়া দিল্লি রেল স্টেশনে মৃত্যু এবং গুরুতর আহত হওয়ার একটা মর্মান্তিক ও দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে গিয়েছে।' কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বদলে যায় উপরাজ্যপালের বিবৃতি। নিজের পোস্ট এডিট করে ও মৃত্যুর কথা সরিয়ে দিয়ে বি কে সাক্সেনা লেখেন, 'দিল্লি স্টেশনে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে।'
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য পবন খেরা বলছেন, 'কাল রাতে যখন দিল্লির উপরাজ্যপাল ট্যুইট করে মৃত্যুর জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন, তখন তাঁকে তাঁর ট্যুইট এডিট করানো হয়েছে। মৃত্যু আটকাতে সরকারের নজর নেই। সরকার শুধু মৃত্যুর খবর ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।' এদিকে সাধারণ মানুষ যখন একটু পুণ্যের আশায় বেরিয়ে প্রাণ দিচ্ছে, তখন তাদের দিকেই আঙুল তুলছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলছেন, 'মাত্রাতিরিক্ত ভিড় হয়েছিল। এটা হওয়ার কথা ছিল না। মানুষ অযথা তাড়াহুড়ো করতে গেছে। মহাকুম্ভে যেটা হয়েছিল, সেটাও একই কারণে হয়েছিল।'
শনিবারের ঘটনার পর, মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে সাহায্য, গুরুতর আহতদের আড়াই লক্ষ টাকা এবং অল্প আহতদের এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে রেল। মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এদিন পার্কসার্কাসে প্রদেশকংগ্রেসের তরফে মোমবাতি মিছিল করা হয়।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
